Advertisement
১৮ মে ২০২৪

হাতে ছেলের বিয়ের কার্ড, লক্ষ্মীকে তবু ফেরাল ব্যাঙ্ক

বিয়ের বেশি দেরি নেই। খরচ বিস্তর, কিন্তু হাত ফাঁকা। অচল নোটে তো আর বিয়ের খরচ মিটবে না! তাই কার্ড নিয়ে ব্যাঙ্কে গেলে বর-কনে দু’পক্ষ মোট আড়াই লক্ষ টাকা পাবে বলে কেন্দ্র নির্দেশ দেওয়ায় হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলেন ওন্দার বালিয়াড়ার দম্পতি বেজু মাঝি ও লক্ষ্মী মাঝি। কিন্তু কপাল মন্দ। শনিবার ব্যাঙ্কে গিয়ে শুনতে হল, টাকা নেই। অগত্যা ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের কাছ থেকে মুচলেকা আদায় করিয়ে তাঁরা বাড়ি ফিরলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ওন্দা শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৬ ০১:২৫
Share: Save:

বিয়ের বেশি দেরি নেই। খরচ বিস্তর, কিন্তু হাত ফাঁকা। অচল নোটে তো আর বিয়ের খরচ মিটবে না! তাই কার্ড নিয়ে ব্যাঙ্কে গেলে বর-কনে দু’পক্ষ মোট আড়াই লক্ষ টাকা পাবে বলে কেন্দ্র নির্দেশ দেওয়ায় হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলেন ওন্দার বালিয়াড়ার দম্পতি বেজু মাঝি ও লক্ষ্মী মাঝি। কিন্তু কপাল মন্দ। শনিবার ব্যাঙ্কে গিয়ে শুনতে হল, টাকা নেই। অগত্যা ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের কাছ থেকে মুচলেকা আদায় করিয়ে তাঁরা বাড়ি ফিরলেন।

সাধারণের জন্য ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তোলায় ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দিয়েছে কেন্দ্র। তবে বিয়ে বাড়ির ক্ষেত্রে প্রমাণ সাপেক্ষে ঊর্ধ্বসীমা দু’পক্ষের জন্য মোট আড়াই লক্ষ টাকা স্থির করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরেও দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে অনেককে।

এ দিন ওন্দার বালিয়াড়া এলাকার একট রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে ছেলের বিয়ের কার্ড হাতে নিয়ে এক লক্ষ টাকা তুলতে গিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা লক্ষ্মী মাঝি। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ তাঁকে টাকা দিতে পারেননি। তিনিও হাল ছাড়তে নারাজ। ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের সঙ্গে তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। সঙ্গে তিনি স্বামী ও কয়েকজন পড়শিকেও নিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁরা বিয়ের খরচ জোগাড়ের জন্য অনুনয় শুরু করেন। কেউ কেউ চাপও দেন। পীড়াপিড়ি চলতে থাকায় শেষে ব্যাঙ্ক ম্যানেজার তাঁদের মুচলেখা লিখে দিয়ে জানান, টাকা দিতে পারছেন না। কারণ হাতে অত টাকা নেই।

সে প্রসঙ্গ তুলে ওই ব্যাঙ্কের ম্যানেজার শান্তনু বসু বলেন, “ব্যাঙ্কে চালু নোট বেশি নেই। যে পরিমাণ টাকা আসছে, এই শাখায় গ্রাহকদের দিতে দিতে তা কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। টাকার জোগান বেশি না হলে আমি টাকা দেব কোথা থেকে?’’ প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।

লক্ষ্মীদেবীর স্বামী বেজুবাবু এলাকায় মুরগি মাংস বিক্রি করে সংসার চালান। তাঁর ছেলে তাপস মাঝি সেনা বাহিনীর কর্মী। কাল সোমবার তাপসের বিয়ে ঠিক হয়েছে রোড চন্দ্রকোনার এক পাত্রীর সঙ্গে। তবে হাতে নগদ টাকার জোগান না থাকায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। বেজুবাবু বলেন, “গত কয়েক দিন ধরে দফায় দফায় লাইন দিয়ে ব্যাঙ্ক থেকে কিছু টাকা তুলেছিলাম। কিন্তু সেই টাকা ফুরিয়ে গিয়েছে। বিয়ে বাড়ির জন্য অনেক টাকা লাগবে। তাই টিভিতে বিয়েবাড়ির জন্য একলপ্তে অনেক টাকা তোলা যাচ্ছে জেনে খুব আশা নিয়ে ব্যাঙ্কে গিয়েছিলাম। হতাশ হয়ে ফিরতে হবে ভাবিনি।’’ তিনি জানান, বাজার থেকে ইতিমধ্যেই মোটা অঙ্কের টাকা ধার করে ফেলেছেন বিয়ে বাড়ির জন্য। এর বাইরে এখনও অনেক খরচ বাকি। তিনি বলেন, “ব্যাঙ্ক ম্যানেজার সোমবার দেখা করতে বলেছেন। ওই দিন যে টাকা পাওয়া যাবে, সেই অনুযায়ী অনুষ্ঠান সারতে হবে।”

একই সমস্যায় পড়েছেন ওন্দার কালীসেনের বাসিন্দা গোপাল সিদ্ধার্থ। বেসরকারি সংস্থার কর্মী গোপালবাবুরও সোমবারই বিয়ে। হাতে খুচরো টাকা বিশেষ না থাকায় তিনিও বিপাকে পড়েছেন। কেন্দ্রের নির্দেশ শুনে তিনি আশা নিয়ে বিয়ের কার্ড হাতে এ দিন এলাকার এক ব্যাঙ্কে গিয়েছিলেন। তাঁরও একই অবস্থা হয়। তাঁকেও খালি হাতে ব্যাঙ্ক থেকে ফিরতে হয়েছে।

গোপালবাবু বলেন, ‘‘চেক কেটে কোনওরকমে কিছু গয়না কিনেছি। তবে সব খরচ তো চেকে দেওয়া সম্ভব নয়। ডেকোরেটর্স থেকে সব্জিওয়ালা থেকে মুদিখানার দোকান সবাই নগদ টাকা চাইছে। নিরুপায় হয়ে ধারেই কিছু কেনাকাটা করেছি। বন্ধুবান্ধব-পড়শিদের থেকে খুচরো টাকা ধারও করতে হচ্ছে। কিন্তু তাতেও সব কুলোচ্ছে না। কী করে অনুষ্ঠানটা নির্বিঘ্নে সারব ভেবে পাচ্ছি না।’’

এই পরিস্থিতিতে অনেকেই বিয়ের দিন পিছিয়ে দিচ্ছেন। কেউ কেউ আবার বাজেটে কাটছাঁট করছেন। বিষ্ণুপুরের একটি ডেকোরেটর্সের মালিক ধনঞ্জয় নন্দী বলেন, ‘‘অগ্রহায়ণ মাসের শুরুতে বেশ কয়েকটি বিয়ে বাড়ির প্যান্ডেল বাঁধার বরাত পেয়েছিলাম। কয়েকজন বিয়ের দিন পিছিয়ে দিয়েছেন। যাঁরা বিয়ে বাড়ি করছেন, বেশির ভাগই জানাচ্ছেন, বিয়ের পরে পুরো টাকা দেবেন। আমরাও বেশ বিপাকে পড়ে গেলাম।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

marriage ceremonies
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE