Advertisement
E-Paper

বিবর্ণই রইল বাড়ি, বাবলু চির-ছুটিতে

বৃহস্পতিবার পুলওয়ামায় জঙ্গি হানার নিহত সিআরপিএফ জওয়ানদের মধ্যে রয়েছেন পিয়ালের বাবা, বাউড়িয়ার চককাশী রাজবংশীপাড়ার বাসিন্দা বাবলু সাঁতরা।

নুরুল আবসার

শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:৪৯
শোকার্ত: কান্নায় ভেঙে পড়েছেন বাবলুর মা। নিজস্ব

শোকার্ত: কান্নায় ভেঙে পড়েছেন বাবলুর মা। নিজস্ব

সকাল থেকেই ভিড় বাড়ছিল বাড়িটায়।

আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-পড়শি, নেতা-মন্ত্রীদের ভিড়। কিছুই বুঝতে পারছিল না ছোট্ট পিয়াল।

কেন এত লোকজন? কেনই বা তাঁর বাবার ছবি হঠাৎ চেয়ারে নামিয়ে মালা দেওয়া হল? কেনই বা মা-ঠাকুমা কাঁদছে? কারও কাছ থেকে উত্তর পাচ্ছিল না ছ’বছরের মেয়েটা। সবাই তাকে শুধু কোলে তুলে নিচ্ছিলেন।

বৃহস্পতিবার পুলওয়ামায় জঙ্গি হানার নিহত সিআরপিএফ জওয়ানদের মধ্যে রয়েছেন পিয়ালের বাবা, বাউড়িয়ার চককাশী রাজবংশীপাড়ার বাসিন্দা বাবলু সাঁতরা। টিভিতে ওই জঙ্গি-হানার খবর জানার পর থেকেই উদ্বেগ বাড়ছিল বাবলুর বৃদ্ধা মা বনমালা দেবী এবং স্ত্রী মিতার। তাঁরা জানতেন, বাবলুরও জম্মু থেকে শ্রীনগর যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই হামলার পরে আর তাঁরা ফোনে বাবলুর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না।

বর্তমান: বাবলুর বাড়ি ঢেকে দেওয়া হয়েছে জাতীয় পতাকায়। ছবি: সুব্রত জানা

ওই রাত থেকেই বাবলুর বাড়িতে ভিড় বাড়ছিল। শুক্রবার আরও বাড়ে। ভোর পাঁচটা নাগাদ সিআরপিএফ থেকে ফোন পান মিতা। তাঁকে জানানো হয়, পুলওয়ামায় জঙ্গি হানায় তাঁর স্বামী, সিআরপিএফ-এর ৫৪ নম্বর ব্যাটেলিয়নের জওয়ান বাবলুও নিহত হয়েছেন। জ্ঞান হারান মিতা। তারপরেই কারা যেন একটা চেয়ারে সাদা কাপড় বিছিয়ে বাবার ছবি রেখে তাতে মালা পরিয়ে দেয়! অবাক চোখে দেখছিল পিয়াল।

মিতা এ দিন কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না। পাশেই থাকেন বাবলুর ভাই কল্যাণ। তাঁর ঘর তৈরিতে বাবলু টাকা দিয়েছিলেন। কল্যাণ বলেন, ‘‘দাদা সাধ্যমতো আমাদের অভাব মেটাত। সদ্য মেজো জামাইবাবুকে হারিয়েছি। আবার মৃত্যুসংবাদ। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ চাই।’’

ওই পরিবার সূত্রের খবর, বাবলুরা চার বোন, দুই ভাই। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবলু বাবাকে হারান। তিনি ল্যাডলো চটকলের শ্রমিক ছিলেন। তিনি বড় দুই মেয়ের বিয়ে দিয়ে যেতে পেরেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পরে মাছ বিক্রি করে সংসার চালিয়েছেন বাবলুর ঠাকুমা। পড়ার ফাঁকে বাবলুও ঠাকুমাকে মাছ বিক্রিতে সাহায্য করতেন। ছেলেবেলা থেকেই তিনি ভলিবল খেলায় তুখোড় ছিলেন। সাঁপুইপাড়া হাইস্কুল থেকে ২০০০ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হন। পরে সিআরপিএফ-এ হাবিলদার পদে চাকরি পান। তিনিই দুই বোনের বিয়ে দেন। বছর আটেক আগে নিজে বিয়ে করেন। মেয়ে ল্যাডলো অ্যাকাডেমিতে প্রথম শ্রেণির ছাত্রী। স্ত্রী ওই স্কুলেরই শিক্ষিকা।

অতীত: তখন সুখের সময়। ছবি পারিবারিক অ্যালবাম থেকে

এ দিন দিল্লি থেকে উলুবেড়িয়া দক্ষিণের বিধায়ক পুলক রায়ের মোবাইলের মাধ্যমে বনমালাদেবীর সঙ্গে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুলকবাবু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নিহত জওয়ানের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।’’ বাড়িতে আসেন আরও চার মন্ত্রী— ফিরহাদ হাকিম, অরূপ রায়, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং লক্ষ্মীরতন শুক্লা। সিআরফিএফের কলকাতা অফিস হাবিলদার তপন বারিক ওই বাড়িতে এসে জানান, শ্রীনগর থেকে দিল্লি হয়ে বাবলুর দেহ ফিরলে গান স্যালুট দেওয়া হবে।

সাধারণত বছরে একবার করে বাড়ি ফিরতেন বাবলু। এক মাস থাকতেন। পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে মেতে উঠতেন ভলিবল খেলায়। আগামী ২ মার্চ ছুটিতে এসে বাড়ি রং করানোর কথা ছিল তাঁর। তার আগেই বিবর্ণ হয়ে গেল পুরো পরিবার।

Pulwama Attack পুলওয়ামা পুলওয়ামা হামলা Death CRPF Jawan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy