তারকা: বিষ্ণুপুর মেলার মঞ্চ মাতালেন অভিনেতা সায়ন্তিকা ও অঙ্কুশ। তাঁদের দেখতে মেলা চত্বরে ভিড় উপচে পড়ে। ভিড় সামাল দিতে পুলিশকে লাঠি চালাতে হয়। ছবি: শুভ্র মিত্র
শিল্প সামগ্রী চুরি
মেলার ৩০ বছরের ইতিহাসে যা হয় নি, এ বার তা হল।
বড়দিনের রাতে বিষ্ণুপুর মেলা চত্বর থেকে চুরি গেল কয়েক হাজার টাকার শিল্প সামগ্রী। মঙ্গলবার প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জমা পড়ল। কলকাতার বেহালা থেকে সুস্মিতা রায় চৌধুরি দু’লাখ টাকার বুটিকের সামগ্রী নিয়ে বিষ্ণুপুর মেলায় কারিগরের হাটে পসরা সাজিয়ে বসেছিলের প্রথম দিন থেকে।
তাঁর অভিযোগ, মঙ্গলবার দুপুরে স্টলে এসে দেখেন, প্রায় আশি হাজার টাকার শাড়ি, কুর্তা-সহ বুটিকের নানা সামগ্রী বোঝাই বড় ব্যাগটি উধাও। কলকাতার মানিকতলা থেকে ঘর সাজানোর পসরা নিয়ে এসেছিলেন মালা চন্দ্র। বসেছিলেন ৩৭ নম্বর স্টলে। তাঁরও প্রায় দশ হাজার টাকার সামগ্রী চুরি গিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
দু’জনেই বলেন, ‘‘বাঁকুড়া জেলা শিল্প কেন্দ্রের অনুমতি নিয়ে আবেদন করে প্রথম বার অনেক আশা নিয়ে বিষ্ণুপুর মেলায় এসেছিলাম। কিছু লোকজনের আচরণ ভাল নয়। শুনেছিলাম শিল্পীদেরই মেলা। কিন্তু ভাল অভিজ্ঞতা হল না। অন্য শিল্পীদেরও সামগ্রী নিয়ে আসতে বারণ করব।’’ মুখ্যমন্ত্রীকেও তাঁরা ঘটনাটি জানাবেন বলেছেন।
ঘটনাচক্রে বাঁকুড়া জেলা শিল্প কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার সমীরকুমার পান্ডা এ দিন মেলায় এসেছিলেন। সব শুনে তিনি বলেন, ‘‘দুঃখজনক ঘটনা। রাজ্যের ১১টি জেলা থেকে ৬০ জন শিল্পী বালুচরী, শাঁখ, পাট, কাথা স্টিচ, মধু, উল, নারকেল মালা, চামড়ার জিনিস নিয়ে এসেছেন। চারটি শিল্প প্রদর্শনী ক্ষেত্র রয়েছে। কোনও বার স্টল থেকে শিল্প সামগ্রী চুরি যায়নি। পুলিশ দেখছে। আমরাও দেখছি।’’
এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) সুকোমলকান্তি দাস বলেন, ‘‘মেলায় প্রচুর সিভিক ভলান্টিয়ার, ড্রোন ও সি সি ক্যামেরা রয়েছে। তবু খোলা মেলা। শিল্পীদের আরও সচেতনতার প্রয়োজন। ফাঁকা স্টলে ত্রিপল ঢাকা দিয়ে চলে যাওয়া ঠিক নয়। তবে অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছি।’’
ভগিনী নিবেদিতা
এ বার বিষ্ণুপুর মেলা উৎসর্গ করা হয়েছে ভগিনী নিবেদিতার জন্ম সার্ধশতবর্ষকে মাথায় রেখে। রবিবার রাতে রামানন্দ মঞ্চে বিষ্ণুপুরের সুভাষ নাট্য সংস্থা মঞ্চস্থ করল শ্রুতিনাটক ‘ভগিনী’। প্রযোজনা সংস্থার সম্পাদক দুর্গাদাস মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নিবেদিতার জীবনের বিভিন্ন অংশ যোগ করে আমরা একটা শ্রুতিনাটক করেছি। নতুন প্রজন্ম যাতে সহজ ভাবে নিবেদিতাকে বুঝতে পারে, সেই চেষ্টাই করেছি।’’ পঞ্চাশ মিনিটের এই শ্রুতিনাটকে দর্শকের উপস্থিতি অবশ্য ভালই ছিল।
অন্য দিকে, রামানন্দ মঞ্চের কাছেই বিষ্ণুপুর মেলা কমিটির ৮ নম্বর স্টলে বিবেকানন্দ স্টাডি সার্কেলের পক্ষ থেকে ভগিনী নিবেদিতার জীবনের নানা ছবি দিয়ে প্রদর্শনী সাজানো হয়েছে। রাখা হয়েছে নিবেদিতার জীবনের নানা দিক নিয়ে স্বল্প মূল্যের বই। সংস্থার পক্ষে নিমাই মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ভগিনী নিবেদিতাকে জানার আগ্রহ সাধারণ মানুষের প্রবল। মেলার প্রথম তিন দিনে প্রায় পাঁচ হাজার টাকার স্বল্পমূল্যের সাতশো বই বিক্রি হয়েছে।’’ তবে মেলায় ঘুরতে আসা বহু মানুষেরই আক্ষেপ, থিম প্যাভিলিয়নের সামনে একটি বড় পোস্টার ছাড়া অন্য কোথাও সে ভাবে নিবেদতার ছবি নেই।
পিঠে লাঠি
কনকনে ঠান্ডা। হাড়ে যেন কাঁপুনি শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে পিঠে এসে পড়ল পুলিশের লাঠি। যদুভট্ট মঞ্চে টলিউডের অভিনেতা অঙ্কুশ আর সায়ন্তিকাকে দেখতে উপচে পড়া ভিড় সামাল দিতে বড়দিনের রাতে কঠোর হতে হল পুলিশকে।
এক পুলিশ কর্তা বলেন, ‘‘মঞ্চের কাছে যাওয়ার জন্য ঢেউের মতো আছড়ে পরছিলেন দর্শকেরা। সামনে বসেছিলেন মহিলা আর বাচ্চারা। তাই বিপদ বুঝে দর্শকদের সরাতে হয়েছে। লাঠি চালানো হয়নি।’’ যদিও ঠান্ডায় লাঠির ঘায়ের ব্যথা মঙ্গলবার সকালেও মালুম হয়েছে অনেকের। তাঁরা বলছেন, ‘‘তারকা কাছে এলে ছ্যাঁকা তো লাগবেই!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy