Advertisement
১৭ মে ২০২৪
হেল্প লাইন ১৮০০৩৪৫৩২৭৭

ফোন এলেই ১০০ দিনের কাজে তদন্ত করবে প্রশাসন

একশো দিনের কাজের প্রকল্প চালু হওয়ায় গ্রামাঞ্চলের মানুষের আর্থিক ভিত্ত যেমন কিছুটা মজবুত হয়েছে, তেমনই বেনিয়মের অভিযোগও কম উঠছে না। জবকার্ড থাকা প্রতিটি মানুষ যাতে খেটেখাওয়া রোজগার ঠিক মতো পান, তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন নানাবিধ নিয়ম-নীতি চালু করছে ঠিকই, কিন্তু তা যে ১০০ শতাংশ ত্রুটিমুক্ত হয়েছে, তা মানা যাচ্ছে না।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৬ ০১:২৪
Share: Save:

একশো দিনের কাজের প্রকল্প চালু হওয়ায় গ্রামাঞ্চলের মানুষের আর্থিক ভিত্ত যেমন কিছুটা মজবুত হয়েছে, তেমনই বেনিয়মের অভিযোগও কম উঠছে না। জবকার্ড থাকা প্রতিটি মানুষ যাতে খেটেখাওয়া রোজগার ঠিক মতো পান, তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন নানাবিধ নিয়ম-নীতি চালু করছে ঠিকই, কিন্তু তা যে ১০০ শতাংশ ত্রুটিমুক্ত হয়েছে, তা মানা যাচ্ছে না। আবার কাজ চেয়েও না পাওয়ার অভিযোগও রয়েছে।

কিন্তু এতদিন এ সব অভিযোগের কিছু কিছু জেলা বা ব্লক প্রশাসনের কর্তাদের কানে এলেও অধিকাংশই পৌঁছত না। এ বার সেই পথই খুলে দিল বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন।

চালু হল হেল্পলাইন। মঙ্গলবার বাঁকুড়ায় একশো দিনের কাজ প্রকল্প দফতর চালু করল টোল ফ্রি টেলিফোন নম্বর। নম্বরটি হল ১৮০০৩৪৫৩২৭৭। এই টোল ফ্রি নম্বরে ফোন করা যাবে সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত। সরকারি ছুটির দিনে অবশ্য ফোন করা যাবে না।

বাঁকুড়ার জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, “কেউ কাজ না পেলে ওই নম্বরে ফোন করে জানাতে পারেন। রেজিস্ট্রার খাতায় তাঁর আবেদন নেওয়া হবে। জেলা থেকেই সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েত ও ব্লকের সঙ্গে যোগাযোগ করে আবেদনকারীকে একশো দিনের কাজ প্রকল্পে কাজ দেওয়া হবে।” তিনি জানান, শুধু যে কাজ চেয়েই এই নম্বরে আবেদন করা যাবে তা নয়। এই প্রকল্পে কোথাও কোনও বেনিয়ম হচ্ছে কি না, সে বিষয়েও বাসিন্দারা অভিযোগ জানাতে পারবেন ওই নম্বরে। ফোনে পাওয়া অভিযোগের ভিত্তিতেও জেলা প্রশাসন পদক্ষেপ করবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। ক্ষেত্র বিশেষে অভিযোগকারীকে পরে অভিযোগ সম্পর্কে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানানো হতে পারে।

গ্রামাঞ্চলের মানুষদের কাজ দেওয়ার লক্ষ্যেই চালু হয়েছিল বছরে একশো দিনের কাজের প্রকল্প। সকল জবকার্ড প্রাপকই যে কাজ পাচ্ছেন এমনটা এখনও হয়নি। প্রশাসনিক আধিকারিকেরাও বহু গ্রামে গিয়ে দেখেছেন, মানুষ কাজ চেয়েও পাচ্ছেন না। অথচ সরকারি নিয়ম অনুসারে কেউ কাজ চাইলে তাঁকে ১৫ দিনের মধ্যে কাজ দিতে হবে। এতদিন কাজ চেয়ে দরবার করার জায়গা বলতে ছিল পঞ্চায়েত বা ব্লক অফিস। বহু মানুষের আবেদনই জেলা প্রশাসনের শীর্ষ মহলের কাছে আসতই না। গ্রামাঞ্চলের মানুষের সঙ্গে জেলা প্রশাসনের এই দূরত্ব ঘোচাতেই পদক্ষেপ করল বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন।

একশো দিনের কাজের প্রকল্পে নানা বেনিয়মের অভিযোগ আকছার ওঠে এই জেলায়। প্রশাসনিক আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, প্রতি তিন মাসে গড়ে সাত-আটটি অভিযোগ আসে বিভিন্ন দফতরে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, চলতি অর্থবর্ষে গত তিনমাসে ইতিমধ্যে একশো দিনের কাজকে কেন্দ্র করে ১০টি অভিযোগ জমা পড়েছে বিভিন্ন ব্লক থেকে। যার মধ্যে পাঁচটির তদন্ত করছে সংশ্লিষ্ট ব্লক প্রশাসন। যেগুলির চূড়ান্ত তদন্ত রিপোর্ট এখনও জেলায় জমা করা হয়নি। তিনটি অভিযোগের তদন্ত করছে খোদ জেলা একশো দিনের প্রকল্প সেল। সেগুলিরও তদন্ত চলছে। বাকি দু’টি অভিযোগের তদন্ত শুরু হওয়ার মুখে।

বাঁকুড়া জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “টোল ফ্রি নম্বর চালু করার উদ্যোগ ভাল। তবে শুধু মানুষের কাছে পৌঁছলেই হবে না। মানুষের সমস্যা শুনে তা মেটাতেও হবে। প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ পেয়ে দ্রুত তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। তাহলেই উদ্যোগটি সফল হবে।”

একশো দিনের কাজের প্রকল্পের দফতরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, চলতি অর্থবর্ষে এখনও পর্যন্ত পরিবার পিছু গড়ে প্রায় ১৭ দিন করে কাজ দেওয়া গিয়েছে। চলতি অর্থবর্ষে জেলায় ১ কোটি ২২ লক্ষ শ্রম দিবস তৈরি করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যেই ২২ লক্ষ ৮০ হাজার শ্রমদিবস তৈরি হয়েছে। গত জুন মাসেই ২৭ লক্ষ শ্রমদিবস তৈরি করার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। লক্ষ্যমাত্রা অবশ্য পূরণ হয়নি। ওই মাসে ১৮ লক্ষ শ্রমদিবসেই থমকে গিয়েছে। চলতি জুলাই মাসে প্রায় ৩৪ লক্ষ শ্রমদিবস তৈরি করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। চলতি মাসের ১৬ জুলাই এনআরইজিএস দিবসেই ৩ লক্ষ শ্রমদিবস তৈরি করার লক্ষ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। পাশাপাশি এই মাসের শেষ সপ্তাহটি এনআরইজিএস সপ্তাহ হিসেবেও পালিত হবে। সব মিলিয়ে এই মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়া যাবে বলেই আশাবাদী জেলার একশো দিনের প্রকল্প আধিকারিক সৌভিক মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “গত অর্থবর্ষে জেলায় আমরা পরিবার পিছু ৪১ দিন কাজ দিতে পেরেছিলাম। এ বার ৫০ দিনের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। যে ভাবে শুরু হয়েছে, তাতে ওই লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে অসুবিধা হবে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Helpline number complaints 100 days work
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE