কড়া প্রহরায়। মহম্মদবাজারের সেকেড্ডা গ্রামে প্রাথমিক স্কুলে ভোটদাতাদের লাইন। ছবি: অনির্বাণ সেন।
ভোটের আগেই ময়দান অর্ধেক সাফ হয়ে গিয়েছিল। বাকিটাও মোটের উপর মিটল শান্তিপূর্ণ ভাবেই।
শনিবার রাজ্যের অন্যত্র শাসকদলের বিরুদ্ধে ভোটে ব্যাপক সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছে। এমনকী, নির্বিচারে মারা হয়েছে সংবাদমাধ্যমকেও। কিন্তু, পঞ্চায়েতের উপনির্বাচনকে ঘিরে বীরভূমে রক্ত ধরেছে, এখনও পর্যন্ত এমন কোনও খবর নেই। জেলার ১১টি গ্রাম পঞ্চায়েত ও ৩টি পঞ্চায়েত সমিতির আসনে নির্বিঘ্নেই ভোট হয়েছে বলে জেলা প্রশাসনের দাবি। বিরোধীদের অবশ্য অভিযোগ, ভোটের আগে শাসকদল এলাকায় এলাকায় যে সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করেছিল, তাতে সাধারণ মানুষের পক্ষে এ দিন স্বাধীন ভাবে মত প্রকাশের জায়গাই ছিল না। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল যদিও তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই দাবি করেছেন, ‘‘ভোট অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে।’’
এ দিনের বড় ঘটনাটি ঘটেছে খয়রাশালের কেন্দ্রগড়িয়া ২৬ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির আসনে। ওই আসনটিতে সকাল থেকেই শাসকদল ছাপ্পা ভোট দিচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছিল বিরোধী সিপিএম। অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় দু’টি বুথের ভোট মাঝপথেই বাতিল করে প্রশসান। ব্লক প্রশাসন বিষয়টি জেলা প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনে জানিয়েছে। ভারপ্রাপ্ত ডিপিআরডিও কৌশিক সিংহ বলছেন, ‘‘খয়রাশোলের ওই দু’টি বুথে পুননির্বাচন হবে কিনা, এখনও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া বাকি। তবে, জেলায় উপনির্বাচনে মোট ৮৩.২৪ শতাংশ ভোট পড়েছে।’’
ঘটনা হল, জেলায় মোট ২২টি গ্রাম পঞ্চায়েত ও ৪টি পঞ্চায়েত সমিতির আসনে উপনির্বাচনের কথা ছিল। কিন্তু, অর্ধেক গ্রাম পঞ্চায়েত আসন ও একটি পঞ্চায়েত সমিতির আসনে আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেছেন শাসকদলের প্রার্থীরা। ওই আসনগুলিকে প্রার্থী দিতে না পারার কারণ হিসাবে শাসকদল তৃণমূলের সন্ত্রাসকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে সব ক’টি বিরোধী দল। যদিও সমস্ত অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করেছে শাসকদল। রামপুরহাট মহকুমার মুরারই ১ ব্লকের চাতরা পঞ্চায়েত ১টি, মুরারই ২ ব্লকে ১টি (আমডোল গ্রাম পঞ্চায়েত) ও মাড়গ্রামের ১টি (বুদিগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েত) আসনে প্রার্থীদের ভয় দেখানো ও শাসকদলের সন্ত্রাস নিয়ে সরব ছিল কংগ্রেস। বিশেষ করে চাতরা গ্রাম পঞ্চায়েত আসনটিকে ঘিরে। যদিও রামপুরহাট মহকুমায় তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি বলেই প্রশাসনের দাবি। তবে, ছাপ্পা ভোট দেওয়ার অভিযোগে মাড়গ্রামের বুদিগ্রাম পঞ্চায়েতের সন্ধ্যাজল সংসদের বুথ থেকে এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ। অভিযোগ, তিনি তাঁর মামার হয়ে রামপুরহাটের বগটুই থেকে ভোট দিতে ওখানে গিয়েছিলেন। যে ঘটনার দিকে আঙুল তুলে কংগ্রেসের জেলা সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মি অবশ্য বলছেন, ‘‘আপাত শান্তিপূর্ণ মনে হলেও নির্বাচনের আগে যে তাণ্ডব শাসকদল তৃমমূল করেছে, তাতে মানুষের পক্ষে স্বাভাবিক মত প্রকাশ সম্ভব নয়।’’
জেলা প্রশাসনের দাবি, সব জায়গায় প্রশাসন যথাযথ ভূমিকা পালন করেছে। অভিযোগ এলেই তার সত্যতা খুঁটিয়ে দেখা হয়েছে। যেমন খয়রাশোলের কেন্দ্রগড়িয়ার রসিদপুর প্রাথমিক স্কুলের দু’টি বুথ (৩ ও ৪)। বিরোধী দলের পোলিং এজেন্টদের মারধর করে বের করে দিয়ে অবাধে ছাপ্পা দিচ্ছিল বহিরাগতরা। অভিযোগ পাওয়া মাত্রই খয়রাশোলের বিডিও তারকনাথ চন্দ্র ঘটনাস্থলে যান। সঙ্গে ছিল পুলিশ বাহিনী। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পরেই বিডিও ইভিএম সিল করে ভোটদান স্থগিত করে দেন। সিপিএমের জেলা সম্পাদক মনসা হাঁসদা বলছেন, ‘‘আমরা যে ঠিক অভিযোগ করছিলাম, তা প্রমাণিত হল। আমরা ওই পঞ্চায়েত সমিতির সব ক’টি বুথেই পুননির্বাচনের দাবি করব।’’ অনুব্রত অবশ্য বলছেন, ‘‘কোথাও কোনও ছাপ্পা ভোট হয়নি। তবে, প্রশাসন যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, পুনর্নিবাচন হবে।’’
এ দিকে, রাজনৈতিক ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পাড়ুই থানা এলাকার ইলামবাজার ব্লকের মধ্যে থাকা মঙ্গলডিহি পঞ্চায়েতের ব্রাহ্মণডিহি সংসদের একমাত্র বুথ ব্রাহ্মণডিহি প্রাথমিক স্কুলে সারা দিনই ছিল প্রশাসনের নজরদারি। এলাকায় যুযুধান তৃণমূল-বিজেপি কোনও অপ্রীতিকর ঘটনায় জড়িয়ে না পড়ে, তা দেখতে। ছিলেন জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনন্দ রায়, বোলপুরের এসডিপিও অম্লানকুসুম ঘোষ, ইলামবাজারের বিডিও উৎপল পাতসা-সহ একাধিক পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তা। কোনও অঘটন ঘটেনি এখানেও। বিজেপি-র জেলা সভাপতি অর্জুন সাহা বলছেন, ‘‘মঙ্গলডিহির গ্রাম পঞ্চায়েত আসনটিতে জেতার সুযোগ রয়েছে।’’
অন্য দিকে, সিউড়ি ১ ব্লকে তিলপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েত, মহম্মদবাজার ব্লকে সেকেড্ডা গ্রাম পঞ্চায়েত, রাজনগরের তাঁতিপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েত, খয়রাশোলের বাবুইডোড় ও রূপষপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ১টি করে আসনে এ দিন মোটের উপর শান্তিপূর্ণ ভাবে নির্বাচন হয়েছে। প্রশাসন একই দাবি করেছে দুবরাজপুর ব্লকের সাহাপুর একটি পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েত আসনের ক্ষেত্রেও। তবে, সিপিএমের আপত্তি তুলেছে দুবরাজপুরের বালিজুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের ডিহিপাড়া সংসদের নির্বাচন ঘিরে। সিপিএম জেলা সম্পাদকের অভিযোগ, ‘‘এখানেও কয়েকটি বুথে দলের পোলিং এজেন্টকে মেরে বের করে দেওয়া হয়েছে। তার পরে ছাপ্পা মেরেছে তৃণমূল।’’ সিপিএমের দাবি মানেনি প্রশাসন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy