Advertisement
১৭ মে ২০২৪

শিক্ষায় সরকারি নিয়ন্ত্রণ নয়, সরব সুগতও

মঞ্চে তাঁর পাশেই বসে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শুক্রবার সেখানেই বক্তৃতা দিতে গিয়ে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি নিয়ন্ত্রণের বিরোধিতা করলেন তৃণমূল সাংসদ তথা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন্টর গ্রুপের চেয়ারম্যান সুগত বসু।

প্রিন্সেপ ঘাটে প্রেসিডেন্সি উৎসবের মঞ্চে সুগত বসু, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অনুরাধা লোহিয়া । — নিজস্ব চিত্র

প্রিন্সেপ ঘাটে প্রেসিডেন্সি উৎসবের মঞ্চে সুগত বসু, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অনুরাধা লোহিয়া । — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৭ ০৪:১৯
Share: Save:

মঞ্চে তাঁর পাশেই বসে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শুক্রবার সেখানেই বক্তৃতা দিতে গিয়ে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি নিয়ন্ত্রণের বিরোধিতা করলেন তৃণমূল সাংসদ তথা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন্টর গ্রুপের চেয়ারম্যান সুগত বসু।

প্রেসিডেন্সির ২০০ বছর পূর্তির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সুগতবাবু বলেন, ‘‘সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে থাকুক। কিন্তু তারা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ন্ত্রণ করবে না। শিক্ষার দায়িত্ব থাকুক শিক্ষাবিদদের হাতেই।’’ বক্তব্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি জানান, শুধু এ রাজ্যে নয়। সব রাজ্যে এবং কেন্দ্রীয় স্তরেও সরকারের তরফে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির পাশে থাকাই বাঞ্ছনীয়। কিন্তু শিক্ষা সংক্রান্ত সব কিছু নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব ন্যস্ত হওয়া উচিত শিক্ষাবিদদের উপরেই।

রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বাধিকারে হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠছে বারবার। খোদ শিক্ষামন্ত্রী পার্থবাবু দফায় দফায় যুক্তি দেখিয়ে আসছেন, রাজ্য সরকার যে-হেতু বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে টাকা দেয়, তাই তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তারা হস্তক্ষেপ করতেই পারে। তৃণমূল সাংসদ সুগতবাবুর এ দিনের মন্তব্য সে-দিক দিয়ে স্পষ্টতই শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যের পরিপন্থী। তবে এ দিন নিজের দলের শিক্ষাবিদ-সাংসদের বক্তব্যের বিরুদ্ধে যাননি পার্থবাবু। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা তো পাশেই থাকি। অর্থ দিয়ে সাহায্য করি। কিন্তু পড়াশোনার ব্যাপারে কখনও হস্তক্ষেপ করি না।’’

শিক্ষার দায়িত্ব শিক্ষাবিদদের হাতে থাকা উচিত বলে সুগতবাবু যে-সওয়াল করেছেন, তা-ও সমর্থন করছেন শিক্ষামন্ত্রী। অনুষ্ঠানের পরে পার্থবাবু বলেন, ‘‘আমরাও তো শিক্ষাবিদদের উপরেই শিক্ষার ভার দিতে চাই। এ বিষয়ে বিলও আনতে চেয়েছিলাম। দলীয় সাংসদ তো আমাদের দলের সুরেই কথা বলেছেন।’’ কলেজ পরিচালন সমিতির শীর্ষ পদ থেকে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সরিয়ে শিক্ষাবিদ বসানোর সিদ্ধান্ত আগেই ঘোষণা করেছে রাজ্য। কিন্তু কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতির দাপট যে কমেনি, সাম্প্রতিক নানা ঘটনাই তার প্রমাণ। কলেজ রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হলে কী হয়, ছাত্রভোটে হিংসাত্মক ঘটনাতেই সেটা পরিষ্কার। এ বারেও মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর্ব থেকেই কলেজে কলেজে গোলমাল শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে তফাতটা হল, আগে কলেজে সংঘর্ষ বাধত প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর ছাত্র সংগঠনের মধ্যে। আর এখন লড়াইটা মূলত তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর। এই বিষয়ে পার্থবাবু এ দিন বলেন, ‘‘সংশ্লিষ্ট জেলাগুলির (যেখানে যেখানে ছাত্রভোট নিয়ে গোলমাল হয়েছে বা হচ্ছে) পুলিশ সুপারদের কাছ থেকে আমরা নামের তালিকা চেয়েছি। কোনও রকম অশান্তি বরদাস্ত করা হবে না। শিক্ষাঙ্গনকে রক্তাক্ত করতে দেব না।’’

ক্ষমতায় আসার পরে মমতাও আশ্বাস দিয়েছিলেন, শিক্ষাঙ্গনকে রাজনীতিমুক্ত করা হবে। একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বারবার ঘোষণা করেছেন, প্রেসিডেন্সিকে তিনি বিশ্ব-মানে নিয়ে যেতে চান। সেই উদ্দেশ্যেই গড়া হয়েছে মেন্টর গ্রুপ। সেই মেন্টর গ্রুপের চেয়ারম্যান সুগতবাবুর দাবি, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রেসিডেন্সির অনেক উন্নতি হয়েছে। তবে এখানেই থেমে থাকলে চলবে না। এখনও অনেক পথ যেতে হবে।’’ তাঁর বক্তব্য, প্রেসিডেন্সির পুরনো গরিমার আলোয় এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠুক। প্রেসিডেন্সির অতীত থেকে শিক্ষা নিতে হবে। কিন্তু অতীতে আটকে থাকলে চলবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sugata Bose
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE