Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

মুড়ি-বাতাসা নিয়ে ত্রাণ শিবিরে গরিব ফেরিওয়ালা

আধময়লা জামাকাপড়। এক মুখ খোঁচা দাড়ি। ঢিলে প্যান্টে বেল্ট নেই, পাকানো দড়ি দিয়ে কষি বাঁধা। হাতে ধরা বছর পাঁচেকের শিশু।

পূর্বস্থলীর ত্রাণ শিবিরে দুর্গতদের খাবার দিচ্ছেন নৈহািটর ফেরিওয়ালা দিলীপবাবু ও তাঁর ছেলে। ছবি: মধুমিতা মজুমদার

পূর্বস্থলীর ত্রাণ শিবিরে দুর্গতদের খাবার দিচ্ছেন নৈহািটর ফেরিওয়ালা দিলীপবাবু ও তাঁর ছেলে। ছবি: মধুমিতা মজুমদার

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কালনা শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৫ ০৩:৩১
Share: Save:

আধময়লা জামাকাপড়। এক মুখ খোঁচা দাড়ি।

ঢিলে প্যান্টে বেল্ট নেই, পাকানো দড়ি দিয়ে কষি বাঁধা। হাতে ধরা বছর পাঁচেকের শিশু।

ক’দিন আগেই বানের জলে ভেসে গিয়েছে ঘর। কিন্তু উনি ত্রাণ চাইতে আসেননি, এসেছেন ত্রাণ দিতে। মুড়ি, বাতাসা, পুরনো জামাকাপড়। ব্যাঙের আধুলিতে যতটুকু জোগাড় হয়।

এমনিতে রোজ এ গাঁয়ে-ও গাঁয়ে বিস্কুট-পাঁপড় ফেরি করে বেড়ান মধ্য চল্লিশের দিলীপ সাহা। দিনে দেড়শো থেকে দুশো টাকা রোজগার। বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনায় নৈহাটির সাহাপুর এলাকায়। একার আয়ে সংসার চলে না। স্ত্রী দীপিকা লোকের বাড়ি রান্না আর বাসন মাজার কাজ করেন। গত শুক্রবার ফিরি করতে-করতেই দিলীপ চলে এসেছিলেন বর্ধমানের কালনায়। জগন্নাথতলার কাছাকাছি এসে তাঁর নজরে পড়ে, সার সার কালো ত্রিপলে লোক ঠাসাঠাসি। কিছু বিক্রিবাটা হবে, এই আশায় তিনি সে দিকে এগিয়ে যান। এবং গিয়ে হতবাক!

গত সপ্তাহের বৃষ্টি-বন্যায় ঘরছাড়া মানুষেরা যে সব শিবিরে উঠেছেন, ত্রিপলের সার তারই একটা। দুর্গতরা জানান, কী ভাবে সব ভেসে গিয়েছে, কী কষ্টে তাঁরা জীবনধারণ করছেন। বিক্রিবাটা গুটিয়ে ফিরে যান দিলীপ। ফিরে আসেন সোমবার ভোরের ট্রেন ধরে। সঙ্গে তিনটি বস্তায় বারো কিলো মুড়ি, চার কিলো বাতাসা আর খান পঞ্চাশেক পুরনো জামাকাপড়।

আর পাঁচ বছরের ছেলে শুভ।

অম্বিকা কালনা স্টেশনে নেমে কয়েক কিলোমিটার হেঁটে বাপ-ছেলে সোজা চলে আসেন জগন্নাথতলায়। যা এনেছিলেন, বিলি করতে থাকেন। লোকে অবাক হয়ে দেখতে থাকে। সেখান থেকে খানিক তফাতে কালনা মহকুমা আদালতের কাছে শ্যামগঞ্জ বিদ্যালয়ে মাথা গুঁজেছে কলডাঙার ২২টি পরিবার। সেখানে গিয়েও কিছু মুড়ি, বাতাসা, পোশাক দেন দিলীপ। সেখানে ঠাঁই নেওয়া কামাল হোসেন, হামিদ শেখ, হাজিরা বিবিরা বলেন, ‘‘উনি নিজেই গরিব। ভাবতেও অবাক লাগছে, নিজে না খেয়ে উনি আমাদের জন্য সাধ্য মতো ত্রাণ এনেছেন। এমন মানুষ দেখিনি!’’

ফেরার পথে দিলীপ শোনেন, কয়েক কিলোমিটার দূরে কৃষ্ণদেবপুর গজলক্ষ্মী উচ্চ বিদ্যালয়ে আরও কিছু দুর্গত মানুষ রয়েছেন। তত ক্ষণে সঙ্গে আনা সব ফুরিয়ে গিয়েছে। অগত্যা এলাকার একটি দোকান থেকে আরও কয়েক কিলো মুড়ি-বাতাসা কিনে ওই শিবিরের দিকে হাঁটা দেন বাপ-ছেলে।

বিকেলে যখন স্টেশনে ফিরছেন, দু’জনেই হা-ক্লান্ত! পেটে দানা নেই। তবু মুখে হাসি টেনে দিলীপ বলেন, ‘‘আগেও করেছি। যতটুকু পারি, ভবিষ্যতেও করে যাব।’’

সে করুন, কিন্তু ওইটুকু ছেলেকে সঙ্গে করে এনেছেন কেন?

‘‘ও জানুক, মানুষ কত কষ্ট করে বেঁচে থাকে’’— বলে ছেলের মাথায় বিলি কেটে দেন ফেরিওয়ালা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE