Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

সুন্দরবনের হোটেল বিতর্কে প্রশ্নের মুখে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ

সুন্দরবনের হোটেল বৈধ না অবৈধ, সে বিতর্ক বহু দিনের। এ বার সেই বিতর্কে প্রশ্নের মুখে পড়ল রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ভূমিকাও। তাদের ভূমিকা নিয়ে শুক্রবার অসন্তোষ প্রকাশ করেছে জাতীয় পরিবেশ আদালত বা ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৯:৫২
Share: Save:

সুন্দরবনের হোটেল বৈধ না অবৈধ, সে বিতর্ক বহু দিনের। এ বার সেই বিতর্কে প্রশ্নের মুখে পড়ল রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ভূমিকাও। তাদের ভূমিকা নিয়ে শুক্রবার অসন্তোষ প্রকাশ করেছে জাতীয় পরিবেশ আদালত বা ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল। এবং পরিবেশ আদালতে চলা সুন্দরবন সংক্রান্ত মামলায় সুন্দরবনের হোটেল মালিকদেরও যোগ করতে নির্দেশ দিয়েছে বিচারপতি প্রতাপ রায় ও বিশেষজ্ঞ-সদস্য পি সি মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চ। ট্রাইব্যুনালের মন্তব্য, নিয়ম ভেঙে হোটেল করার জন্য প্রয়োজনে আর্থিক জরিমানাও করা হতে পারে।

সুন্দরবনের দূষণ সংক্রান্ত মামলায় হোটেলের তালিকা চেয়েছিল পরিবেশ আদালত। সম্প্রতি যে ১৪টি হোটেলকে সাময়িক ভাবে ব্যবসা চালানোর ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে, সে ব্যাপারেও নথি তলব করা হয়েছিল। এ দিন পর্ষদের আইনজীবী অর্পিতা চৌধুরী ডিভিশন বেঞ্চের সামনে ১৬৪টি হোটেলের নাম-সহ একটি তালিকা এবং ওই ১৪টি হোটেলকে খুলে দেওয়ার ব্যাপারে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ‘অ্যাপীলেট অথরিটি’-র নির্দেশের প্রতিলিপি পেশ করেন। তা দেখে ডিভিশন বেঞ্চ প্রশ্ন তোলে, ‘অ্যাপীলেট অথরিটি’-র রায়ের বিরুদ্ধে পর্ষদ কোনও পদক্ষেপ করল না কেন?

পরিবেশ আদালতের এই নির্দেশের পরে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সুন্দরবনের হোটেল মালিক সংগঠন। তাদের সহ-সভাপতি প্রবীর সিংহরায় বলেন, প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবেই সুন্দরবন নিয়ে এই ধরনের সমস্যা হচ্ছে। নিজেদের কথা জানানোর জন্য তাঁরা আগেই এই মামলায় যুক্ত হতে চেয়েছিলেন বলে প্রবীরবাবু জানান। তিনি বলেন, সুন্দরবনের মানুষের একটা বড় অংশের রুটিরুজি এই হোটেল এবং পর্যটন ব্যবসা আচমকা বন্ধ করে দিলে স্থানীয় অর্থনীতিতে কোপ পড়তে পারে। ‘‘রুটিরুজি হারালে সুন্দরবনে নানা ধরনের অপরাধ বাড়তে পারে,’’ মন্তব্য প্রবীরবাবুর। এ সব বক্তব্য ডিভিশন বেঞ্চের সামনেও পেশ করা হবে বলে তিনি জানান।

প্রশাসনের অন্দরে সমন্বয়ের অভাব নিয়ে সুন্দরবনের হোটেল মালিক সংগঠনের সঙ্গে একমত দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের একাংশও। তাঁরা বলছেন, হোটেলের সমস্যা যে প্রক্রিয়ায় সাময়িক ভাবে মেটানোর চেষ্টা হয়েছে, তার আইনি বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। কী রকম?

সুন্দরবনের হোটেলগুলির বৈধতা দেখার জন্য রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে নির্দেশ দিয়েছিল ডিভিশন বেঞ্চ। বৈধ পরিবেশগত ছাড়পত্র না থাকার কারণে বহু হোটেল বন্ধ করে দেয় পর্ষদ। তার বিরুদ্ধে পর্ষদের ‘অ্যাপীলেট অথরিটি’-র কাছে আর্জি জানান হোটেল মালিকেরা। প্রথমে তা খারিজ করে দেয় অথরিটি। হোটেল মালিকেরা পুনর্বিবেচনার আর্জি জানানোর পরে অবশ্য সেই ‘অ্যাপীলেট অথরিটি’ ১৪টি হোটেলকে ২০১৬ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত খুলে দেওয়ার নির্দেশ দেয়।

পর্ষদ সূত্রের খবর, শীতের মরসুমে ‘পর্যটকদের কথা ভেবেই’ সাময়িক ভাবে ১৪টি হোটেলকে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এর বদলে সব ক’টি হোটেলে পরিবেশ বিধি লাগু করে ছাড়পত্র দেওয়ার পদক্ষেপ করলে সমস্যা এতটা গড়াত না। পরিবেশ আদালতের অসন্তোষের সামনেও পড়তে হত না বলেও মনে করছেন পর্ষদের একাংশ।

সুন্দরবনের দূষণ নিয়ে এই মামলার আদালত-বান্ধব সুভাষ দত্ত ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করেছেন, গঙ্গাসাগরে বেআইনি নির্মাণ ও প্লাস্টিক দূষণ হচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকারের মুখ্যসচিবের রিপোর্ট চেয়েছে আদালত। প্লাস্টিক ঠেকানোর দায়িত্ব কোন কোন অফিসারের কাঁধে রয়েছে, তা-ও জানতে চেয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। গদখালির নির্মীয়মাণ ট্যুরিস্ট লজকে ডি-স্যালিনেশন বা লবণাক্ত জল পরিশোধনের যে প্রস্তাব সরকার দিয়েছে, সে ব্যাপারেও সুভাষবাবুর কাছ থেকে হলফনামা চেয়েছে আদালত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE