Advertisement
১৯ মে ২০২৪

সংসদের নির্দেশে ভর্তি বন্ধ, বিপাকে পড়ুয়ারা

উচ্চ মাধ্যমিকে চলতি শিক্ষাবর্ষে ছাত্রছাত্রী ভর্তি নেওয়া হবে না, আচমকা স্কুল কর্তৃপক্ষ এই ঘোষণা করায় ভর্তি নিয়ে সমস্যায় পড়েছে পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলের অন্যতম ব্লক আড়শার পড়ুয়ারা। ঘটনা আড়শার ঝুঁঝকা উচ্চ বিদ্যালয়ের। স্কুল সূত্রে বলা হয়েছে, চলতি শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে কোনও ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা যাবে না, সম্প্রতি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ থেকে এই মর্মে একটি নির্দেশ স্কুলে পৌঁছয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আড়শা শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৫ ০১:১৮
Share: Save:

উচ্চ মাধ্যমিকে চলতি শিক্ষাবর্ষে ছাত্রছাত্রী ভর্তি নেওয়া হবে না, আচমকা স্কুল কর্তৃপক্ষ এই ঘোষণা করায় ভর্তি নিয়ে সমস্যায় পড়েছে পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলের অন্যতম ব্লক আড়শার পড়ুয়ারা। ঘটনা আড়শার ঝুঁঝকা উচ্চ বিদ্যালয়ের। স্কুল সূত্রে বলা হয়েছে, চলতি শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে কোনও ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা যাবে না, সম্প্রতি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ থেকে এই মর্মে একটি নির্দেশ স্কুলে পৌঁছয়। স্কুল কর্তৃপক্ষ সে কথা ঘোষণা করার পরেই ক্ষোভ ছড়িয়েছে এলাকায়।

কিন্তু কেন সংসদের এই নির্দেশ?

ওই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অনুপ মণ্ডল জানান, তাঁরা সময়মতোই একাদশে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। আচমকা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ থেকে ওই নির্দেশ এসেছে। তিনি জানিয়েছেন, সংসদের বক্তব্য, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে এই স্কুলে দর্শন, শিক্ষা ও সংস্কৃত বিষয় পড়ান যে শিক্ষকেরা, তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতার শংসাপত্র সংসদে জমা নেই। অথচ বিধি মোতাবেক এই শংসাপত্র শিক্ষকদের জমা দেওয়ার কথা। অনুপবাবু বলেন, ‘‘ভর্তি বন্ধ রাখার নির্দেশ আসার পরে আমরা সংসদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। ওই বিষয়ের শিক্ষকদের সকলের কাছে নিজেদের মার্কশিট থাকলেও শংসাপত্র নিজস্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে তোলা নেই। তা ছাড়া, আমাদের স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিক শাখায় জন্য তিনটি শিক্ষক পদ শূন্য পড়ে রয়েছে। আমরা সংসদে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছি।’’

সব মিলিয়ে এ বছর আদৌ এলাকার মাধ্যমিক উত্তীর্ণ পড়ুয়া এই স্কুলের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারবে কিনা, তা নিয়ে ঘোর সংশয় দেখা দিয়েছে। পড়ুয়া ও অভিভাবকদের প্রশ্ন, এমনিতেই জঙ্গলমহলের এই অঞ্চলে হাইস্কুলের সংখ্যা বেশি নয়। তার উপর এই স্কুলেও ভর্তি বন্ধ করা হলে এলাকার মাধ্যমিকে পাশ ছাত্রছাত্রীরা কোথায় যাবে। স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে এই প্রশ্নের সদুত্তর না পাওয়ায় সোমবার ঝুঁঝকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে পুরুলিয়া-আড়শা রাস্তা অবরোধ পর্যন্ত করে পড়ুয়ারা। মিশিরডি গ্রামের বিপ্লব কুমার, বিশ্বনাথ কুমার, ঝুঁঝকা গ্রামের বিপ্লব মাহাতো, সটরা গ্রামের গগড়ুবাহন মাঝি, রাখাল মাঝির মতো পড়ুয়ারা বলে, ‘‘মাধ্যমিক পাশ করে এখন আমরা কোথায় ভর্তি হতে পারব?’’ এলাকার বাসিন্দা রাম মাহাতো বলেন, ‘‘প্রায় দুশো ছাত্রছাত্রী ঝুঁঝকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিকে পাশ করেছে। তারা যাবে কোথায়। কাছাকাছি তো কোন উচ্চ বিদ্যালয় নেই। এক দিকে কাঁটাডি, অন্য দিকে শিরকাবাদ, দু’টি হাইস্কুলেরই দূরত্ব প্রায় ১৭-১৮ কিলোমিটার।’’ তিনি জানান, এলাকার দীর্ঘদিনের দাবি মেনে মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো 2২০১২ সালে ঝুঁঝকা স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিক শাখার উদ্বোধন করে গিয়েছিলেন। সে বছর এবং পরের দু’টি বছরে যথারীতি ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়েছে। তারা পরীক্ষাও দিয়েছে। এখন আচমকা ভর্তি বন্ধ করে দেওয়ায় ছাত্রছাত্রীরা বিপাকে পড়েছে।

মঙ্গলবার ওই এলাকার বেশ কিছু পড়ুয়া পুরুলিয়ায় জেলা শিক্ষা দফতরে এসে তাদের ভর্তি সমস্যার সমাধানের দাবিতে আবেদনপত্র জমা দিয়ে যায়। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের আড়শা ব্লক সভাপতি সূর্য মাঝি বলেন, ‘‘এই বিদ্যালয়ে মিশিরডি, সটরা, হেঁসলা, সেনাবনা, শালইডহর, ঝুঁঝকা-সহ আট-দশটি গ্রামের ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে। তাদের কাছের স্কুল বলতে এটাই। এখন আচমকা ভর্তি বন্ধ করে দেওয়া হলে আমরা মানব না। এই এলাকার অভিভাবকদের বাইরে রেখে সন্তানকে পড়ানোর সামর্থ্য নেই। আচমকা ভর্তি বন্ধ হয়ে গেল কার গাফিলতিতে?’’ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বলছেন, এটা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের নির্দেশ। এই নির্দেশ অন্য কোন স্কুলে আসেনি।

আড়শারই বাসিন্দা, জেলা পরিষদের শিক্ষা বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ সুষেণচন্দ্র মাঝি বলেন, ‘‘আমি নিজে ওই বিদ্যালয়ের ছাত্র। এই সমস্যার ব্যাপারে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। আমি বিষয়টি জেনেছি অনেক পরে। সোমবার পড়ুয়ারা পথ অবরোধ করেছিল। আমি সেখানে যাই। ওদের বলেছি, প্রশাসনিক স্তরে আলোচনা করে কী ভাবে এই ভর্তি সমস্যার সমাধান করা যায়, তা দেখা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE