Advertisement
০৮ মে ২০২৪

ভোট বিক্রি রুখতে এল অনন্যা

ভোট কেনাবেচা রুখতে প্রশাসন দীর্ঘদিন ধরেই উদ্যোগী। প্রতি নির্বাচনের আগেই ‘নোটে নয় ভোটে থাকুন’ পোস্টারে ছেয়ে যায় শহর থেকে গ্রাম। সেই কথা ফুরোয়, নটে গাছও মুড়োয়। কিন্তু ভোট বিকিকিনির অভিযোগ ওঠা বন্ধ হয় না। তাই এ বার একটু অন্য ভাবে উদ্যোগী হয়েছে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন। পুতুল নাচের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে তাঁরা শোনাচ্ছেন অন্য এক গল্প।

পুতুল-নাচের মাধ্যমে ভোটদানে উৎসাহ দিতে নেমেছে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন।—অভিজিৎ সিংহ

পুতুল-নাচের মাধ্যমে ভোটদানে উৎসাহ দিতে নেমেছে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন।—অভিজিৎ সিংহ

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৬ ০১:৩৯
Share: Save:

ভোট কেনাবেচা রুখতে প্রশাসন দীর্ঘদিন ধরেই উদ্যোগী। প্রতি নির্বাচনের আগেই ‘নোটে নয় ভোটে থাকুন’ পোস্টারে ছেয়ে যায় শহর থেকে গ্রাম। সেই কথা ফুরোয়, নটে গাছও মুড়োয়। কিন্তু ভোট বিকিকিনির অভিযোগ ওঠা বন্ধ হয় না। তাই এ বার একটু অন্য ভাবে উদ্যোগী হয়েছে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন। পুতুল নাচের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে তাঁরা শোনাচ্ছেন অন্য এক গল্প।

সেই গল্প অনন্যা নামে এক মেয়ের। দুর্নীতিগ্রস্ত নেতার স্ত্রী অনন্যা। ভোটে জেতার জন্য সেই নেতা সন্ত্রাস চালানো থেকে শুরু করে, টাকা ছড়ানো বা ভোটারদের নেশায় বুঁদ করিয়ে রাখা— কিছুতেই পিছ পা হন না। অনন্যা সব দেখে। তার কষ্ট হয়। কিন্তু কিছু করতে পারে না। একদিন হঠাৎ আসে সুযোগ। স্বামীর দলের থেকে অনন্যার কাছে প্রস্তাব আসে ভোটে দাঁড়ানোর। সে জানায়, ভোটে দাঁড়াতে রাজি। কিন্তু নিজে জিততে নয়, গণতন্ত্রকে জেতাতে। প্রচারে অনন্যা সবাইকে শুধু বলে, ‘‘কোনও প্রলোভনে পা দেবেন না। বিবেচনা করে ভোট দিন। নিজের ভোট নিজে দিন।’’ লড়াইয়ে জয় হয় অনন্যার। গণতন্ত্রও জিতে যায়।

‘সহজ পুতুল’ নামে একটি দল জেলা প্রশাসনের থেকে এই প্রচারের বরাত পেয়েছে। পালাটি লিখেছেন দলেরই সদস্য শুভ জোয়ারদার। নাম দিয়েছেন, ‘মানুষের অধিকার।’ দলে রয়েছেন বিশ্বরূপ ভট্টাটার্য, গোবিন্দ সাহানা, চন্দন হালদার, সুরজিৎ রুইদাস-সহ মোট ১৪ জন সদস্য। তাঁদের কেউ পেশায় মাশরুম বিক্রেতা, কেউ বা হকার। সবাই মিলে বাঁকুড়ার গ্রামে গঞ্জে ঘুরে ঘুরে পালা দেখান। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শালতোড়া, ওন্দা, রাইপুর, রানিবাঁধ-সহ জেলার মোট ২২টি ব্লকের ৪০টি এলাকায় এই পালা দেখানো হবে। তার মধ্যে ইন্দাসে ইতিমধ্যেই পালাটি দেখানো হয়ে গিয়েছে।

শুভবাবু জানান, এর আগেও প্রশাসনের বিভিন্ন সচেতনামূলক প্রচারের কাজ করেছেন তাঁরা। তবে এই নতুন দায়িত্ব কিছুটা অন্য রকমের। গণতন্ত্রের সার কথা সহজ করে বোঝানোর কাজটা মোটেও সহজ নয়। তাই তাঁরা এমন একটা গল্প বলেন, যাতে তত্বকথা থাকে না, জোর করে উপদেশও দেওয়া হয় না— টানটান গল্পে মজে মানুষ নিজেই বুঝে নেন ভাল-মন্দ। শুভবাবু বলেন, “কমিশন বিজ্ঞাপন দিয়ে দুর্নীতি মুক্ত ভোটের জন্য প্রচার করছে। কিন্তু বিজ্ঞাপনে যা বোঝানো যায় না, গল্পে তাই বোঝানো যায়।’’ পালাটি দেখে মানুষ সচেতন হবে বলে পালাকার ও কলাকুশলীদের বিশ্বাস।

জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসুও বলেন, ‘‘পুতুল নাচ দেখার জন্য মানুষের আগ্রহ থাকে। তাই গল্পের ছলে বার্তা দেওয়া সহজ হয়। সেই বার্তা সাধারণ মানুষ আরও ভাল ভাবে বুঝতেও পারেন। এই সমস্ত কথা মাথায় রেখেই পুতুল নাচের মাধ্যমে প্রচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’

অনেকে বলেন, আমজনতা রাজনীতির কারবারিদের হাতের পুতুল। সে কথা মিথ্যা প্রমাণ করতে মরিয়া ‘সহজ পুতুল’। কিন্তু থিয়েটারে লোকশিক্ষা কতটা হয় তা বুঝতে অপেক্ষা এখন নির্বাচনের দিনগুলির।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

vote selling
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE