সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নদিয়া বা মালদহের তুলনায় বাঁকুড়ার পদ্ম তাঁদের অনেক লাভজনক মনে হয়েছে। তাঁরা জানান, ওই দুই জেলায় মূলত শ্বেত পদ্মের চাষ হয়। বাঁকুড়ায় বেশি চাষ হয় গোলাপি পদ্মের। বাজারে সেটির চাহিদাই বেশি। মৃণালবাবু জানান, শ্বেত পদ্মের পাপড়ি চট করে ঝরে গেলেও গোলাপি পদ্মের পাপড়ি ঝরে কম। ফলে রফতানির সময় পরিবহণে সুবিধা হয়। তিনি বলেন, ‘‘বিদেশের বাজারে গোলাপি পদ্মের চাহিদা সারা বছরই থাকে। শুধু পুজোর মরসুম নয়, আমরা ঠিক করেছি বছরের অন্য সময়েও বাঁকুড়া থেকে পদ্ম কিনব।’’
বাঁকুড়ায় এখন খোলা বাজারে পদ্ম বিক্রি হচ্ছে কমবেশি চার টাকা দরে। তার জন্য চাষিরা পাইকারি বাজারে দাম পাচ্ছেন মেরেকেটে আড়াই টাকা। উদ্যানপালন দফতর সূত্রে দাবি করা হয়েছে, ফুল রফতানিকারী ওই সংস্থাটি বাজার দরের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি দাম দিয়েই পদ্ম কিনে নেবে বলে তাঁদের জানিয়েছে। সংস্থার সঙ্গে চাষিদের যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রেও সক্রিয় হয়েছে দফতর।
ওন্দার রামপদ দাস নিজের এলাকায় বিভিন্ন গ্রামে আটটি পুকুর লিজ নিয়ে পদ্ম চাষ করছেন। ইন্দাসের পদ্মচাষি রামিজ রহমানও লিজ নিয়েছেন ১০টি পুকুর। রফতানি সংস্থার সঙ্গে তাঁদের ইতিমধ্যেই চুক্তি হয়ে গিয়েছে। তাঁরা জানান, গত বছর পুজোর মরসুমে পাইকারি বাজারে পদ্মের দাম উঠেছিল সর্বোচ্চ পাঁচ টাকা। এ বারে অনেকটাই বেশি দাম পাবেন বলে আশা করছেন তাঁরা। রামপদবাবু বলেন, “জেলায় পদ্মের চাহিদা থাকে কেবল দুর্গাপুজোর সময়। তাও চাষিরা তেমন দাম পায় না। ফলে পদ্মচাষ এত দিন খুব বেশি করতাম না। এ বার ভাবছি বাড়াব।’’ রামিজ রহমানের কথায়, “সারা বছর বিক্রির সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় আমরা চাষে নতুন দিশা খুঁজে পেয়েছি।’’
উদ্যানপালন দফতর জানিয়েছে, বাঁকুড়া জেলায় পদ্মচাষের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও চাহিদার অভাবে চাষ খুব একটা হয় না। জেলায় ঠিক কতটা এলাকা জুড়ে পদ্ম চাষ হয় তার কোনও তথ্য নেই দফতরের কাছে। তবে রফতানি সংস্থা এগিয়ে আসায় বাণিজ্যিক পদ্ম চাষ বাড়বে বলে দফতরের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক মলয় মাজি আশাবাদী। রাজ্য উদ্যানপালন দফতরের উপদেষ্টা শুভাশিস বটব্যাল বলেন, “বিকল্প চাষ হিসাবে এই জেলায় পদ্মের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা চাষিদের উৎসাহিত করার চেষ্টা করব।’’