বেঙ্গালুরু যাওয়ার আর দরকার হল না ছোট্ট অনসূয়ার। চিকিৎসা পাওয়ার জন্য সরকারি হাসপাতালের দোরে দোরে ঘুরে তার আর তার অভিভাবকদের যে হেনস্থা হয়েছিল তার বিস্তারিত বিবরণ আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পরেই হঠাৎ সক্রিয় হয়ে উঠল স্বাস্থ্য দফতর। তড়িঘড়ি তাকে বাঙুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজি-তে ভর্তি করে চিকিৎসা করানো হল। কিন্তু স্বাস্থ্যভবনের একাংশেরই মত, অনসূয়ার ঘটনা আরেকবার প্রমাণ করে দিল, রাজ্যের সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার নাগাল পেতে সম্বলহীনদের কতটা নাজেহাল হতে হয়। মেয়েটির পরিবারের লোকেদের সখেদ মন্তব্য,‘‘ধরা-করার লোক না থাকলে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা পাওয়া হাতে আকাশের চাঁদ পাওয়ারই সামিল।’’
গত ২৩ মে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার সময় বীরভূমের লাভপুরের ভোগপুর গ্রামের অনসূয়া মণ্ডল (পূর্বাশা) নামে ওই ছাত্রীকে পিছন থেকে ধাক্কা মেরে এক মোটরবাইক আরোহী চম্পট দেয়। মাথায় ও শরীরে চোট লাগে অনসূয়ার। তাকে প্রথমে লাভপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, সেখান থেকে সিউড়ি সদর হাসপাতাল সেখান থেকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ এবং শেষ পর্যন্ত কলকাতার ‘বাঙুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজি’তে রেফার করা হয়। কিন্তু কেউ তার চিকিৎসার দায়িত্ব নিতে চায়নি বলে অভিযোগ। সব হাসপাতাল শুধু রেফার করে দায় এড়িয়েছে। দীর্ঘ সময় চিকিৎসা না পেয়ে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছিল অনসূয়া। মাঝখান থেকে মেয়েটির শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং তাকে নিয়ে জায়গায়-জায়গায় হন্যে হয়ে ঘুরতে গিয়ে প্রচুর টাকা খরচা হয়ে যায় আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা ওই পরিবারের। হেনস্থার একশেষ হয়ে আহত শিশুর বিধ্বস্ত অভিভাবকেরা তাই আর রাজ্যের সরকারি চিকিৎসা পরিকাঠামোর উপরে ভরসা রাখতে পারেননি। চাইল্ডলাইন ও লাভপুরের বিডিও জীবনকৃষ্ণ বিশ্বাস-এর সাহায্যে তাই তাঁরা অনসূয়াকে বেঙ্গালুরু নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানোর সিদ্ধান্ত নেন।
গত ১২ জুন আনন্দবাজারে খবরটি প্রকাশ পেতেই শোরগোল পড়ে যায় স্বাস্থ্য দফতরে। অনসূয়া ভিন রাজ্যে গেলে রাজ্যের মুখ পুড়বে বুঝতে পেরে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন দফতরের কর্তারা। বেঙ্গালুরু যাওয়ার জন্য কলকাতায় পৌঁছনোর পরের দিনই (১৩ জুন) তাকে বাঙুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজিকে ভর্তি করে নেওয়া হয়। সেখানেই টানা ৯ দিন চিকিৎসার পরে মেয়েটিকে সুস্থ করে ছুটি দেওয়া হয়েছে। লাভপুরের বাড়িতে ফিরেও এসেছে অনুসূয়া।
ভোগপুর গ্রামে তার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল সে দিব্যি হাঁটাচলা করছে। হাসিমুখেই বলল, ‘‘আগে খুব কষ্ট হচ্ছিল। কিচ্ছু ভাল লাগত না। এখন আর কোনও ব্যথা নেই। কয়েক দিন পর থেকেই স্কুল যেতে পারব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy