জেলের মধ্যে সংশোধনের নানান প্রক্রিয়া চালু করার ঘটনা নতুন কিছু নয়। নতুন নয় জেলে বসে পড়াশোনা করে মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পাশ করাও। কিন্তু তাতে কি জেলের মধ্যেকার নিরক্ষতার অন্ধকার ঘুচছে। জোরদার হচ্ছে এই প্রশ্ন।
রাজ্যের কারা দফতরের তথ্যই বলছে, জেলের অন্তত ৪৩ শতাংশ বন্দি নিরক্ষর। তাই এ বার ১০০ শতাংশ বন্দিকেই সাক্ষর করে তোলার কাজে নামল রাজ্য সরকার। এই প্রকল্পে সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করছে টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস (টিসিএস)। কম্পিউটারের মাধ্যমে বন্দিদের মধ্যে সাক্ষর করে তোলার ওই প্রকল্পের পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছে ‘প্রজেক্ট সন্দীপন’।
কারা দফতর সূত্রের খবর, সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এ রাজ্যে মোট বন্দির ৪৩ শতাংশের কোনও প্রথাগত শিক্ষা নেই। সংখ্যার হিসেবে যা ৯২২৩। এমনকী ওই সব বন্দির অক্ষরজ্ঞানটুকুও নেই। সমীক্ষার এই ফল দেখে চোখ কপালে ওঠে কারা দফতরের কর্তাদের। তার পরেই জেলে সাক্ষরতা প্রকল্প চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এবং সেই সঙ্গেই সিদ্ধান্ত হয়েছে, এই প্রকল্প চালানো হবে কম্পিউটারের মাধ্যমে। প্রাথমিক ভাবে ‘প্রজেক্ট সন্দীপন’-এর প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে বন্দিদের শেখানোর জন্য কারাকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে টিসিএস। কারাকর্মীরা এ বার বন্দিদের প্রশিক্ষণ দেবেন। গত সরস্বতী পুজোর দিন কলকাতার আলিপুর জেলে এই সাক্ষরতা অভিযানের সূচনা করেন রাজ্যের কারামন্ত্রী অবনী জোয়ারদার।
কারা দফতর সূত্রের খবর, ২০০০ সালে আইনগত ভাবে বন্দিদের সংশোধন করার পদ্ধতি বলবৎ হলেও এ রাজ্যের জেলগুলিতে এই বিষয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয় আরও ছ’বছর পরে। ছবি আঁকা, নাটক, গান, আবৃত্তি-সহ নানান কর্মসূচির মাধ্যমে গরাদের ভিতরেই বন্দিদের মানসিক পরিবর্তন আনার কাজ শুরু হয় ২০০৬-’০৭ আর্থিক বছরে। সেই সূত্রে অনেক বন্দিই পরে জেল থেকে ছা়ড়া পেয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গিয়েছেন। সেই প্রক্রিয়া এখনও চলছে। কিন্তু সংশোধন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গেলেও সাক্ষর না-হলে আখেরে বন্দিদের কোনও লাভই হবে না বলে মনে করছেন কারা দফতরের শীর্ষ কর্তারা। তাই প্রজেক্ট সন্দীপনকে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছেন তাঁরা। কারাকর্তারা জানাচ্ছেন, রাজ্যের সব বন্দিকে লেখাপড়া শেখানো হবে কম্পিউটারের বিশেষ এক ধরনের সফটওয়্যারের মাধ্যমে। এই বিষয়ে সাহায্য করছে টিসিএস।
টিসিএসের পক্ষ থেকে সাগর দত্ত জানান, কেন্দ্রীয় সাক্ষরতা মিশনের আওতায় তাঁরা একটি সফটওয়্যার তৈরি করেছেন। তার সাহায্যে কম্পিউাটরের মাধ্যমে অক্ষর চেনা থেকে শুরু করে বইয়ের পাঠ নিতে পারবেন বন্দিরা। এতে পাঠ্যক্রম তৈরি হয়েছে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। পড়াশোনা শেষ করার পরে পরীক্ষার মাধ্যমে আবাসিকেরা কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের একটি সার্টিফিকেট পাবেন। তার পরেও কোনও বন্দি পড়াশোনা করতে চাইলে মুক্ত বিদ্যালয়ের মাধ্যমে শিক্ষাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। কারা দফতরের খবর, ইতিমধ্যেই রাজ্যের কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের ৯০ জন অফিসার-কর্মীকে চার দফায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ওই ৯০ জন কর্মী চারটি ডিভিশনে ভাগ করে বন্দিদের সাক্ষরতার প্রশিক্ষণ দেবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy