অভিযোগপত্র হাতে। নিজস্ব চিত্র
প্রশাসন দাবি করেছিল, প্রকৃত উপভোক্তারা যাতে সরকারি আবাস প্রকল্প থেকে বঞ্চিত না হন, সে ব্যাপারে সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে। তারপরেও উপভোক্তা তালিকার ক্রমিক নম্বর ভেঙে বেশ কয়েকজন আবাস যোজনায় প্রাপককে বঞ্চিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠল খয়রাশোলের বাবুইজোড়ে। তবে প্রশাসনকে নয়, ঘটনার জন্য ওই পঞ্চায়েত এলাকায় শাসক দলের দুটি গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বকেই দায়ী করেছেন উপভোক্তারা। প্রশাসন সূত্রে খবর, বঞ্চিত হওয়ার ক্ষোভে ওই পঞ্চায়েতের ইসলামকুঁড়ি গ্রামের চার উপভোক্তাও চলতি মাসের ৫ তারিখ খয়রাশোলের বিডিওর কাছে অভিযোগ জানান।
সোমবার ওই পঞ্চায়েত এলাকার বাতাসপুর গ্রামের চার বাসিন্দা জেলাশাসককের কাছে এই অভিযোগ জানাতে সিউড়িতে এসেছিলেন। জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বোলপুরে রাষ্ট্রপতির সফর নিয়ে ব্যস্ত থাকায় অন্য কোথাও অভিযোগ জমা না দিয়েই ফিরে যান তাঁরা। এ দিন সিউড়িতে জেলাশাসকের কাছে অভিযোগ জমা দিতে আসা কোহিনুর বিবি, শেখ সালুউদ্দিন, সুরেশ ডোম, বকুল খানেরা অভিযোগ করে বলেন, ‘‘আমাদের নাম প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা বা বাংলা আবাস যোজনায় প্রাপকের তালিকায় ছিল। সরকারি আবাস যোজনায় বাড়ি পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের রেজিষ্ট্রেশন হয়নি।’’
তাঁদের ক্ষোভ, তাঁদের বাদ দিয়ে ক্রমিক নম্বর অনুসারে পরের দিকে থাকা উপভোক্তাদের রেজিষ্ট্রেশন হয়েছে। তাঁদের কথায়, ‘‘আমরা বাড়ি পাওয়া থেকে বঞ্চিত থেকে গেলাম। তাই বিচার পেতে সিউড়ি ছুটে এসেছি।’’বাবুইজোড়ের বাসিন্দাদের মতো একই দাবি করছেন ইসলামকুঁড়ির কাজল বাদ্যকর, প্রবীর বাদ্যকরেরা। তাঁদের দাবি, বিডিওকে লিখিত ভাবে তাঁরা নিজেদের অভিযোগের কথা জানিয়েছেন।
বঞ্চিত উপভোক্তাদের দাবি, এলাকায় শাসক দলের দু’টি যুযুধান গোষ্ঠী রয়েছে। ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর নেতা আবদুর রহমান। তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছেন মৃণালকান্তি ঘোষ। মৃণালের পক্ষে থাকাতেই তাঁদের ভুগতে হচ্ছে বলে দাবি বিক্ষোভকারীদের। এ কারণেই ইচ্ছাকৃত ভাবে তাঁদের বাদ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তাঁরা। মৃণালকান্তির সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে তাঁর গোষ্ঠীর নেতা বলে পরিচিত কৃষ্ণ গড়াই বলছেন, ‘‘ক্রমিক ভেঙে উপভোক্তাদের বঞ্চিত করার উদাহরণ গোটা পঞ্চায়েত এলাকায় আরও অনেক রয়েছে।’’
যদিও গরিব মানুষকে ঘর দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও পক্ষপাত করা হয়নি বলে দাবি করেছেন আবদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘‘নথিপত্র সময়ে না দেওয়া ও সঠিক নথি না দেওয়ার জন্য কারও কারও রেজিষ্ট্রেশন বাতিল হয়ে থাকতে পারে।’’ একই সুর ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান নবদ্বীপ মণ্ডলের। তাঁর দাবি, ‘‘বাতাসপুরের চার জন সঠিক নথি দেননি। তারমধ্যে একজন ইতিমধ্যেই অন্য প্রকল্পে বাড়ি পেয়েছেন। ইসলামকুঁড়ি গ্রামের চারজন সময়ে নথি দেননি।’’ নবদ্বীপের ব্যাখ্যা, ‘‘এ বার যেহেতু প্রশাসন খুব খুঁটিয়ে সব দেখেছে, সময়ে সঠিক নথি জমা দিতে না পারার জন্যই ওদের রেজিস্ট্রেশন বাতিল হয়ে গিয়েছে।’’ তবে প্রধানের এই দাবি মানেননি বঞ্চিত উপভোক্তারা।
খয়রাশোলের বিডিও সঞ্জয় দাস বলেন, ‘‘এমন অভিযোগ এসেছে বলে জানা নেই। তবে ক্রমিক ভেঙে কাউকে বঞ্চিত করার অভিযোগ উঠলে নিশ্চয়ই সেটা খতিয়ে দেখতে হবে।’’ জেলা প্রশাসনের এক কর্তাও একই আশ্বাস দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy