Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Cyber fraud

‘হ্যালো, জিন বলছি’! গুপ্তধনের লোভ দেখিয়ে প্রতারণায় ধৃত তিন, বাঁকুড়াকাণ্ডে বাংলাদেশ-যোগ

গত অক্টোবর মাসে বাঁকুড়ার সাইবার ক্রাইম থানায় প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন ওন্দা ব্লকের শ্যামনগর গ্রামের বাসিন্দা আমিনুদ্দিন। পুলিশের কাছে তিনি জানিয়েছিলেন, তিনি নিজে ধর্মপ্রাণ মানুষ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ২১:৫৬
Share: Save:

নিশুত রাত। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠেছিল। ঘুমের চোখে ফোনটা তুলেছিলেন আমিনুদ্দিন মণ্ডল। ‘হ্যালো’ বলতেই ও পার থেকে ভেসে এল কণ্ঠস্বর— ‘আমি জিন বলছি’! শুনেই বাক্শক্তি হারিয়েছিলেন যুবক। ও পার থেকে আবার কণ্ঠস্বর ভেসে এল— ‘আল্লাহ সাত ঘড়া গুপ্তধন তোমার বাড়িতে পৌঁছে দিতে বলেছেন।’ এক বার নয়, রাতের পর রাত ফোন এসেছিল ‘জিনের’। ভাবও ভালই জমেছিল দু’জনে। কারণ, টানাটানির সংসারে আমিনুদ্দিনের সত্যিই গুপ্তধনের প্রয়োজন ছিল! পরে এই বাসনারই খেসারত গুনতে হয়েছে তাঁকে। খোয়া গিয়েছে তিন লক্ষ টাকা। বাঁকুড়ার ওন্দায় এই প্রতারণায় ঘটনায় অবশেষে পুলিশের জালে ধরা পড়লেন তিন জন। তদন্তে বাংলাদেশ-যোগও উঠে এসেছে বলে খবর পুলিশ সূত্রে।

গত অক্টোবর মাসে বাঁকুড়ার সাইবার ক্রাইম থানায় প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন ওন্দা ব্লকের শ্যামনগর গ্রামের বাসিন্দা আমিনুদ্দিন। পুলিশের কাছে তিনি জানিয়েছিলেন, তিনি নিজে ধর্মপ্রাণ মানুষ। প্রতারকেরা সেই ধর্মীয় বিষয় নিয়ে কথা বলেই তাঁর বিশ্বাস অর্জন করেছিলেন। তাঁকে জানিয়েছিলেন, আমিনুদ্দিনের বাড়িতে বাস্তুদোষ থাকায় গুপ্তধন পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে না। বাস্তুদোষ কাটাতেই দফায় দফায় অনলাইনে সব মিলিয়ে ২ লক্ষ ৮০ টাকা দিয়েছিলেন। তার পরেই বুঝতে পারেন, প্রতারণার স্বীকার হয়েছেন তিনি। পুলিশ সূত্রে খবর, আমিনুদ্দিন যে চার অ্যাকাউন্টে অনলাইনে টাকা পাঠিয়েছিলেন, সেই অ্যাকাউন্টগুলির সূত্র ধরেই তদন্ত শুরু করে পুলিশ। দেখা যায়, অ্যাকাউন্টগুলি দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার। এর পরেই সেখানে বাঁকুড়া জেলা পুলিশের একটি তদন্তকারী দল যায়। ওই চারটি অ্যাকাউন্টের মধ্যে তিনটি অ্যাকাউন্টের মালিককে গ্রেফতার করা হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের মধ্যে তন্ময় সরকার ও দীপ্ত সরকারের বাড়ি দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কুমারগঞ্জ থানার মহীপুর গ্রামে। আর এক ধৃত প্রসেনজিৎ মাহাতোর বাড়ি দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হিলি থানার লাগমা গ্রামে। ভৌগোলিক ভাবে মহীপুর ও লাগমা দু’টি গ্রামই ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে হাঁটা দূরত্বে। পুলিশ সূত্রে খবর, জিজ্ঞাসাবাদের মুখে তিন জনেরই সাফাই, তাঁরা এ ব্যাপারে কিছু জানতেন না! যদিও তদন্তকারীরা তা বিশ্বাস করেননি। তাঁদের একাংশের ধারণা, বখরা পাওয়ার লোভে পড়েই তিন জন নিজেদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ‘ভাড়া’ দিয়েছিল প্রতারণা চক্রের কিংপিনকে। সেই ব্যক্তি ধৃত তিন জনের পরিচিত বলেই প্রাথমিক ভাবে মনে করছে পুলিশ।

তদন্তকারীদের আরও অনুমান, কিংপিন এ রাজ্যেরই বাসিন্দা। প্রতারণার ঘটনার তদন্তে পুলিশ সক্রিয় হতেই তিনি সীমান্ত টপকে গা ঢাকা দিয়েছেন বাংলাদেশে। তদন্তকারীদের অন্য একটি অংশ মনে করছেন, কিংপিন আসলে বাংলাদেশের বাসিন্দা । এ রাজ্যে এসে সীমানাবর্তী এলাকার যুবকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ভাড়া করে প্রতারণা ঘটিয়ে ফের বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়েছেন। ধৃত তিন জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সেই কিংপিনেরই হদিস পাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে খবর পুলিশ সূত্রে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cyber fraud
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE