Advertisement
২৩ মে ২০২৪

বাঁকুড়াতেও চিন্তা বাড়ছে গোঁজ-কাটায়

প্রশাসনিক তথ্য অনুসারে, বাঁকুড়া জেলা পরিষদের ৪৬টি আসনে তৃণমূলের হয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ৭৪ জন।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৮ ০২:২৬
Share: Save:

মনোনয়ন পর্বেই জেলা পরিষদ ও অধিকাংশ পঞ্চায়েত সমিতিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। তার পরেও কপালে চিন্তার ভাঁজ দেখা যাচ্ছে জেলার বহু তৃণমূল নেতারই। কেন? একই আসনে দলের তরফে একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন জমা করেছেন। আর তাতেই লড়াইয়ের পথে গোঁজ-কাঁটা জেগে ওঠার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। নেতৃত্বের একাংশের চিন্তা, অতিরিক্ত প্রার্থীদের তুলতে না পারলে ভোট ভাগাভাগির ফায়দা বিরোধীরা পেতে পারেন।

প্রশাসনিক তথ্য অনুসারে, বাঁকুড়া জেলা পরিষদের ৪৬টি আসনে তৃণমূলের হয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ৭৪ জন। জেলার বাইশটি পঞ্চায়েত সমিতিতে ৫৩৫টি আসনে তৃণমূল প্রার্থী রয়েছেন মোট ৭৯২ জন। একই পরিস্থিতি গ্রামপঞ্চায়েতেও। জেলার গ্রামপঞ্চায়েতের মোট ২৫০৫টি আসনে তৃণমূলের হয়ে মনোনয়ন জমা পড়েছে ৩০৫০টি। তৃণমূলের অনেকেই বলছেন, “জেলায় অর্ধেকেরও বেশি আসনে বিরোধী প্রার্থী নেই ভেবে যতটা না স্বস্তি হচ্ছে, তার চেয়ে ঢের বেশি অস্বস্তি হচ্ছে প্রয়োজনের তুলনায় কোথাও কোথাও দলেরই হয়ে দ্বিগুণেরও বেশি প্রার্থী দাঁড়িয়ে পড়ায়।”

বিষ্ণুপুর মহকুমার পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের একটিও আসনেও বিরোধী প্রার্থী নেই। তাই ওই মহকুমায় কার্যত ভোটই হচ্ছে না।

বাঁকুড়া সদর মহকুমার ১৮টি জেলা পরিষদ আসন। তার মধ্যে একটিতে এসইউসির প্রার্থী রয়েছেন। আর বাঁকুড়া ২ ব্লকের ২৬ নম্বর জেলা পরিষদ আসনে তৃণমূলের তরফে দু’জন মনোনয়ন পেশ করেছেন। ওই মহকুমায় আর কোথাও বিরোধী নেই। গোঁজও নেই। সদরের আটটি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে পাঁচটিতেই বিরোধীরা অর্ধেক আসনে প্রার্থী দিতে না পারায় এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল।

ছবিটা আলাদা খাতড়া মহকুমায়।

সেখানে ১৫টি জেলা পরিষদের আসনেই বিরোধী প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা করেছেন। মহকুমার তালড্যাংরা ছাড়া বাকি সাতটি পঞ্চায়েত সমিতি ও বেশির ভাগ গ্রামপঞ্চায়েতেও বিরোধী প্রার্থীরা রয়েছেন। ফলে পঞ্চায়েতের তিনটি স্তরেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়ার কথা।

এ দিকে, শাসকদলে গোঁজ-প্রার্থীর কাঁটাও খাতড়া মহকুমাতেই বেশি বলে সূত্রের খবর। দলের অনেকেই মনে করছেন, দলের অতিরিক্ত প্রার্থীরা ভোট কাটলে আখেরে তার সুবিধা পাবেন বিরোধীরাই। নিজের নাক কেটে পরের যাত্রাভঙ্গ যাতে না করেন, সেটাই এখন গোঁজ-প্রার্থীদের বোঝানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন তাঁরা।

তৃণমূল সূত্রে জানা যাচ্ছে, সমস্যা মেটাতে জেলার পাশাপাশি ইতিমধ্যেই দলের রাজ্য নেতৃত্বও হস্তক্ষেপ করেছেন।

জেলা পরিষদের আসনগুলিতে একাধিক প্রার্থীর মধ্যে শেষ পর্যন্ত কে সিলমোহর পাবেন, সেটা ঠিক করার ভার নিয়েছেন রাজ্য নেতৃত্ব। অন্য দিকে, গ্রামপঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির আসনগুলিতে চূড়ান্ত প্রার্থী ঠিক করার ভার রয়েছে দলের জেলা নেতৃত্বের কাছে। সূত্রের খবর, প্রার্থী সমস্যা মেটাতে একাধিক বৈঠক হয়ে গিয়েছে। তবে এখনও বেশ কয়েকটি আসনে সমস্যা রয়েছে।

অবশ্য জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক জয়দীপ চট্টোপাধ্যায় অতিরিক্ত প্রার্থীদের দাঁড়িয়ে পড়ার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতেই নারাজ। তিনি বলেন, “বিভিন্ন এলাকা থেকে একাধিক প্রার্থীর নাম উঠে এসেছিল। সবাই মনোনয়ন জমা করেছেন দলের হয়ে। তবে দল যাঁকে টিকিট দেবে তিনিই প্রার্থী হবেন। এ বিষয়ে সবাই একমত।” তাঁর দাবি, মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনের মধ্যেই সব ক’টি আসনে দলের বাড়তি প্রার্থীরা সরে দাঁড়াবেন।

শেষ পর্যন্ত কী হয়, শাসকদলের নিচুতলার কর্মীদের পাশাপাশি আপাতত সেই দিকে তাকিয়ে বিরোধীরাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE