Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Lord Shiva

অজয়ে বালি তুলতেই পরের পর শিবলিঙ্গ

হয় প্লাবিত হয়ে শিবলিঙ্গ অন্য কোথাও থেকে এসেছে অথবা প্রাচীন কোনও শিবমন্দির নদী গর্ভে তলিয়ে গিয়েছিল, সেটাই বহুকাল পরে উঠে এসেছে।

শিবলিঙ্গ নিয়ে থানার পথে পুলিশ।

শিবলিঙ্গ নিয়ে থানার পথে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র।

দয়াল সেনগুপ্ত 
খয়রাশোল শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০২১ ০৫:৪৭
Share: Save:

বালি খুঁড়তেই উঠে এল একের পর এক প্রাচীন প্রস্তর নির্মিত শিবলিঙ্গ। বৃহস্পতিবার বিকেলে অজয় নদের গর্ভ থেকে এমনই গোটা ছয়েক ছোট বড় শিবলিঙ্গ উদ্ধারকে ঘিরে শোরগোল পড়ে যায় পশ্চিম বর্ধমানের ফরিদপুর (লাউদোহা) থানা ও বীরভূমের খয়রাশোলের থানা এলাকার অজয় ঘেঁষা গ্রামগুলিতে।

করোনার প্রকোপ থেকে বাঁচাতে স্বয়ং বাবা শিব উঠে এসেছেন— এই বিশ্বাস থেকে প্রচুর মানুষ ছুটে আসেন। বালির চরেই শুরু হয়ে গিয়েছিল পুজোপাঠ। ভাবনা হচ্ছিল মন্দির প্রতিষ্ঠারও। শেষ পর্যন্ত ভৌগলিক অবস্থানগত ভাবে এলাকাটি খয়রাশোল থানার হওয়ায় সেখানকার পুলিশকর্মীরা উপস্থিত ভিড়কে বুঝিয়ে প্রত্নতাত্বিক নির্দশনগুলিকে থানায় নিয়ে আসেন। বীরভূমের পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী বলেন, ‘‘এখন ওই শিবলিঙ্গগুলি পুলিশের নিরাপদ হেফাজতে রয়েছে। কত দিনের প্রাচীন শিবলিঙ্গ, কী ভাবে নদী গর্ভে এল, তা খতিয়ে সংশ্লিষ্ট পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ দফতরকে (এএসআই) খবর দেওয়া হয়েছে।’’

স্থানীয় জানা গিয়েছে, নিয়মিত বালি তোলা চলছে অজয় নদে। সেভাবেই বালি তুলতে গিয়ে উঠে আসে পাথরের শিবলিঙ্গগুলি। অবস্থানগত ভাবে এলাকাটি খয়রাশোলের পারুলবোনা বেলতলাঘাট এবং চাপলা মৌজা হলেও মূর্তিগুলি আদতে মিলেছিল লাগোয়া ফরিদপুর (লাউদোহা) থানার নতুনডাঙা গ্রামের কাছকাছি। তাই খবরটা ছড়িয়ে পড়ে নতুনডাঙা, মাধাইপুর বনগাঁ পানসিউড়ি গ্রামগুলিতে। পরে খবর পান এ-পারের রসিদপুর, খরিকাডাঙাল, চাপলা রতনপুরের মতো একাধিক গ্রামের মানুষ।

শিবলিঙ্গ উদ্ধারের বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটে নাগাদ পায় খয়রাশোল থানা। থানা থেকে এএসআই উদয়ভানু সাহা সদলবলে পৌঁছন দেখেন, বালির উপরে রাখা ছোট বড় কালো পাথরের তৈরি বেশ কয়েকটি শিবলিঙ্গ। দু’টি ভগ্নপ্রায় মূর্তি এমনকি পুজোর ফুল বেলপাতা ফেলার জন্য পাথরের আধারও। তখন রীতিমতো পুজোপাঠ চলছে। পৌঁছে যায় লাউদোহার পুলিশও। জনতা দাবি করে, নদীর ধারেই মন্দির প্রতিষ্ঠা হোক। প্রত্নতাত্ত্বিক কিছু পাওয়া গেলে সেটা সরকারের হেফাজতে থাকবে, এ কথা বুঝিয়ে সন্ধ্যা নাগাদ সব কটি শিবলিঙ্গ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

লোক গবেষকদের প্রাথমিক ধারণা, হয় প্লাবিত হয়ে শিবলিঙ্গ অন্য কোথাও থেকে এসেছে অথবা প্রাচীন কোনও শিবমন্দির নদী গর্ভে তলিয়ে গিয়েছিল, সেটাই বহুকাল পরে উঠে এসেছে।

সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজের ইতিহাসের শিক্ষক তথা প্রয়াত লোকগবেষক অর্ণব মজুমদারের ছেলে পার্থশঙ্খ মজুমদার জানান, ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে বাংলা বিশেষ করে বীরভূম-সহ রাঢ়বঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে অসংখ্য শিব মন্দির নির্মাণ করে শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। ব্যাসাল্ট পাথরের তৈরি শিবলিঙ্গ হলেও মন্দিরগুলি ইটের তৈরি। হতে পারে নদী ঘেঁষা কোনও গ্রামের একটি বা একাধিক শিব মন্দির অতীতে প্লাবিত হয়ে নদী গর্ভে তলিয়ে গিয়েছিল।

বীরভূমের আর এক লোকগবেষক তথা শিক্ষক আদিত্য মুখোপাধ্যায় জানান, বৃহত্তর বীরভূম দুর্গাপুরের কাছে আড়রা গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। সেখানেও একই আদলের শিব মন্দির রয়েছে। আদিত্যবাবুর সংযোজন, ‘‘১২০২ খ্রিস্টাব্দে তুর্কি আক্রমণের পরে দ্রাবিড় ও অস্ট্রিয় গোষ্ঠীর মানুষ কৃষি দেবতা শিবের পুজো করত। তখনও আর্যদের ধ্রুপদ শিবের সঙ্গে ওই শিবের মেলবন্ধন ঘটেনি। রীতি ছিল, বছরে
নির্দিষ্ট সময় পুজো করার বাইরে বছর ভর শিবকে জলে ডুবিয়ে রাখা। হতে পারে কোনও কারণে জল থেকে তোলার সুযোগ হয়নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lord Shiva antique
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE