Advertisement
০৫ মে ২০২৪
রাজ্যে মেয়েদের মধ্যে প্রথম রানিবাঁধের অণিমা

ফের দশে দশ

রাজ্যের মধ্যে পঞ্চম স্থানে রয়েছেন জেলার তিন জন—ওন্দা হাইস্কুলের ছাত্র বিশাল গঙ্গোপাধ্যায়, জেলার জঙ্গলমহলের রানিবাঁধ হাইস্কুলের ছাত্রী অণিমা গড়াই এবং বিষ্ণুপুর হাইস্কুলের সুতনয় ভট্টাচার্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৮ ০০:৫৭
Share: Save:

উচ্চ মাধ্যমিকের মেধা তালিকাতেও নিজের দখল ধরে রাখল বাঁকুড়া। রাজ্যে মেয়েদের মধ্যে যুগ্ম ভাবে প্রথম হলেন জেলার জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত হলুদকানালি ঘাগরা এলাকার কলা বিভাগের ছাত্রী অণিমা গড়াই। এ বারের মাধ্যমিকের মতো উচ্চ মাধ্যমিকেও প্রথম দশ জনের মধ্যে রয়েছেন বাঁকুড়ার দশ জন। ফলের নিরিখে শহরে ছাপিয়ে গিয়েছে গ্রামাঞ্চল।

৪-এ এক

এ বারের উচ্চমাধ্যমিকে রাজ্যের মধ্যে চতূর্থ হয়েছেন বাঁকুড়ার মধুবন গোয়েঙ্কা বিদ্যালয়ের ছাত্র অন্বয় চট্টোপাধ্যায়। তিনি পয়েছেন ৪৮৭। বাঁকুড়া শহরের কেন্দুয়াডিহির বাসিন্দা অন্বয় ইঞ্জিনিয়ার হতে চান। ইঞ্জিনিয়ারিং-এর সর্বভারতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষায় তাঁর র‌্যাঙ্ক হয়েছে ২১৭২। রাজ্যের প্রবেশিকা পরীক্ষায় ২১৩। অন্বয় বলেন, “আমার বাবা সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। বাবাকে দেখেই উদ্বুদ্ধ হয়েছি।” পড়াশোনার ফাঁকে ক্রিকেট খেলা ও গল্পের বই পড়া অন্বয়ের শখ। উচ্চমাধ্যমিকে প্রতিটি বিষয়ের জন্য আলাদা ভাবে টিউশন ছিল তাঁর। বাড়িতে রোজ পড়তেন ছ’-আট ঘণ্টা।

৫-এ তিন

রাজ্যের মধ্যে পঞ্চম স্থানে রয়েছেন জেলার তিন জন—ওন্দা হাইস্কুলের ছাত্র বিশাল গঙ্গোপাধ্যায়, জেলার জঙ্গলমহলের রানিবাঁধ হাইস্কুলের ছাত্রী অণিমা গড়াই এবং বিষ্ণুপুর হাইস্কুলের সুতনয় ভট্টাচার্য। তিন জনেই পেয়েছেন ৪৮৬।

বিশাল ২০১৬ সালের মাধ্যমিকেও রাজ্যের মেধা তালিকার পঞ্চম স্থানে ছিলেন। চান চিকিৎসক হতে। নিট-এ বিশালের র‌্যাঙ্ক ১৭৮৩। ওন্দার কুমারডাঙা এলাকার বাসিন্দা এই কৃতী ছাত্র বলেন, “পড়াশোনা করাটা আমার নেশার মতো। যখনই ভাল লাগে তখনই পড়তে বসি। মাধ্যমিকে ভাল ফল করেছিলাম। তাই উচ্চমাধ্যমিকেও নিজেকে প্রমাণ করার একটা তাগিদ ছিল।”

রানিবাঁধ উচ্চবিদ্যালয় থেকে রাজ্যের মেধা তালিকায় উঠে এসে গোটা জেলাকে চমক দিয়েছেন ওই ব্লকের প্রত্যন্ত হলুদকানালি ঘাগরা এলাকার ছাত্রী অণিমা।

বাড়িতে টিভি নেই। সাফল্যের খবরটা বাইরের লোকজনের থেকে শুনেই প্রথম জানতে পারেন অণিমা। তাঁর প্রিয় বিষয় ভূগোল। চান শিক্ষিকা হতে। কলা বিভাগের কৃতী ছাত্রীটির উচ্চ মাধ্যমিকে বিষয় ছিল ভূগোল, দর্শন ও সংস্কৃত। বাবা মধুসূদন গ়ড়াই জানান, পারিবারিক বিঘা চারেক জমিতে চাষ করে সংসার চলে। গ্রামেই বিক্রি করেন আনাজ। অণিমার মা লক্ষ্মী গ়ড়াই গৃহবধূ।

টেস্ট পরীক্ষায় রেজাল্ট প্রত্যাশা মতো হয়নি। জেদ করে পড়ার সময় আরও বাড়িয়ে দিয়েছিলেন অণিমা। টিউশন ছিল ভূগোল, ইংরেজি ও দর্শনে। অন্য বিষয়গুলি মূলত নিজেএই পড়তেন। কোথাও বুঝতে অসুবিধে হলে সাহায্য করতেন স্কুলের শিক্ষকেরা। অণিমা বলেন, “নব্বই শতাংশের বেশি নম্বর পাব নিশ্চিত ছিলাম। কিন্তু প্রথম দশে উঠে আসব, টিভিতেও আমার নাম বলবে— সেটা ভাবিনি।”

অঙ্ক বরাবর প্রিয় সুতনয়ের। ভবিষ্যতে অঙ্কের গবেষণা করতে চান। কৃতী ছাত্রটির বাবা তাপস ভট্টাচার্য পশু চিকিৎসক। বাড়ি বিষ্ণুপুরের ঝাপড় মোড়ে। জানালেন, অঙ্কের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ব্রাজিল এবং হংকং থেকে পুরস্কার এনেছে ছেলে। এখন প্রস্তুতি চলছে রোমানিয়ায় আর একটি প্রতিযোগিতায় যোগ দেওয়ার। সুতনয় বলেন, ‘‘অবসর সময়ে আগাথা ক্রিস্টি আর সত্যজিৎ রায়ের লেখা আমার সঙ্গী। ব্যাডমিন্টন খেলা ভাল লাগে। তবে পড়ার চাপে সেটা বন্ধ ছিল।’’

৬-এ এক

রাজ্যের মধ্যে সপ্তম স্থানে রয়েছেন বিষ্ণুপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের কলা বিভাগের ছাত্র নীলমাধব দত্ত। পেয়েছেন ৪৮৫। বিষ্ণুপুরের কৈলাসতলার বাসিন্দা নীলমাধব। বাবা শ্যামাপদ দত্ত পোশাক-ব্যবসায়ী। ইংরেজি প্রিয় বিষয় এই কৃতী ছাত্রের। ভবিষ্যতে আমলা হতে চান। জানালেন, সেই প্রস্তুতি এখনই শুরু করে দিয়েছেন।

৭-এ এক

জঙ্গলমহলের সারেঙ্গা মহাত্মাজি স্মৃতি বিদ্যাপীঠের ছাত্র অংশুমান বন্দ্যোপাধ্যায় ৪৮৪ নম্বর পেয়ে উচ্চমাধ্যমিকে সম্ভাব্য সপ্তম হয়েছেন। ভবিষ্যতে চিকিৎসক হতে চান তিনি।

৮-এ দুই

৪৮৩ নম্বর পেয়ে রাজ্যের মধ্যে সম্ভাব্য অষ্টম হয়েছেন দু’জন—বাঁকুড়া বঙ্গবিদ্যালয়ের ছাত্র রৌনক পাত্র এবং ওন্দা ব্লকের রামসাগর উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র কৃষ্ণেন্দু কুণ্ডু। দু’জনেই বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র।

রৌনক বলেন, “ছোট থেকেই যন্ত্রের প্রতি আমার বিশেষ আকর্ষণ। ইঞ্জিনিয়ার হওয়াই আমার স্বপ্ন।” আর কৃষ্ণেন্দুর ইচ্ছা পদার্থবিদ্যার গবেষক হওয়ার।

১০-এ ২

রাজ্যের দশম স্থানে রয়েছেন জেলার দু’জন— সিমলাপাল মদনমোহন উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র তন্ময় পতি এবং বিষ্ণুপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সমীধ ঘোষ। সিমলাপালের আটগদা গ্রামের বাসিন্দা তন্ময়ও চান ডাক্তার হতে।

আর বিষ্ণুপুরের দক্ষিণ বৈলাপাড়ার বাসিন্দা, ক্রিকেট-ভক্ত সমীধের ইচ্ছা ভবিষ্যতে রসায়নের অধ্যাপক হওয়ার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE