আশ্রয়: ঝাড়বাগদা গ্রামে। নিজস্ব চিত্র
অবিরাম বৃষ্টি আর শিলাবর্ষণ থেকে বাঁচাতে সদ্যোজাত দুই সন্তানের মাথায় ডানা মেলে বসেছিল বাবা-মা। তবু প্রবল বর্ষণে ভিজেছে সন্তানদের শরীর। শুক্রবার মেঘ সরে সূর্য উঁকি দিতেই ঠান্ডায় কাঁপতে থাকা দুই ছানাকে ছাদের মাঝখানে একফালি রোদে এনে ফেলেছিল তাদের বাবা-মা। শরীর কিছুটা উষ্ণতা শোষণ করার পর বাবা-মা সন্তানদের নিয়ে যায় ছাদের কোণে, নিজেদের বাসায়।
মানবাজারে ঝাড়বাগদা গ্রামে সুধাংশু মোহান্তির বাড়ির ছাদে বড় হচ্ছে দু’টি পেঁচা। ছাদের কোণে সংসার পেতেছে পেঁচা পরিবারটি। ছানাদের জন্য খাবার সংগ্রহ করে বাবা। কখনও ছাদের পাশের শিমুলগাছের ডালে বসে, আবার কখনও ছাদের কার্নিসে বসে সন্তানদের উপর সতর্ক দৃষ্টি রাখে তাদের মা।
সপ্তাহ তিনেক আগের কথা। শীতের সন্ধ্যার ছাদের দরজা বন্ধ করতে গিয়ে সুধাংশুবাবু দেখেছিলেন, পাঁচিলে বসে রয়েছে একটি পেঁচা। কাছে যাওয়া মাত্রই সুধাংশুবাবুর দিকে তেড়ে এসেছিল সে। তখনই তিনি দেখেন, ছাদের কোণে গুটিসুটি মেরে রয়েছে দুই সদ্যোজাত পেঁচা। বুঝতে পারেন সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কিত তাদের মা। এরপর সুধাংশুবাবু লক্ষ করেন, ছাদের অদূরে শিমুলগাছে বসে রয়েছে আর একটি পেঁচা। বুঝতে অসুবিধা হয় না, সন্তানদের পাহারা দিচ্ছে তাদের বাবা-মা।
সুধাংশুবাবুর পরিবারের দুই খুদে সদস্য আকাশ এবং সাগর ও পাড়ার দুই কিশোরী মল্লিকা এবং অঙ্কিতা এখন পেঁচার ছানাদের পরিচর্চায় ব্যস্ত। আকাশের কথায়, ‘‘প্রথমে আমাদের দেখে তেড়ে আসত মা-পেঁচাটি। পরে বুঝতে পারে আমরা ওর সন্তানদের ক্ষতি করব না। তারপর থেকে আমাদের দেখে ওরা ভয় পায় না।’’
ছাদের কোণে একটি চটের বস্তা রেখেছে আকাশ। তার উপর সংসার পেতেছে পেঁচার পরিবার। রোজই সেই বস্তার চারপাশে পায়রার পালক পড়ে থাকতে দেখা যায়। সুধাংশুবাবু বলেন, ‘‘মনে হয় ওরা পায়রা মেরে বাসায় নিয়ে আসে।’’ সদ্যোজাত দুই পেঁচার জন্য কুঁচো মাছ সংগ্রহ করে আনে আকাশ এবং তার সঙ্গীরা। তাদের বাসার সামনে সেগুলি ছড়িয়ে রাখে তারা।
গত তিন দিন পুরুলিয়া-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে টানা বৃষ্টি হয়েছে। প্রবল হাওয়ার সঙ্গে হয়েছে শিলাবৃষ্টিও। এই দুর্যোগ থেকে সন্তানদের বাঁচিয়েছে বাবা এবং মা পেঁচা। কী ভাবে? সুধাংশু বললেন, ‘‘বৃষ্টির সময় ওরা সন্তানদের মাথায় ডানা মেলে দিত। তাতে বৃষ্টি কিছুটা আটকাত। ওদের যে ঘরে নিয়ে আসব, তার উপায় ছিল না।’’ এ দিন সকালে ছাদের মাঝে রোদ পোহাতে দেখা গিয়েছে পেঁচার পরিবারকে। দুপুরে আবার তারা সরে গিয়েছিল ছাদের কোণে।
ঠিক কোন সময় ছাদে এসে আশ্রয় নিয়েছিল মা-পেঁচাটি, তা বলতে পারছেন না সুধাংশুবাবু। তবে সপ্তাহ তিনেক আগে প্রথম বার পেঁচার সংসার তাঁর নজরে আসে। বন দফতরের মানবাজার-২ ব্লকের সদ্যপ্রাক্তন রেঞ্জার হীরক সিংহ বলেন, ‘‘সাধারণত দুই থেকে আড়াই মাস বয়স হলে পেঁচারা উড়তে শেখে।’’
অর্থাৎ মোহান্তি পরিবারের বাড়ির ছাদে পেঁচার পরিবারের স্থায়িত্ব মেরেকেটে দেড় মাসের একটু বেশি। শুনে মন খারাপ আকাশ-সাগরদের। ‘‘আমরা ওদের জল দিই। মাছ দিই। মায়া পড়ে গিয়েছে ওদের উপর,’’ বলল সাগর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy