Advertisement
E-Paper

নোট সরিয়ে কার্ডেই মাত, বলছেন ব্যবসায়ীরা

ব্যাঙ্কে টাকা তোলা বেশ ঝক্কির। পকেটে যেটুকু খুচরো রয়েছে তাও যতদুর পারা যায়, বাঁচিয়ে রাখতে চাইছেন। তবে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা তো করতেই হবে। এই পরিস্থিতিতে পকেটের খুচরো টাকা বাঁচানোর একমাত্র পথ হয়ে দাঁড়িয়েছে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৬ ০২:১৬
বড় নোট বাতিল হতেই কার্ডে বেচাকেনা চলে এমন দোকানে বিক্রিবাটা বেড়ে গিয়েছে।—নিজস্ব চিত্র।

বড় নোট বাতিল হতেই কার্ডে বেচাকেনা চলে এমন দোকানে বিক্রিবাটা বেড়ে গিয়েছে।—নিজস্ব চিত্র।

ব্যাঙ্কে টাকা তোলা বেশ ঝক্কির। পকেটে যেটুকু খুচরো রয়েছে তাও যতদুর পারা যায়, বাঁচিয়ে রাখতে চাইছেন। তবে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা তো করতেই হবে। এই পরিস্থিতিতে পকেটের খুচরো টাকা বাঁচানোর একমাত্র পথ হয়ে দাঁড়িয়েছে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড। তাই মুশকিল আসানে মানিব্যাগ থেকে কার্ড বার করে সোয়াইপ করছেন সাধারণ মানুষ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের জেরে এক ধাক্কায় বাঁকুড়া জেলার বহু মানুষই রপ্ত করে ফেলেছেন কার্ডে জিনিসপত্র কেনার অভ্যাস।

কার্ডে বিল মেটানোর মেশিন সদ্য চালু করেছে বাঁকুড়ার সমবায় বিপণি। ঘটনাচক্রে ওই মেশিনে বেচাকেনা শুরু হওয়ায় কয়েক দিনের মাথাতেই ১০০০ ও ৫০০ নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র। তবে এই বিপণি বাতিল হওয়া নোটেও মালপত্র বিক্রি করছে। সে ক্ষেত্রে নোটের সমপরিমাণ মূল্যের মালপত্র কেনার শর্ত বেঁধে দেওয়া হয়েছে। অচল নোট চালিয়ে নেওয়ার সুযোগ কাজে লাগাতে এই বিপণিতে ক্রেতার ঢল নেমেছে।

অনেকে আবার পকেটের খুচরো টাকা খরচ না করে ডেবিট কার্ডে কেনাকাটা করছেন। সমবায় বিপণির ভাইস চেয়ারম্যান বিশ্বনাথ চট্টোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, ক্রেতাদের ৭০ শতাংশই আসছেন বাতিল হওয়া নোট চালিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে। বাকি ক্রেতাদের বেশিরভাগই কার্ডে কেনাকাটা করছেন। বস্তুত, বাঁকুড়া শহরে এই বিপণি থেকেই রান্নার গুঁড়ো মশলা থেকে চাল, আটা যেমন মেলে, তেমনই আবার প্রসাধনী জিনিসপত্র থেকে ঘর সাফাইয়ের ঝাড়ুও পাওয়া যায়।

বাঁকুড়ার কাটজুড়িডাঙার বাসিন্দা শিক্ষক শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘ব্যাঙ্কে গিয়ে টাকা তুলতে পারব এমন নিশ্চয়তা নেই। ফলে পকেটে যেটুকু খুচরো টাকা রয়েছে তা বাঁচিয়ে চলার চেষ্টা করছি। সে ক্ষেত্রে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যদি কার্ডে কিনতে পারি, তার থেকে বড় সুবিধা আর কিছু নেই।’’ বাঁকুড়ার হাজরাগলির বধূ রিয়া কাঞ্জিলাল আবার এতদিন ডেবিট কার্ড শুধু এটিএম থেকে টাকা তোলাতেই ব্যবহার করতেন। তাঁর কথায়, ‘‘কার্ডে কেনাকাটা করতে ভরসা হতো না। কিন্তু এখন খুচরো বাঁচাতে দোকানে ঢুকে কার্ডে কেনাবেচা হয় কি না আগে খোঁজ নিচ্ছি। ডেবিট কার্ড দেখছি বেশ ভালই কাজের জিনিস।’’ আর এই সুবাদেই নোট বাতিল হওয়ার ন’দিনের মধ্যেই ব্যাপক ব্যবসা করে ফেলেছে এই সমবায় বিপণি। বিশ্বনাথবাবু বলেন, “যাঁদের টাকা নেই তাঁরা কার্ডে কেনার সুযোগ পাচ্ছেন, যাঁদের অচল নোট তাঁরাও চালিয়ে নিতে পারছেন। এই দু’য়ের জেরে গত ক’দিনে রেকর্ড ব্যবসা করে ফেলেছি আমরা।”

বাঁকুড়া শহরের যে সব দোকানে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডে মাল কেনার সুযোগ রয়েছেন, এই অস্থির পরিস্থিতিতে সেইসব দোকানে ছুটে যাচ্ছেন মানুষজন। শহরের রানিগঞ্জ মোড়ের একটি রেডমেড পোশাকের দোকানের কর্ণধার রুমেলা চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, অধিকাংশ ক্রেতাই তাঁদের দোকানে কার্ডে জামাকাপড় কিনছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এখন নগদে কেনাকাটার পরিমাণ তলানিতে এসে ঠেকেছে। কার্ডে কেনাবেচার ফলে একদিকে ক্রেতার পকেটে থাকা খুচরো টাকা যেমন রয়ে যাচ্ছে, তেমনই বিক্রেতাদেরও প্রতিদিন ব্যাবসার টাকা ব্যাঙ্কে জমা করার হ্যাপা থাকছে না।’’

বিষ্ণুপুরের কলেজমোড় এলাকার একটি শাড়ি ও রেডিমেড পোশাক বিক্রির দোকানের অন্যতম কর্ণধার ফাল্গুনী দাসেরও একই প্রতিক্রিয়া। তিনি জানান, ক্রেতাদের অনেকেই এখন কার্ডে মালপত্র কিনছেন। ফাল্গুনীবাবু বলেন, “আগে কিছু ক্রেতা কার্ডে পোশাক কিনতে ভয় পেতেন। এখন দেখছি তাঁরাও কার্ড ব্যবহার করছেন।’’

ঘটনা হল, দুম করে কেন্দ্রের বড় নোট বাতিল করে দেওয়া ও ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তোলার ক্ষেত্রে ঊর্ধসীমা বেঁধে দেওয়ার ফলে অনেকে কার্ডে কেনাবেচার প্রতি আগ্রহী হয়েছেন। তবে এখনও জেলার বহু বড় দোকানেও ক্রেতাদের জন্য এই সুযোগ চালু হয়নি। বাঁকুড়া শহরের প্রতাপবাগান এলাকার বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক মুকেশ পাত্রের কথায়, “এখন যা পরিস্থিতি তাতে আলু, পটলও কার্ডে কিনতে পারলে ভাল হতো। সে সুযোগ এখানে কোথায়?’’

জেলার বেশিরভাগ ব্যবসায়ী কেন কার্ডে বেচাকেনায় বিমুখ? বাঁকুড়া চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাধারণ সম্পাদক মধুসূদন দরিপার কথায়, “এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে সচেতনতা দরকার। সেই সঙ্গে সরকার ও ব্যাঙ্কগুলিরও উৎসাহ দেওয়া প্রয়োজন। না হলে টাকা দিয়ে বেচাকেনার মানসিকতা কাটবে না।’’

Debit card Credit card Business community
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy