প্রতীকী ছবি। —ফাইল চিত্র
করোনা সংক্রমণ ক্রমশ বেড়ে চলায় উদ্বেগ ছড়িয়েছে বাঁকুড়া জেলায়। সোমবার দুপুর পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার কোভিড হাসপাতাল ওন্দা সুপার স্পেশালিটিতে তিন জন করোনা আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে। সূত্রের খবর, হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। ইতিমধ্যেই ওই হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের আটটি শয্যা ভর্তি হয়ে গিয়েছে। ৩৪টি এইচডিইউ-এর অধিকাংশ ভর্তি।
বাঁকুড়া স্বাস্থ্য জেলার মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক শ্যামল সরেন বলেন, “তিন জন করোনা আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে। জেলার সংক্রমণের পরিস্থিতির সার্বিক রিপোর্ট রাজ্যকে পাঠানো হচ্ছে।” সূত্রের খবর, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতদের মধ্যে এক জন বাঁকুড়ার রাজগ্রামের, এক জন বিষ্ণুপুর শহরের বাসিন্দা। অন্য জন বাঁকুড়া স্বাস্থ্য-জেলার বাসিন্দা। হাসপাতাল সূত্রে দাবি করা হয়েছে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ওঠার পরে, এ নিয়ে মোট সাত জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে কয়েকজন আশপাশের জেলার বাসিন্দা।
করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকলেও, জেলা প্রশাসনের তরফে পথে নেমে মানুষকে সচেতন করতে বিশেষ দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলছেন কেউ কেউ। প্রশাসনের সক্রিয়তা দাবি করে এ দিন বাঁকুড়া জেলাশাসকের দফতরে স্মারকলিপি দেয় এসইউসি।
এই পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসন কী ব্যবস্থা নিতে চলেছে, তা জানতে এ দিন বারবার ফোন করা হলেও ধরেননি বাঁকুড়ার জেলা শাসক কে রাধিকা আইয়ার। জবাব দেননি মেসেজ়ের। ফোন ধরেননি বাঁকুড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (স্বাস্থ্য) রাজু মিশ্রও।
বাঁকুড়া পুরসভার তরফে অবশ্য রবিবার থেকেই শহরের জনবহুল এলাকা জীবাণুমুক্ত করতে স্যানিটাইজ়ার ছড়ানো শুরু হয়েছে। শহরের মানুষকে সচেতন করতে চলছে মাইকে প্রচারও। বিষ্ণুপুর পুরসভাও এ নিয়ে বৈঠক করেছে।
তবে সংক্রমণ যে ভাবে বাড়ছে, তাতে জেলায় রোগী ভর্তির পরিকাঠামো আরও বাড়ানো দরকার বলে মনে করছেন জেলার স্বাস্থ্য-কর্তারাও। জেলায় বন্ধ হয়ে পড়ে থাকা সেফ হোমগুলিকে ফের চালু করার চেষ্টা শুরু হয়েছে। জেলার এক স্বাস্থ্য-কর্তা বলেন, “জেলায় করোনা সংক্রমনের হার রীতিমতো উদ্বেগজনক। রোগী ভর্তির পরিকাঠামো বাড়াতে জেলায় নতুন একটি কোভিড হাসপাতাল গড়া ও খাতড়া মহকুমা হাসপাতালে কিছু অতিরিক্ত শয্যা করোনা আক্রান্তদের জন্য বরাদ্দ রাখার আর্জি রাজ্যকে জানিয়েছি। তবে এ দিন পর্যন্ত এ নিয়ে কোনও নির্দেশ আসেনি।”
তবে বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালে ঘেরাটোপের মধ্যে থাকা একটি পৃথক জায়গায় ১০টি করে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য মোট ২০টি শয্যা কোভিড রোগীদের জন্য রাখা হচ্ছে। বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্য-জেলার মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক জগন্নাথ সরকার বলেন, “সংক্রমণের হার বেড়েই চলেছে। এই পরিস্থিতিতে বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালের ভিতর ঘেরাটোপের মধ্যে থাকা একটি জায়গায় করোনা রোগীদের জন্য ২০টি শয্যা চালু করা হচ্ছে।” আজ, মঙ্গলবার থেকে ওই শয্যাগুলি চালু হবে বলে জানান তিনি।
অন্য দিকে, এ দিন বাঁকুড়া স্বাস্থ্য-জেলায় নতুন করে ১৭ হাজার ও বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্য-জেলায় নতুন করে সাত হাজার করোনা প্রতিষেধক এসেছে। প্রতিষেধক কম থাকায় জেলার বেশির ভাগ টিকাকেন্দ্রই বর্তমানে বন্ধ। এ দিন যে পরিমাণ প্রতিষেধক এসেছে, তা চাহিদার তুলনায় খুবই কম বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্তারা।
জেলার এক স্বাস্থ্য-কর্তা জানান, প্রতিষেধক সময়মতো না আসায় আপাতত প্রথম ডোজ় দেওয়া বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জেলায় এক লক্ষের বেশি মানুষ এখনও প্রতিষেধকের প্রথম ডোজ় নেওয়ার পরে দ্বিতীয় ডোজ় পাননি। তিনি বলেন, “দৈনিক ১০-১২ হাজার প্রতিষেধকের চাহিদা রয়েছে। বেশি পরিমাণে প্রতিষেধক না আসা পর্যন্ত নতুন করে প্রথম ডোজ় চালু করার ঝুঁকি আমরা নিতে চাই না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy