খসড়া ভোটার তালিকায় নিজেদের নাম দেখার পর থেকেই ভোটের দিনের অপেক্ষায় ছিলেন নানুরের জুবুটিয়ার নবনীতা চক্রবর্তী, লাভপুরের গোপীনাথপুরের বিজয় মণ্ডল। সেটাই স্বাভাবিক, এ বারই জীবনে প্রথম ভোট দেওয়ার কথা ছিল তাঁদের। কিন্তু আশঙ্কাও ছিল কিছুটা।
আদৌ ভোট হবে তো?
শেষ পর্যন্ত আশঙ্কাটাই সত্যি হল। বিরোধী শিবিরের কোনও প্রার্থী না থাকায় এ বারও নানুর, লাভপুর ব্লকে ভোট না হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সেই খবরে মন খারাপ নতুন ভোটারদের।
এমন কাণ্ড অবশ্য নানুর, লাভপুরে এই প্রথম নয়। ২০১৩ সালের ত্রিস্তর নির্বাচনেও লাভপুর ব্লকের কোনও আসনে বিরোধীরা প্রার্থী দিতে না পারায় ভোট হয়নি। প্রায় এক পরিস্থিত ছিল নানুরেও। সেখানে থুপসড়া ও চণ্ডীদাস-নানুর পঞ্চায়েতের হাতেগোনা কয়েকটি আসনে শাসক দলের ‘অফিসিয়াল’ প্রার্থীদের সঙ্গে লড়াই হয়েছিল গোঁজ প্রার্থীদের। তবে জেলা পরিষদের একটি আসনে সিপিএম প্রার্থীর সঙ্গে লড়াই হয়েছিল তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্যের।
এ বার লাভপুর তো বটেই, নানুরে সেই লড়াইয়েরও সম্ভাবনা নেই। লাভপুরে জেলা পরিষদের ৩, পঞ্চায়েত সমিতির ৩২, গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৪৭টি আসন এবং নানুরে জেলা পরিষদের ৩, পঞ্চায়েত সমিতির ৩১, গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৬৮ আসনে বিরোধীরা কোনও প্রার্থীই দিতে পারেনি। স্থানীয় সূত্রে খবর, হাতেগোনা কয়েকটি পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতির আসনে শাসকদলেরই দু’টি করে মনোনয়ন জমা পড়েছে। দলীয় নেতৃত্বের দাবি, স্ক্রুটিনি-জনিত কারণে কোনও একটি যদি বাদ পড়ে সে কথা ভেবে আলোচনা করেই সে সব আসনে দু’টি করে মনোনয়ন জমা দেওয়া হয়েছে। তা না হলে পরে এক জন মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেবেন।
কিন্ত বিরোধী-শূন্য এই পরিস্থিতি নতুন ভোটারদের আশায় জল ঢেলে দিয়েছে। জেলা নির্বাচন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় মোট ভোটারের সংখ্যা ২৩ লক্ষ ৪৭ হাজার ৪৯০ জন। তার মধ্যে নতুন ভোটারের সংখ্যা ৭২ হাজার ৪৩৪ জন। নানুর ব্লকে ১ লক্ষ ৬৭ হাজার ৩০৪ জনের মধ্যে ৪ হাজার ১৭০ জন নতুন ভোটার। লাভপুরে ১ লক্ষ ৫০ হাজার ৯৮৮ জনের মধ্যে ২ হাজার ৫৭৬ জন নতুন ভোটার।
মন খারাপ নতুন সব ভোটারের। নানুরের কোমরডাঙের পলিটেকনিক ছাত্র শঙ্খচূড় দাস, জুবুটিয়ার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী নবনীতা চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘এ বারই ভোটার তালিকায় নাম উঠেছে। খসড়া তালিকায় নিজের নাম দেখে খুব আনন্দ হয়েছিল। এত দিন বড়দের ভোট দিতে দেখেছি। ভেবেছিলাম তাঁদের সঙ্গেই লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেব। সেই আশা এ বার পূরণ হল না।’’
লাভপুরের কুরুন্নাহারের রামকৃষ্ণ মাল, প্রতাপ মালেরও আক্ষেপের শেষ নেই। তাঁরা কলকাতার একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। ভোট দেওয়ার জন্য ছুটি নিয়ে বাড়ি ফেরার কথা ভেবেছিলেন। ভোট হবে না শুনে সংস্থার কর্তৃপক্ষ ছুটি বাতিল করেছেন। রামকৃষ্ণরা জানান, ‘‘ভোট দিতে যাব বলে ছুটি মঞ্জুর করিয়ে রেখেছিলাম। বাড়িও ঘুরে আসতাম। কিন্তু আমাদের এলাকায় ভোট না হওয়ার খবর শুনে সংস্থা ছুটি দিতে চাইছে না।’’
শুধু নতুন ভোটারই নয়, মন খারাপ বড়দেরও। লাভপুরের চৌহাট্টার গৃহবধূ শিবানী পাল, নানুরের পাকুরহাঁসের রমেশ পটুয়াররা জানান, ‘‘এখন তো কারও বাড়ি বেড়াতে যাওয়ার চল নেই বললেই চলে। তাই পাশের গ্রামের সবার সঙ্গে খুব একটা দেখা হয় না। ভোট দিতে গিয়ে সবার সঙ্গে দেখা হত। তা-ও এখন আর হবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy