Advertisement
E-Paper

৫০ নির্মাণ অবৈধ বলে চিহ্নিত করল প্রশাসন, নদী দখল করে উঠছে বাড়ি

এ মরা গাঙে আবার প্রাণ ফিরবে, এমন স্বপ্ন বাঁকুড়ার মানুষ আর দেখেন না বললেই চলে। হাত গুটিয়ে ছিল জেলা প্রশাসনও। ফলে মরা নদী গন্ধেশ্বরী ফি বছরই তিল তিল করে আরও মরছিল।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৬ ০৮:৫৩
গন্ধেস্বরী নদীর বুকে একে একে উঠছে বাড়ি, দোকান। বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রশাসন জাগল দেরিতে। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।

গন্ধেস্বরী নদীর বুকে একে একে উঠছে বাড়ি, দোকান। বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রশাসন জাগল দেরিতে। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।

এ মরা গাঙে আবার প্রাণ ফিরবে, এমন স্বপ্ন বাঁকুড়ার মানুষ আর দেখেন না বললেই চলে। হাত গুটিয়ে ছিল জেলা প্রশাসনও। ফলে মরা নদী গন্ধেশ্বরী ফি বছরই তিল তিল করে আরও মরছিল।

সেই মরা নদীর বুকেই গড়ে ওঠা এক অবৈধ নির্মাণকে ঘিরে তৈরি হওয়া বিতর্ক চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল, গন্ধেশ্বরী কী ভাবে চুপিসাড়ে ‘দখল’ হয় যাচ্ছে! যার জেরে অবশেষে নড়েচড়ে বসল জেলা প্রশাসন। বছরের পর বছর ধরে নদীবক্ষে গড়ে ওঠা অবৈধ নির্মাণ যেমন ভেঙে ফেলাতে উদ্যোগী হল প্রশাসন, তেমনই নদীটিকে বাঁচাতে নতুন পরিকল্পনাও নেওয়া হল।

মাস খানেক আগেই বাঁকুড়া পুরসভার রামানন্দ পাম্পিং স্টেশনের সামনে গন্ধেশ্বরী নদীর বুকে একটি বাড়ির বেআইনি নির্মাণকাজ প্রকাশ্যে আসে। যা নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়। সেচ দফতরের আধিকারিকেরা সরেজমিন ওই নির্মাণকাজ দেখে সেটিকে অবৈধ বলে ঘোষণা করেন। এবং ওই নির্মাণকাজের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে বাঁকুড়া সদর থানায় অভিযোগও দায়ের করেন। পুলিশ অবশ্য কারও হদিস খুঁজে পায়নি। ইতিমধ্যে গন্ধেশ্বরীতে গড়ে ওঠা অবৈধ নির্মাণ ভাঙতে মহকুমাশাসকের হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠি দেয় সেচ দফতর। সেই চিঠি পেয়েই সম্প্রতি ঘটনাস্থল দেখতে গিয়েছিলেন মহকুমাশাসক অসীমকুমার বালা। পরিদর্শনে গিয়ে শুধু নির্মীয়মাণ ওই বাড়িটিই নয়, নদীর জায়গা দখল করে একাধিক অবৈধ নির্মাণ তাঁর চোখে পড়ে। নদীকে দখল মুক্ত করে তার গতিপথ ঠিক রাখতে হলে উচ্ছেদ অভিযানে নামা ছাড়া গতি নেই বলে ঘটনাস্থলেই টের পেয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তাই পুরসভার প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে আরও একবার যৌথ পরিদর্শনে গন্ধেশ্বরীতে যান মহকুমাশাসক।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরসভা, জেলা প্রশাসন এবং ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর প্রাথমিক ভাবে গন্ধেশ্বরী নদীর গায়ে গড়ে ওঠা ৫০টিরও বেশি দোকান ও বাড়ির নির্মাণকাজকে অবৈধ বলে চিহ্নিত করেছে। আগামী মঙ্গলবারই ওই সব নির্মাণ কাজ ভেঙে ফেলতে অভিযানে নামবে জেলা প্রশাসন। এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিও জারি করে ফেলা হয়েছে প্রশাসনের তরফে। মহকুমাশাসক (বাঁকুড়া সদর) বলেন, “নদী বক্ষে অবৈধ ভাবে বহু দোকান, বাড়ি ও রাস্তা গড়া হয়েছে। এতে নদীর গতিপথ পালটে গিয়েছে। আমরা নদীতে অবৈধ নির্মাণ ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’ বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত বলেন, “নদীর উপর অবৈধ নির্মাণ কাজ ভাঙতে জেলা প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবে পুরসভা। এ ব্যাপারে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগও রাখছি।’’

শহরের গা ঘেঁষে বয়ে চলা গন্ধেশ্বরী নদীটির জমি চুরি করে অবৈধ নির্মাণ শুরু হয়েছে বহু বছর আগে থেকেই। প্রশাসনের উদাসীনতা এবং রাজনৈতিক দলগুলির সদিচ্ছার অভাবে সেই অবৈধ নির্মাণ বড় আকার নিয়েছে বলে অভিযোগ শহরবাসীর একাংশের। একশ্রেণির জমির দালাল চক্র নদীর জমি প্লট হিসেবে বেচে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠছে অনেক দিন ধরে। প্রশাসনের কাছে খবর আছে, নদীর পারে দোকান গড়ে বসা কিছু ব্যবসায়ীও নদীর জায়গা দখল করে নির্মাণ কাজ চালাচ্ছেন নির্বিবাদে।

অথচ শহরের প্রবীণ বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, কয়েক দশক আগেও এই নদী বইত দু’কূল ছাপিয়ে। নদীও ছিল অনেক চওড়া। বর্তমানে নদীর জমি বেদখল হয়ে গিয়ে তা একটি শুকনো খালে পরিণত হয়েছে। পুরশহরের নালার নোংরা জল এই নদীতেই ফেলা হয়। নদীর গায়ে এখন জঞ্জালের স্তূপ। বাঁকুড়ার প্রয়াত পরিবেশ কর্মী দেবী পালিত গন্ধেশ্বরী বাঁচাতে কমিটি গড়ে নানা আন্দোলনে নেমেছিলেন প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণের লক্ষ্যে। তাতেও বিশেষ লাভ হয়নি। বাঁকুড়ার প্রয়াত বিধায়ক কাশীনাথ মিশ্র গন্ধেশ্বরী-দ্বারকেশ্বর প্রকল্প গড়ে নদীটিকে পুনরুজ্জীবিত করা এবং সেচের ব্যবস্থা করার দাবিতে বাম আমল থেকেই সচেষ্ট হয়েছিলেন। রাজ্যে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর ওই প্রকল্পকে বাস্তবায়িত করতে সচেষ্টও হয়েছিল। নানা জটিলতায় আটকে বর্তমানে গন্ধেশ্বরী-দ্বারকেশ্বর প্রকল্পটি ঠান্ডা ঘরে চলে গিয়েছে।

এই অবস্থায় একশো দিন কাজের প্রকল্পে নতুন করে নদীটিকে পুনরুজ্জীবিত করতে সচেষ্ট হয়েছে প্রশাসন। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, মাস খানেক আগেই একশো দিন প্রকল্পের এ রাজ্যের কমিশনার দিব্যেন্দু সরকার বাঁকুড়ায় এসে গন্ধেশ্বরী নদীর অবস্থা ঘুরে দেখেন। জেলা প্রশাসনকে তিনি এই কেন্দ্রীয় প্রকল্পের আওতায় গন্ধেশ্বরীর নাব্যতা বাড়াতে ও চেকড্যাম গড়তে প্রকল্প নিতে বলেছেন। বাঁকুড়ার জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, “প্রকল্পটি এখন প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। নদীর কোথায় কোথায় খননকাজ হবে, কোথায় চেকড্যাম হবে, তা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা রাজ্যকে জানাব।’’ জেলার শালতোড়া, ছাতনা, বাঁকুড়া ২ এবং ওন্দা ব্লকের উপর দিয়ে গন্ধেশ্বরী নদী বয়ে গিয়েছে। এই চারটি ব্লককে এক সঙ্গে নিয়ে গোটা প্রকল্পের কাজের খসড়া তৈরি করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক। পাশাপাশি বাঁকুড়া পুরসভার তরফেও গন্ধেশ্বরীর সৌন্দর্যায়নে একাধিক প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। পুরপ্রধান মহাপ্রসাদবাবু জানান, নদীর পাশে একটি পার্ক তৈরির জন্য ইতিমধ্যেই পুর দফতরে টাকা চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। পুর এলাকায় এই নদী সংস্কারের কাজেও পুরসভা নামার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে।

River bed Illegal construction
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy