Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

পুরুলিয়ায় বিজেপি কর্মীর বাড়িতে হামলা

পুরভোট যত এগিয়ে আসছে, ততই জেলায় জেলায় রাজনৈতিক অশান্তি বাড়ছে। আপাত-শান্ত পুরুলিয়াও সেই অশান্তির আঁচ পাচ্ছে। পুরুলিয়া শহরের মহুলঘুটা এলাকায় শনিবার রাতে এক বিজেপি কর্মীর বাড়িতে চড়াও হয়ে হামলার অভিযোগ উঠল কিছু তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে। হামলায় আহত হয়েছেন ওই বিজেপি কর্মীর বাবা-সহ তিন জন। তাঁদের পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। আহতদের মধ্যে আছে এক কিশোরও। সে হামলার মাঝে পড়ে গিয়েছিল। হামলাকারীরা মেরে তার হাত ভেঙে দেয় বলে অভিযোগ। গণ্ডগোল থামতে গিয়ে মার খেয়ে জখম হয়েছেন ওই বিজেপি কর্মীর পড়শিও।

গণ্ডগোলের মাঝে পড়ে হাত ভেঙেছে এই কিশোরের। —নিজস্ব চিত্র।

গণ্ডগোলের মাঝে পড়ে হাত ভেঙেছে এই কিশোরের। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৩৮
Share: Save:

পুরভোট যত এগিয়ে আসছে, ততই জেলায় জেলায় রাজনৈতিক অশান্তি বাড়ছে। আপাত-শান্ত পুরুলিয়াও সেই অশান্তির আঁচ পাচ্ছে।

পুরুলিয়া শহরের মহুলঘুটা এলাকায় শনিবার রাতে এক বিজেপি কর্মীর বাড়িতে চড়াও হয়ে হামলার অভিযোগ উঠল কিছু তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে। হামলায় আহত হয়েছেন ওই বিজেপি কর্মীর বাবা-সহ তিন জন। তাঁদের পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। আহতদের মধ্যে আছে এক কিশোরও। সে হামলার মাঝে পড়ে গিয়েছিল। হামলাকারীরা মেরে তার হাত ভেঙে দেয় বলে অভিযোগ। গণ্ডগোল থামতে গিয়ে মার খেয়ে জখম হয়েছেন ওই বিজেপি কর্মীর পড়শিও। ঘটনার পরে তৃণমূলের পক্ষ থেকেও বিজেপি-র বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ আনা হয়েছে। দু’পক্ষই পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছে। ঘটনার পরে রবিবার তাঁদের কর্মীদের নিরাপত্তার দাবিতে ও ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে বিজেপি কর্মীরা পুরুলিয়া সদর থানার সামনে বিক্ষোভ দেখান। বিজেপি-র পুরুলিয়া পুরসভার পর্যবেক্ষক রাজীব মাহাতো বলেন, ‘আমাদের তিন জন তৃণমূল কর্মীদের হাতে মার খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি। পুলিশকে অবিলম্বে হামলাকারীদের ধরতে হবে। পাশাপাশি আমরা শহরের ২৩টি ওয়ার্ডেই আমাদের কর্মীদের নিরাপত্তা দাবি করেছি।’’

মহুলঘাটা এলাকাটি পুরুলিয়া পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়ে। স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, গত ৩০ মার্চ দেওয়াল লিখনকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় তৃণমূল-বিজেপির মধ্যে একটি ছোটখাটো ঝামেলা হয়েছিল। তৃণমূলের অভিযোগ ছিল, তাদের দখল করা দেওয়ালে বিজেপি প্রথমে তাদের প্রার্থীর সমর্থনে প্রচার লিখন করেছিল। তার পর তৃণমূলও ওই দেওয়ালে তাঁদের প্রচার লিখন করে। এই বিষয়টিকে ঘিরে করে এলাকায় উত্তেজনা ছিলই। শনিবার রাতে মহুলঘাটার যে বিজেপি কর্মীর বাড়িতে হামলা হয়েছে, সেই চন্দন দাসের দাবি, মূলত দেওয়াল লেখাকে ঘিরে হওয়া ওই গণ্ডগোলের জেরেই তাঁর বাড়িতে হামলা হয়েছে। এবং তাঁকে না পেয়ে তাঁর বাবাকে মারধর করা হয়েছে। চন্দন নিজে আরএসএস প্রভাবিত ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের (এবিভিপি) জগন্নাথ কিশোর কলেজের ইউনিট সভাপতি। তিনি বলেন, ‘‘একটা কারখানার বড় দেওয়াল রয়েছে। সেখানে সব দলই দেওয়াল লিখছে। তৃণমূল, সিপিএম করেছে। আমরাও লিখছিলাম। কিন্তু তৃণমূলের কর্মীরা বলল, এখানে লেখা যাবে না। আমরা ওঁদের জানাই, সিপিএমও জায়গা ‘বুক’ করে রেখেছে। কিন্তু ওরা কিছু শুনল না। তখন আমরা ঝামেলা এড়াতে আমাদের লিখন মুছে দিই। যদিও আমরা তৃণমূলের ‘বুক’ করা জায়গায় লিখছিলাম না। সেদিনের মতো বিষয়টা মিটেও যায়।’’

চন্দনের আরও অভিযোগ, তিনি কলেজে ছাত্র সংসদ নিবর্চনের সময় এবিভিপি-র হয়ে কাজ করেছিলেন। তখনই তাঁকে ওই সংগঠন ছেড়ে দেওয়ার জন্য তাঁকে হুমকিও দেয় তৃণমূল। কলেজ ভোট মিটে গেলে অবশ্য সব চুপচাপ হয়ে যায়। চন্দনের অভিযোগ, ‘‘পুরভোটে আমাদের এলাকার প্রার্থী আশা বাউরির হয়ে আমি প্রচার শুরু করতেই ফের আমাকে হুমকি দিতে শুরু করে তৃণমূলের লোকজন। শনিবার সকালের দিকেই আমি খবর পাই যে, আমাকে পেটানোর ছক কষেছে তৃণমূল। সে কথা আমি আমাদের নেতৃত্বকে জানাইও।’’

এর পরেই শনিবার রাত ১০টা নাগাদ তাঁর বাড়িতে হামলা হয়। চন্দনের বাবা কাপড়ের দোকানে কাজ করেন। চন্দনের দাবি, ‘‘দোকান বন্ধ হওয়ার পরে বারা শনিবার রাতে সবে বাড়িতে ফিরেছিলেন। তখনই তৃণমূলের লোকেরা চড়াও হয়ে বাবাকে আক্রমণ করে। আমি সে সময় বাড়িতে ছিলাম না বলে বেঁচে যাই।’’ পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের মেল সার্জিক্যাল ওয়ার্ডের বেডে শুয়ে চন্দনের বাবা দিলীপ দাস রবিবার বলেন, ‘‘আমার অপরাধ একটাই যে, আমার ছেলে বিজেপি করে! বাড়িতে ঢুকতে যাচ্ছি, এমন সময় আমাকে মারধর করল। হুমকি দিল, বিজেপি-র সঙ্গে সম্পর্ক রাখা যাবে না। গণ্ডগোল শুনে আমার স্ত্রী বেরিয়ে এলে তাঁকেও টানাহ্যাঁচড়া করা হয়।’’

এই ওয়ার্ডেই ভর্তি রয়েছেন দিলীপবাবুর পড়শি আস্তিক বাউরি। শনিবার ঝামেলা দেখে তিনিও ছুটে এসেছিলেন। বললেন, ‘‘আমি জিজ্ঞাসা করি, মারামরি করছ কেন। তখন আমাকেও ঘুষি মারা হয়।’’ দিলীপবাবুর বাঁ কানের পাশে ও আস্তিকবাবুর মুখে চোট রয়েছে। শনিবারই এলাকায় মহাবীর জয়ন্তী উপলক্ষে শোভাযাত্রা বেরিয়েছিল। অমৃত কর্মকার নামে বছর পনেরা-ষোলোর এক কিশোর শোভাযাত্রা সেরে বাড়ি ফিরছিল ওই রাস্তা দিয়েই। তখন চন্দনের বাড়ির সামনে গণ্ডগোল চলছে। সে আস্তিকবাবুর কাছে জানতে চায় কী হয়েছে। অমৃতের কথায়, ‘‘তখনই কিছু লোক আমাকে লাঠি দিয়ে খুব জোরে বাঁ হাতে মারল। হাত ভেঙে গিয়েছে।’’ রাতেই তিন জনকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।

তৃণমূল অবশ্য সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বিজেপি-র বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করেছে। এলাকারই এক তৃণমূল কর্মী বিমল দাস বিজেপি-র বিরুদ্ধে তাঁর দাবি, ‘‘আমরা মহাবীর জয়ন্তীর শোভাযাত্রা সেরে প্রসাদ নিয়ে বাড়ি ফিরে ফিরছিলাম। তখন বিজেপির লোকজন আমাদের গালিগালাজ করে। আমি প্রতিবাদ করলে ওরা আমাদের মারধর করে।’’ তাঁর মাকেও শারীরিক ভাবে নিগ্রহ করা হয় বলে বিমলবাবুর অভিযোগ। ১১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী মৌসুমী দত্তর স্বামী সোমনাথের দাবি, ‘‘বিজেপি পুরোপুরি মিথ্যে অপপ্রচার করছে আমাদের নামে। এখানে আমরাই জিতব জেনে গিয়েছে ওরা। কেন না মানুষ আমাদের দিকেই। তাই এখন অপপ্রচারের কৌশল নিয়েছে। নিজেরাই ঝামেলা করে আমাদের নামে চালাতে চাইছে। এলাকার মানুষ সবই জানেন।’’ জেলা তৃণমূল নেতা নবেন্দু মাহালি বলেন, ‘‘পুরুলিয়া খুবই শান্ত জায়গা। এখানে শান্তিতে নির্বাচন হয়। আমাদের দেওয়ালে লিখে বিজেপি-ই ওখানে ঝামেলা বাধাচ্ছে। আমরা পুরুলিয়ার সুনাম অক্ষুন্ন রেখেই চলতে চাই।’’ যা শুনে এবিভিপির চন্দনের বক্তব্য, ‘‘দেওয়াল লিখনের বিষয়টিকে সামনে এনে তৃণমূল আসলে হামলা থেকে অন্য দিকে নজর ঘোরাতে চাইছে। বিরোধীদের ওরা প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছে।’’

দু’পক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে দু’টি পৃথক মামলা রুজু করেছে পুলিশ। এলাকায় উত্তেজনা থাকায় পুলিশও টহল দিচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE