Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

শিবির করে অশান্তির প্রশিক্ষণ পাহাড়ে

ক্যাম্পটি ঠিক কোথায় হয়েছে, আরও কিছু তথ্য-প্রমাণ হাতে এলে সে ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত হবে পুলিশ। তবে প্রাথমিক সন্দেহ, সোনাদার কাছাকাছি বন ও লোকালয়ের মাঝামাঝি এলাকায় ক্যাম্পটি হয়েছে।

বিক্ষোভ: দিল্লিতে মোর্চার সমর্থকেরা। ছবি: পিটিআই।

বিক্ষোভ: দিল্লিতে মোর্চার সমর্থকেরা। ছবি: পিটিআই।

কিশোর সাহা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৭ ১২:১০
Share: Save:

পাহাড়ের অশান্তি যখন সমতলেও ছড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে, সেই সময়ে তদন্তে নেমে পুলিশের সন্দেহ, বাছাই সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শুরু করেছে মোর্চা। গোয়েন্দারা মনে করছেন, কার্শিয়াঙের মহানন্দা অভয়ারণ্য লাগোয়া এলাকায় ক্যাম্প করে বাছাই করা ওই একশো সদস্যকে হাতেকলমে শেখানো পড়ানোর কাজ চলছে। আন্দোলন সমতলে ছড়ানোর পরে স্থানীয়দের সঙ্গে প্রতিটি ক্ষেত্রেই অচেনা মুখ দেখা যাচ্ছে। তাতেই পুলিশের সন্দেহ জোরালো হয়েছে।

এর মধ্যে নানা সূত্রে রাজ্য পুলিশের সর্বোচ্চ স্তরে স্পষ্ট কিছু নাম-ঠিকানাও এসেছে। বিষয়টি নিয়ে যে বিশদে তদন্ত শুরু হয়েছে, সে কথা জানিয়ে রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা জানান, আরও স্পষ্ট তথ্য-প্রমাণ পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি অবশ্য বলেন, ‘‘এ সব শুধু শুধুই বলা হচ্ছে। আমাদের সাংগঠনিক বৈঠক সব জায়গাতেই হয়। অনেক সময়ে দীর্ঘ বৈঠক চলে। তা বলে অস্ত্র প্রশিক্ষণ হয় না। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিশ্বাসী। সরকার এমন ক্যাম্প হয়েছে প্রমাণ করতে পারলে ব্যবস্থা নেবে।’’

ক্যাম্পটি ঠিক কোথায় হয়েছে, আরও কিছু তথ্য-প্রমাণ হাতে এলে সে ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত হবে পুলিশ। তবে প্রাথমিক সন্দেহ, সোনাদার কাছাকাছি বন ও লোকালয়ের মাঝামাঝি এলাকায় ক্যাম্পটি হয়েছে। বাছাইদের শেখানো হয়েছে, মিছিল চলাকালীন বাধা পেলে নিজেকে বাঁচিয়ে ঝটিকা হামলার কৌশল। কাঁদানে গ্যাস, গুলি চললে আত্মরক্ষা করার উপায় কী, শেখানো হয়েছে তা-ও। তির-ধনুকের প্রশিক্ষণ ছাড়াও ঠান্ডা পানীয়ের বোতলকে কী ভাবে দ্রুত পেট্রোল বোমা বানিয়ে ছোড়া যায়, তা-ও হাতে-কলমে দেখানো হয়েছে।

পাহাড়বাসীদের একাংশও জানাচ্ছেন এমন ক্যাম্পের কথা। ওই ক্যাম্পে খাবার, রসদ পৌঁছতে স্থানীয় গাড়িচালক, ব্যবসায়ী, দিনমজুরদের কাজে লাগানো হয়েছে। এমনকী, কয়েক জন ব্যবসায়ীকে চাঁদাও দিতে হয়েছে। কেউ কেউ আবার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের জন্য টাকাও দিচ্ছেন। শিলিগুড়ির খাপরাইল মোড় লাগোয়া এলাকা থেকে প্রথমে ভ্যানে রসদ পৌঁছছে গাড়িধুরার কাছে। সেখান থেকে রাতে গাড়িতে তা পৌঁছে যাচ্ছে নানা এলাকায়। ওই কাজের তদারকিও করছেন প্রশিক্ষিতরা।

সমতলে যে সব জায়গায় গোলমাল হচ্ছে, সেখানকার লোকজন এ কথা বলছেন। ভিডিও ফুটেজ দেখে পুলিশও নিশ্চিত যে, মিছিল-বিক্ষোভের ভিড়ে প্রায় সব জায়গাতেই চার-পাঁচ জন করে অচেনা মুখ রয়েছে। তাঁরা কেউ এলাকার বাসিন্দা নন বলেই খবর। সুকনার ক্ষেত্রে পুলিশ জানতে পেরেছে, সোনাদা থেকে চার জন এসে আন্দোলনে যোগ দেয়। বিকেল অবধি তারা সুকনাতেই ছিল। পরে ফিরে যায়। তাদেরই কাউকে কাউকে স্থানীয় বাসিন্দারা পেট্রোল বোমা ছুড়তে দেখেন। জয়গাঁয় পুলিশের সঙ্গে মোর্চার সংঘর্ষের সময়েও পেট্রোল বোমা ছুড়তে দেখা গিয়েছে এলাকায় অপেক্ষাকৃত ‘অচেনা মুখ’কে।

এমন ঘটনায় চিন্তিত মোর্চার কয়েক জন প্রবীণ সমর্থক। তাঁরা বলেছেন, শান্তিকামী ভাবমূর্তি নষ্ট করতে আড়াল থেকে কারা চক্রান্ত করছে, তা নেতাদের দেখতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE