Advertisement
E-Paper

ফোন বেজে যায়, কর্মীর দেখা নেই

টিক-টিক-টিক! বিদ্যুৎ দফতরের কল সেন্টারের নম্বরে ফোন করলে গ্রাহকদের এটাই শুধু প্রাপ্তি। যদি বা কপাল ভাল থাকলে নাগাড়ে ফোন করে যাওয়ার পরে সংযোগ মেলে তো কথা বাড়ানোর আগেই হঠাৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে রাস্তার মোড়ে বিপজ্জনক ভাবে বিদ্যুৎবাহী তার ছিঁড়ে থাকার মতো খবর দিয়ে সাহায্য পাওয়াও দুষ্কর হয়ে পড়েছে গ্রাহকদের কাছে।

অর্ঘ্য ঘোষ

শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৫ ০২:৩২

টিক-টিক-টিক!

বিদ্যুৎ দফতরের কল সেন্টারের নম্বরে ফোন করলে গ্রাহকদের এটাই শুধু প্রাপ্তি। যদি বা কপাল ভাল থাকলে নাগাড়ে ফোন করে যাওয়ার পরে সংযোগ মেলে তো কথা বাড়ানোর আগেই হঠাৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে রাস্তার মোড়ে বিপজ্জনক ভাবে বিদ্যুৎবাহী তার ছিঁড়ে থাকার মতো খবর দিয়ে সাহায্য পাওয়াও দুষ্কর হয়ে পড়েছে গ্রাহকদের কাছে।

ঘটনা হল, এ সমস্যা শুধু ময়ূরেশ্বর থানা এলাকারই নয়। বিদ্যুৎ দফতরের উদাসীনতায় কার্যত গোটা বীরভূম জেলাজুড়েই গ্রাহকরা এই সঙ্কটের মধ্যে পড়েছেন। বাধ্য হয়ে তাঁদের বিদ্যুতের টুকটাক মেরামতির কাজ করা স্থানীয় লোকজনের উপরেই নির্ভর করতে হচ্ছে। বাসিন্দারা জানান, বিদ্যুৎ দফতরকে জানানোর সুযোগই যখন নেই, তখন বাধ্য হয়ে ওই সব ছোটখাট মিস্ত্রিদের টাকা দিয়েই তার টাঙানো, ট্রান্সফর্মারের ফিউজ লাগানো থেকে শুরু করে ট্রান্সফর্মারের কয়েল পর্যন্ত বদল করানো হচ্ছে। এ দিকে, হাতুড়ে জ্ঞান সম্পন্নদের দিয়ে কাজ করানোর ফলে কিছু ক্ষেত্রে বহুমূল্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জামও যে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে, তাও মানছেন বাসিন্দারা। তবে এ জন্য তাঁরা বিদ্যুৎ দফতরের গাফিলতিকেই দায়ী করছেন। তাঁদের কথায়, ‘‘কোনও কাজের জন্য বিদ্যুৎ দফতরকে ফোনে ধরতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পেরিয়ে যায়। আর রাতে ট্রান্সফর্মারের ফিউজ পুড়ে যাওযার মতো ঘটনা হলে তো অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীদের পৌঁছতে পরের দিন বেলা গড়িয়ে যায়। তাই হয় আমাদের রাতভর অন্ধকারে থাকতে হয়, নয় তো প্রাণেরর ঝুঁকি নিয়ে নিজেরাই কিংবা স্থানীয় মিস্ত্রিদের দিয়েই ফিউজ পাল্টাতে হয়।’’

কয়েক মাস আগে এমনই পরিস্থিতিতে পড়ে গ্রামেরই এক মিস্ত্রিকে দিয়ে ছিঁড়ে যাওয়া তার জোড়াতালি দিয়ে টাঙিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন ময়ূরেশ্বরের লোকপাড়া মোড় এলাকার বাসিন্দারা। স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সুভাষ ঘোষ, ব্যবসায়ী ফটিকচন্দ্র দে বলেন, ‘‘কী করব? তার ছিঁড়ে যাওয়ার খবর দিলে স্থানীয় বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীরা জানিয়ে দেন, সরাসরি তাঁদের করার কিছু নেই। সাপ্লাই অফিস কিংবা বর্ধমান জোনাল অফিসে জানাতে হবে। কিন্তু বার বার ফোন বেজে গেলেও স্থানীয় সাপ্লাই অফিসের কোনও সাড়া মেলে না। বর্ধমান অফিসে ফোন করলে মাঝপথেই লাইন কেটে যায়। তাই স্থানীয় মিস্ত্রিরাই ভরসা।’’ বাসিন্দারা জানান, বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীরা ছাড়া অন্য কারও ওই লাইনে কাজ করাটা বেআইনি। কিন্তু পরিস্থিতিই তাঁদের ওই কাজের দিকে ঠেলে দিয়েছে। রাস্তায় তার ছিঁড়ে পড়ে থাকলে, তাও কম বিপজ্জনক নয়। তাই ক্ষেত্র বিশেষে স্থানীয় মিস্ত্রিদের ডেকেই কাজ করাতে তাঁরা বাধ্য হচ্ছেন।

সব থেকে সমস্যায় পড়তে হয় ট্রান্সফর্মার পুড়ে গেলে। স্থানীয় বিদ্যুৎ দফতর থেকে ‘ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট’ পাওয়ার পরে নতুন ট্রান্সফর্মার বরাদ্দ করে মহকুমা দফতর। কিন্তু, ওই ট্রান্সফর্মারের আওতায় থাকা গ্রাহকদের বিল বকেয়া থাকলে সার্টিফিকেট দেওয়া হয় না বলে অভিযোগ। ফলে দিনের পর দিন ট্রান্সফর্মার মেলে না। গ্রামবাসী তাই ট্রান্সফর্মার পুড়ে গেলে বিদ্যুৎ দফতরকে না জানিয়ে গোপনে নিজেরাই মিস্ত্রি ডেকে মেরামত করিয়ে নেন। ময়ূরেশ্বরের নবগ্রাম এবং লাভপুরের ধনডাঙার দুই সাব-মার্সিবল পাম্পের মালিক বলেন, ‘‘কয়েকজন গ্রাহকের বিল অনাদায়ী থাকায় বাকি গ্রাহকরা কেন কষ্ট পাবেন? ট্রান্সফর্মার সময়ে মেরামত করা বা না পাল্টানো হলে সেচের অভাবে খেতের ফসল শুকিয়ে মরবে না কি?’’ তাই ট্রান্সফর্মার পুড়লে এখন গ্রামবাসীর একটা বড় অংশই বিদ্যুৎ দফতরের পরিবর্তে বাজারের মিস্ত্রিকেই খবর দেন। চাঁদা তুলে কিছু টাকা দিলেই ১২ ঘণ্টার মধ্যেই সচল হয়ে যায় ট্রান্সফর্মার।

অথচ বিদ্যুৎ দফতর নিয়ে এমন অভিযোগ আগে উঠত না। একসময় একটি সাব-ডিভিশন অফিসের অধীনে তিনটি সাপ্লাই অফিস থাকত। যে কোনও ধরনের সমস্যায় তৎকালীন স্টেশন সুপারিন্টেডেন্টকে (এসএস) জানালেই কাজ হতো। এলটি (নিম্ন বিভব) লাইন-সহ ছোটখাট কাজ এসএস সরাসরি সাপ্লাইয়ের কর্মীদের দিয়ে করাতেন। নিজের এলাকার এইচটি (উচ্চ বিভব) লাইন এবং ট্রান্সফর্মারের কাজও এসএস সাব-ডিভিশন্যাল অফিসের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারকে বলে করিয়ে নিতেন।

সেই সময় তিনটি পঞ্চায়েত পিছু একটি করে ‘কলসেন্টার’ চালু করেছিল বিদ্যুৎ দফতর। এলাকায় সমস্যা হলেই দিন বা রাত সব সময়ই কল সেন্টারের কর্মীরা এসে কাজ করে দিয়ে যেতেন। বড় কোনও সমস্যা হলে তাঁরাই সংশ্লিষ্ট কর্মীদের ডেকে আনতেন। গ্রাহকদের দাবি, এখন একে অন্যের ঘাড়ে দায় চাপাতেই ব্যস্ত।

ময়ূরেশ্বরের কনুটিয়ার রমজান আলি, সাঁইথিয়ার হরপলশার সুনীল মণ্ডলদের ক্ষোভ, ‘‘এক ধরনের কাজের কর্মী অন্য ধরনে কাজ করতে চান না। তাঁরাই উল্টে আমাদের অন্য কর্মীদের খবর দিতে বলেন। কিন্তু সেই সব অফিসে ফোনে পাওয়া গেলে তো! ফোন ধরারই লোক নেই সেখানে।’’

বিদ্যুৎ দফতর সূত্রে খবর, কলসেন্টারগুলি এখন তুলে দেওয়া হয়েছে। এখন সরাসরি সংশ্লিষ্ট সাপ্লাই অফিসের মাধ্যমেই গ্রাহকের বাড়ি থেকে এলটি লাইনের কাজ পরিচালিত হয়। অন্যদিকে, স্থানীয় সাব-স্টেশনের দায়িত্বে থাকা এক জন টেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের অধীনে ঠিকাদারের মাধ্যমে এইচটি লাইন-সহ ট্রান্সফর্মারের কাজ হয়। কিন্তু, দু’টি দফতরের মধ্যে সমম্বয় থাকছে না বলে জানাচ্ছেন খোদ বিদ্যুৎ কর্মীরাই। এর ফলে গ্রাহকদের ভোগান্তি। আবার বিদ্যুৎ দফতরের কিছু কর্মীর মতে, এলাকার ইলেকট্রিক মিস্ত্রিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজ করালে অনেক দ্রুত গ্রাহকরা পরিষেবা পাবেন। দফতর থেকে ওই মিস্ত্রিদের বিল মিটিয়ে দিলেই হবে।

দফতরের জেলা রিজিওনাল ম্যানেজার তপনকুমার দে বলেন, ‘‘নিম্নবিবর বিদ্যুতের মেরামতির জন্য স্থানীয় সাপ্লাই অফিসে এবং উচ্চবিবরে মেরামতির জন্য মহকুমা দফতরে জানালেই কাজ হওয়ার কথা। কিন্তু, তা সত্ত্বেও কিছু ক্ষেত্রে কাজ হচ্ছে না কেন, তা বলে পারছি না। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখব। পাশাপাশি কোথাও কোথাও দফতরের বিল বকেয়া রেখে নিজেরাই ট্রান্সফর্মার বদলিয়ে বা মেরামতির করে নেওয়ার কথা শুনেছি। এ ক্ষেত্রেও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না পেলে কিছু করার নেই।’’

argha ghosh mayureshwar burdwan electric department
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy