মুকুটমণিপুরে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকের পরে জেলার বালিঘাটগুলিতে কড়া নজরদারি শুরু করল প্রশাসন। প্রশাসন সূত্রে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, ওই নির্দেশের আগে থেকেই জেলার বিভিন্ন বালিরঘাটগুলিতে নজরদারি চলছিল।
পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার জানিয়েছেন, বালি বোঝাই গাড়ি দেখলে বৈধ কাগজ দেখতে চাওয়া হচ্ছে। না থাকলে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরকে জানানো হচ্ছে। পুলিশ সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরে মানবাজার, বোরো, নিতুড়িয়া, ঝালদা, জয়পুর-সহ বিভিন্ন থানা এলাকায় অবৈধ বালির গাড়ি পাকড়াও করেছে পুলিশ। সদ্য দফতরের দায়িত্ব নেওয়া জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিক অরুণ প্রসাদ বলেন, ‘‘নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরের ১৫ তারিখ পর্যন্ত অবৈধ বালি তোলার জন্য বিভিন্ন গাড়ি থেকে জরিমানা বাবদ দফতর ১১ লক্ষ টাকা আদায় করেছে। তারপরেও ফাঁক গলে কেউ যাতে পার না পায় তার জন্যে সমস্ত জায়গাতেই নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’’ দফতর বদলের পরে আয় বেড়েছে বলেও দাবি ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কর্তাদের।
পুলিশ সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরে বিভিন্ন বালিঘাটগুলিতে সিভিক ভলান্টিয়ারদের দিয়ে নজরদারি শুরু হয়েছে। যে সমস্ত ঘাটে এখন বালি তোলার উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, সেই ঘাটগুলিকেও নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। জেলায় বালিরঘাটগুলি এখন ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। সেচ দফতরের তথ্য বলছে, জেলায় মোট বালিরঘাটের সংখ্যা ৫৮। জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের প্রাক্তন আধিকারিক তথা জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) উত্তমকুমার অধিকারী অবশ্য জানাচ্ছেন, সেচ দফতর থেকে তাঁরা ৩৮টি ঘাট পেয়েছিলেন। জাতীয় পরিবেশ আদালতের নতুন বিধি মেনে তার মধ্যে ২৩টি ঘাটের নিলাম হয়েছে।
পুরুলিয়ার ন’টি ব্লকে যেহেতু জাইকা প্রকল্পে পানীয় জল সরবরাহের পরিকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে তাই জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর এবং সেচ দফতরের যৌথ পরিদর্শনে কোন ঘাটগুলিকে বালি তোলার বাইরে রাখা হবে তা খতিয়ে দেখার কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক। জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের আধিকারিকদের মতে, বালির স্তরেই জল সঞ্চিত থাকে। ফলে নদীর বুক থেকে নির্বিচারে বালি তোলা হলে গরমে পানীয় জলের সঙ্কট তৈরি হতে পারে। তেমনটা যাতে না হয়, সে কথা মাথায় রেখেই যে সমস্ত ঘাটে জলপ্রকল্প তৈরি হবে সেই ঘাটগুলিতে বালি তোলায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে।
সে কারণেই ৫৮টি ঘাট থাকলেও বর্তমানে ২৩টি ঘাট থেকেই বালি তোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের এক কর্তা। বাকি আরও ১১টি ঘাট থেকে বালি তোলার ছাড়পত্র দেওয়া হবে বলে ঠিক হয়েছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক জানিয়েছেন, সব দিক বিবেচনা করে তবেই এই ঘাটগুলি থেকে বালি তোলার ছাড়পত্র দেওয়া হবে। এর বাইরে অন্য ঘাটগুলি থেকে যাতে অবৈধ ভাবে কেউ বালি তুলতে না পারে, কঠোর ভাবে তা দেখার নির্দেশ ইতিমধ্যেই প্রতিটি থানার পৌঁছে গিয়েছে।