শিক্ষাদান: বুদপুরে। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত
‘আম, আমরা, মা, মামা...’— টেবিলে রাখা ল্যাপটপের স্ক্রিনে ভেসে উঠছে এমনই নানা শব্দ। সমস্বরে সে সব উচ্চারণ করছেন প্রৌঢ়া থেকে সদ্য সাবালিকারা।
খয়রাশোলের বুদপুর গ্রামে সফিয়া বিবিদের বাড়ির বারান্দা বা মাঠপাড়ায় এটাই এখন পরিচিত ছবি। সরকারি উদ্যোগে নয়, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা টেগোর সোসাইটির রাজনগর খয়রাশোল শাখার মাধ্যমে এই সুযোগ গ্রামের মহিলাদের কাছে এনে দিয়েছে টাটা কনসালটেন্সি। জাতীয় সাক্ষরতা অভিযানের ধাঁচে বইয়ের পাশাপাশি, শিক্ষার্থীদের উৎসাহ বাড়াতে সফ্টওয়ারে সেগুলোরই ডিজিটাল পেজ তৈরি করে দিয়েছে সংস্থা। তিন মাসের কোর্স। উদ্দেশ্য ১৫ ঊর্ধ্ব মহিলাদের সাক্ষর করা।
বুদপুরে উপস্থিত মহিলাদের অধিকাংশই স্বনির্ভর দলের সদস্যা। প্রৌঢ়া কামেলা বিবি, মধ্য ত্রিশের মানোয়ারা বিবি, কিংবা সদ্য সাবালিকা রুকসানারা বলছেন, ‘‘আমরা কেউই নিরক্ষর থাকতে চাইনি। কিন্তু পরিবেশ, পরিস্থিতির চাপে লেখাপড়ার সুযোগ হয়নি।’’
স্বনির্ভর দলের মহিলাদের লেখাপড়া শেখার অন্য কারণও রয়েছে। হাসিনা বিবি, দোয়াদান বিবি, চম্পা বিবি, আজিফা বিবিরা বলছেন, ‘‘ঋণ শোধ করতে ব্যাঙ্কের উপরে নির্ভর ছিলাম। এখন ব্যাঙ্ক বলছে টিপছাপ চলবে না। সই কর। একটি শব্দও পড়তে পারতাম না। অসম্মানিত বোধ করতাম।’’
সাক্ষরতা অভিযানে ১৫ ঊর্ধ্ব মহিলাদের পড়ানোর জন্য সরকারি প্রকল্প রয়েছে। প্রশাসনের হিসেবেই প্রতি বছর লাখখানেক নতুন করে সাক্ষর হচ্ছেন। ৮ সেপ্টেম্বর ঘটা করে সাক্ষরতা দিবস পালিত হচ্ছে। বলা হচ্ছে অর্থনৈতিক সাক্ষরতার কথাও। বুদপুরের ওই মহিলাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তাঁরা এ সব জানতেন না। মানয়ারারা বলছেন, ‘‘কই, গত দশ বছরে কেউ তো আমাদের কিছু বলেনি। জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা আড়ালে মানছেন, বাস্তব এবং তথ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে এটাই তার প্রমাণ।
জাতীয় গ্রামীণ জীবিকা মিশন (এনআরএলএম) রাজ্যে আনন্দধারা নামে পরিচিত। এ বার দেশের সেরা সঙ্ঘের সম্মান পেয়েছে দুবরাজপুরের আত্মসম্মান সঙ্ঘ। তার নেত্রী মর্জিনা বিবি মনে করেন, “আনন্দধারা যে সব ট্রেনিং দিচ্ছে সেগুলি বুঝতে, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য হিসাবে ঋণ নেওয়া ও পরিশোধ করা এমনকি রেজলিউশন বুঝতে প্রতি সদস্যের লেখাপড়া জানা জরুরি। গোষ্ঠীগুলিকে স্বনির্ভর হতেও সাহায্য করে পড়াশোনা।’’
বাণিজ্যিক ওই সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে বীরভূমে টেগোর সোসাইটির মাধ্যমে মোট পাঁচটি ব্লকে কাজ চলছে। শুধু রাজনগর নয়, খয়রাশোল এবং লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের মোট ১৯টি গ্রামে এমন সাক্ষরতা অভিযান চলছে। তিন মাস পর পর একটি করে গ্রাম বেছে চলছে সাক্ষরতার পাঠ। ‘‘এই ক’দিনে সাধারণ লেখা পড়তে, লিখতে শেখানোটাই চ্যালেঞ্জ,’’ বলছেন সংস্থার এক কর্তা সাগর দত্ত।
বুদপুরে এই কাজই করছেন গ্রামের তরুণী জবা খাতুন। বয়ষ্ক মহিলাদের শেখার ইচ্ছে মুগ্ধ করেছে তাঁকে। যাঁদের জন্য এত আয়োজন তাঁরা বলছেন, ‘‘তিন মাস ক্লাস করে মন ভরে নাকি। আরও কিছু দিন চললে ভালই হত।’’
এতেই সাফল্য দেখছেন উদ্যোক্তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy