Advertisement
E-Paper

উড়ে গিয়েছে ছাদ, তবু ঠাঁই নেই তালিকায়

সালানপুর ব্লকেরই সালানপুর পঞ্চায়েতের বাসিন্দা। গত ছয় মাসে বহু চেষ্টা করেও টাকা জোগাড় না হওয়ায়, ছাদ মেরামত করতে পারেননি বলে জানান চন্দনা।

সুশান্ত বণিক

শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২৩ ০৯:৪৮
এমনই অবস্থা বাড়িগুলির। দেন্দুয়া ও সালানপুরে। ছবি: পাপন চৌধুরী

এমনই অবস্থা বাড়িগুলির। দেন্দুয়া ও সালানপুরে। ছবি: পাপন চৌধুরী

দৃশ্য এক: মাটির দেওয়াল ও প্লাস্টিকের ছাউনি দেওয়া পাশাপাশি দু’টি ছোট ঘর। সেখানেই তিন মেয়ে ও স্বামীকে নিয়ে সংসার সুনীতা মাহারির। পশ্চিম বর্ধমানের সালানপুর ব্লকের দেন্দুয়া পঞ্চায়েতের লাকরাজড়িয়ার বাসিন্দা তিনি। শীতের রাতে প্লাস্টিকের ছাউনি দিয়ে হু হু করে ঠান্ডা হাওয়া, গরমের সময়ে ‘লু’ এবং বর্ষায় অবিরাম বৃষ্টির জল ঢোকে ঘরে। দিনের পর দিন এ ভাবেই বেঁচে থাকার লড়াই চালাচ্ছেন সুনীতা। তিনি জানালেন, সিমেন্টের ঢালাই করা ছাদের পাকা বাড়ি তৈরির টাকা নেই।

দৃশ্য দুই: মাটির দেওয়ালের হাড়-পাঁজরা বেরিয়ে গিয়েছে। গত বর্ষায় ছাদের একাংশের বাঁশ, টালি ভেঙে পড়েছে। বাধ্য হয়ে নিজের ভিটে ছেড়ে পাশে শাশুড়ির এক কামরার ভিটেতে স্বামীকে নিয়ে উঠে গিয়েছেন চন্দনা বাদ্যকর। তিনি সালানপুর ব্লকেরই সালানপুর পঞ্চায়েতের বাসিন্দা। গত ছয় মাসে বহু চেষ্টা করেও টাকা জোগাড় না হওয়ায়, ছাদ মেরামত করতে পারেননি বলে জানান চন্দনা।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। তার পরেই জেলা জুড়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ আরও তীব্র হয়েছে। এই প্রকল্পের তালিকা তৈরি নিয়ে প্রথম থেকেই সালানপুর ব্লকে বিক্ষোভ চলছে। প্রথমে তৃণমূলের এসটি সেল, পরে সিপিএম এবং বুধবার বিজেপি বিক্ষোভ দেখায়। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, চূড়ান্ত যে তালিকা তৈরি হয়েছে, সেখানে সালানপুর ব্লকের চারটি পঞ্চায়েতের এক জনেরও নাম ওঠেনি। তাঁদের মধ্যে সুনীতা ও চন্দনা রয়েছেন। তাঁরা জানান, বিপিএল তালিকাভুক্ত হওয়ায় তাঁরা ২০১৮-য় প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পে বাড়ি পাওয়ার আবেদন করেছিলেন। কিন্তু নাম ওঠেনি। সুনীতা বলেন, “আমার স্বামী দিনমজুর। দিনে ২০০ টাকার বেশি রোজগার নেই। শুনেছিলাম সরকার থেকে বাড়ি বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তিন বার আবেদন জমা করেছি।” তাঁর অভিযোগ, “প্রতিবারই পঞ্চায়েত থেকে বলা হচ্ছে পরের বার পাওয়া যাবে। কিন্তু এ বারও হল না।” একই অভিযোগ চন্দনা বাদ্যকরের। বলেন, “ছাদ যে ভেঙে পড়বে, তা আগেই বুঝেছিলাম। বাড়ি পাওয়ার জন্য আবেদনও করেছি পঞ্চায়েতে। কিন্তু শুনলাম নাম ওঠেনি।” শুধু এই দু’টি পরিবারই নয়। দুই পঞ্চায়েত মিলিয়ে কমবেশি হাজারটি পরিবার রয়েছে, যারা বিপিএল তালিকাভুক্ত ও বাড়ির অনুদান পাওয়ার যোগ্য বলে দাবি বিরোধীদের।

তালিকাটি প্রকাশ্যে আসতেই তৃণমূল ও বিজেপি নেতৃত্ব একে অপরের কাঁধে দোষ চাপিয়ে দায় সারতে চেয়েছেন। বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পালের প্রশ্ন, “বাড়ি পাবেন কি না, তা পরের কথা। গরিব মানুষগুলির নাম তোলা হবে না কেন?” তাঁর অভিযোগ, “আসলে দুর্নীতি করে সচ্ছলদের নাম তোলার জন্য গরিব পরিবারগুলিকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।” অগ্নিমিত্রার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সালানপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ফাল্গুনী ঘাসি কর্মকার। তাঁর দাবি, “ওই পরিবারগুলির নাম তোলা হয়েছিল। রাজ্যের মাধ্যমে কেন্দ্রের কাছেও পাঠানো হয়েছে। চক্রান্ত করে কেন্দ্রের তরফে দুই পঞ্চায়েতের প্রত্যেকের নাম বাদ দেওয়া হয়ছে।” বিডিও (সালানপুর) অদিতি বসু অবশ্য জানিয়েছেন, দেন্দুয়া, সালানপুর, বাসুদেবপুর-জেমারি ও উত্তররামপুর-জিৎপুরের এক জনেরও নাম ওঠেনি। প্রশাসনিক ভাবে সেগুলি দেখা হচ্ছে।

Pradhan Mantri Awas Yojana Salanpur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy