Advertisement
১১ মে ২০২৪

অযোধ্যা পাহাড়ে শিকার উৎসব, রোখা গেল না প্রাণীহত্যা

Ajodhya Hillআয়োজন ছিল। কিন্তু লক্ষ্য ফসকালো। পোস্টার দিয়ে আবেদন বা তিরন্দাজি প্রতিযোগিতার বন্দোবস্ত করেও বিশেষ লাভ হল না। এ বছরের শিকার উৎসবেও অযোধ্যা পাহাড়ে প্রাণ হারালো একাধিক বুনো শুয়োর এবং হরিণ। এ দিন ছাতনি, উসুলডুংরি, ছতরাজেরা, অযোধ্যা, পুনিয়াশাসন-সহ বিভিন্ন গ্রাম পেরিয়ে পাহাড়ে ওঠার পথে চোখে পড়েছে, বাড়ির দেওয়ালে দেওয়ালে বুনো জন্তুর ছবি দিয়ে তাদের হত্যা না করার জন্য আবেদন।

অযোধ্যায় পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার। —নিজস্ব চিত্র

অযোধ্যায় পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
অযোধ্যা পাহাড় শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৬ ০২:১৮
Share: Save:

আয়োজন ছিল। কিন্তু লক্ষ্য ফসকালো। পোস্টার দিয়ে আবেদন বা তিরন্দাজি প্রতিযোগিতার বন্দোবস্ত করেও বিশেষ লাভ হল না। এ বছরের শিকার উৎসবেও অযোধ্যা পাহাড়ে প্রাণ হারালো একাধিক বুনো শুয়োর এবং হরিণ।

এ দিন ছাতনি, উসুলডুংরি, ছতরাজেরা, অযোধ্যা, পুনিয়াশাসন-সহ বিভিন্ন গ্রাম পেরিয়ে পাহাড়ে ওঠার পথে চোখে পড়েছে, বাড়ির দেওয়ালে দেওয়ালে বুনো জন্তুর ছবি দিয়ে তাদের হত্যা না করার জন্য আবেদন। কোথাও হরিণের ছবির নীচে লেখা ‘আমাকে বাঁচতে দাও’। হায়নার ছবির নীচে লেখা, ‘‘জঙ্গল কেটে ফেললে আমি থাকব কোথায়?’’ কিন্তু অযোধ্যা বন সুরক্ষা সমন্বয় কমিটি এবং বন দফতরের যৌথ প্রচারই সার। সেই সমস্ত আবেদনে সাড়া দিল না শিকারীরা।

বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন প্রতি বছর অযোধ্যা পাহাড়ে শিকার উৎসবে যোগ দেন আদিবাসীরা। এ বার উৎসবে তিরন্দাজি প্রতিযোগিতার আযোজন করেছিল বনদফতর এবং বনসুরক্ষা সমন্বয় কমিটি। ঠিক হয়েছিল, নিশানায় তির ফুঁড়ে শ্রেষ্ঠ শিকারি পাবেন ‘অযোধ্যা-বীর’ খেতাব। মঞ্চ থেকে সফল প্রতিযোগীর হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে। সেই মতো প্রচারপত্র ছাপিয়ে অযোধ্যা বন সুরক্ষা সমন্বয় কমিটির পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছিল, জঙ্গল আর জন্তুদের রক্ষা করে ঐতিহ্য পালন করার। মনে করানো হয়েছিল, প্রকৃতিকে রক্ষাই আদিবাসীদের মূল ঐতিহ্য। কিন্তু তাতেও সাড়া মেলেনি। ভোর রাত থেকে জঙ্গলে আসা শিকারিদের কাছে বেশ কয়েকটি বুনো শুয়োর এবং হরিণের মৃতদেহ দেখা গিয়েছে।

বলরামপুরের ঘাটবেড়া এলাকা থেকে পাহাড়ে এসেছিল প্রায় শতাধিক শিকারির একটি দল। দলপতি নাগর মান্ডি স্বীকার করেন, তাঁরা তিনটি শুয়োর শিকার করেছেন। অন্য একটি দলও ওই এলাকা দিয়েই ফিরছিল দু’টি বুনো শুয়োর শিকার করে। সেই দলের দলপতি মটুরু হাঁসদা বলেন, ‘‘এই দিনে শিকার করাটা আমাদের ঐতিহ্য।’’ কমলাবহাল মাঠের কাছে এবং খেরঘুটু এলাকাতেও হরিণ শিকার করে ফেরা দু’টি দলের দেখা মিলল। বীরভূমের বোলপুর থেকে আসা একটি দলের দলপতি অবিনাশ মুর্মু জানান, বুনো শুয়োর শিকার করেছেন তাঁরাও। শিকার করতে ঝাড়খণ্ডের কাঁড়রা থেকে এসেছিলেন ধনঞ্জয় মান্ডির মতো অনেকেও।


পাহাড়ের পথে শিকারিরা। শনিবার ছবিটি তুলেছেন সুজিত মাহাতো।

তবে এ দিন তিরন্দাজি প্রতিযোগিতাতেও ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। আর সেই ভিড় দেখেই আশাবাদী প্রশাসন এবং বনদফতরের কর্তারা। এ দিন হিলটপে সুতান টান্ডির মাঠে প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন জেলা পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার। ‘অযোধ্যা-বীর’-এর জন্য আর্থিক পুরস্কার ঘোষণা করেন তিনি। একই ভাবে পুরুলিয়া ডিভিশনের ডিএফও কুমার বিমলও কমিটির পুরস্কারের পাশাপাশি আলাদা আর্থিক পুরস্কার ঘোষণা করেন। এ বছর তিরন্দাজি প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে অযোধ্যার লালু সিং সর্দার ‘অযোধ্যা-বীর’ সম্মান পেয়েছেন।

ডিএফও স্বীকার করেন, বন্যপ্রাণী হত্যার বিরুদ্ধে নানা ভাবে প্রচার চালিয়েও একেবারে রোখা যায়নি। তিনি বলেন, ‘‘দীর্ঘদিনের পরম্পরা। মানুষকে বোঝাতে হবে। এক দিনে দুম করে বন্ধ হওয়ার নয়।’’ তবে এই বছর শিকার বেশ কিছুটা কমেছে বলে ডিএফও দাবি করেন। ভবিষ্যতে শিকার উৎসবে বন্যপ্রাণী হত্যা পুরোপুরি রুখে দেওয়া যাবে বলে তাঁর বিশ্বাস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ajodhya Hill Animals
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE