Advertisement
E-Paper

পুলিশের পক্ষপাত, অভিযোগ

প্রশাসন সূত্রে খবর, ধৃতদের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা, অস্ত্র মিছিল, বোমাবাজি, হামলা করা, সরকারি কাজে বাধা দেওয়া, ১৪৪ ধারা লঙ্ঘন, বেআইনি জামায়েত, জাতীয় সড়ক অবরোধ করার মতো নানা ধারা প্রয়োগ করেছে পুলিশ।

দয়াল সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৮ ০২:২১
চেকিং: ঝাড়খণ্ড লাগোয়া সিউড়ি-দুমকা রাস্তার চরিচার জঙ্গলে নজরদারি। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

চেকিং: ঝাড়খণ্ড লাগোয়া সিউড়ি-দুমকা রাস্তার চরিচার জঙ্গলে নজরদারি। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

মামলা হল ১০ হাজার ৫৬ জনের বিরুদ্ধে। রবিবার দিনভর বীরভূম লাগোয় ঝাড়খণ্ড সীমানা ও বিভিন্ন রাস্তায় চলল নজরদারি, নাকা তল্লাশি। বীরভূম ও ঝাড়খণ্ডের পুলিশ কর্তাদের মধ্যে হল আলাপ-আলোচনা। পুলিশের বিরুদ্ধে উঠল পক্ষপাতের অভিযোগও।

এ সবই হল শনিবার মহম্মদবাজারে অশান্তির জেরে। ওই ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ২৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্রশাসন সূত্রে খবর, ধৃতদের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা, অস্ত্র মিছিল, বোমাবাজি, হামলা করা, সরকারি কাজে বাধা দেওয়া, ১৪৪ ধারা লঙ্ঘন, বেআইনি জামায়েত, জাতীয় সড়ক অবরোধ করার মতো নানা ধারা প্রয়োগ করেছে পুলিশ। ধৃতদের রবিবার সিউড়ি আদালতে হাজির করানো হলে চব্বিশ জনের ১৪ দিন জেল হাজত ও বাকি চার জনের দু’দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত সিজেএম অলিভা রায়।

বিরোধীদের অভিযোগ, শনিবারের ঘটনায় ‘বহিরাগত’-যোগ, ‘মাওবাদী-তত্ত্ব’ প্রমাণে কোঁমর বেঁধে মেনেছে বীরভূম জেলা পুলিশ। অশান্তির ঘটনায় জড়িত অভিযোগে যে ২৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ, তা দিয়ে আদৌ বহিরাগত বা মাওবাদী-তত্ত্ব খাটে না। তাঁদের দাবি, যাঁরা ধরা পড়েছেন, তাঁদের সকলের বাড়ি মহম্মদবাজার থানা এলাকায়। শুধু তাই নয়, এক জন ছাত্র, এক নেশাড়ু ছাড়া ধৃতদের মধ্যে ২০ জন বিজেপি’র এবং ৬ জন সিপিএমের লোক রয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রে খবর, পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়ন জমা দেওয়াকে ঘিরে শাসকদলের লোকেদের হাতে ‘একতরফা’ মার খেয়ে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল বিরোধীদের। শনিবার মরিয়া হয়ে মনোনয়ন জমা করার চেষ্টা করে বিরোধীরা। সেই উদ্দেশে বিপক্ষ শনিবার ব্লকের বিভিন্ন গ্রাম থেকে লোক এনে জমায়েত করেছিল আঙ্গারগড়িয়া, শেওয়াকুড়ি মোড়ে। লোক ছিল কয়েক হাজার। অধিকাংশই আদিবাসী। সঙ্গে ছিল লাঠি, তির-ধনুক। সামনের সারিতে বিজেপি থাকলেও সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে সঙ্গী ছিল বামেরাও। প্রথমে মিছিল আটকালেও কয়েক হাজার মানুষের বিশাল জামায়েত আটকে রাখা সম্ভব হয়নি পুলিশের পক্ষে। পুলিশের থেকে ছাড় পেয়ে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে মিছিল ব্লক অফিসের কাছাকাছি পৌঁছলে প্যাটেলনগরের কাছে মিছিল আটকায় শাসক দলের আশ্রিত ‘দুষ্কৃতীরা’। শুরু হয় খণ্ডযুদ্ধ। মিছিলের দিকে মুড়ি-মুড়কির মতো বোমা পড়তে থাকে বলে অভিযোগ।

আদালতে তোলা হচ্ছে ধৃতদের। রবিবার সিউড়িতে। নিজস্ব চিত্র

পাল্টা অভিযোগ, বিজেপির মিছিল থেকেও ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসে তির, পাথরের টুকরো। পুলিশ দু’পক্ষের মাঝে এসেও শুরুতে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেনি। পর পর তিরের মুখে পিছু হঠে তৃণমূল বাহিনী। ব্লক অফিস দখল করে মনোনয়ন জমা করতে শুরু করে বিরোধীরা। ৮০টি আসনে বিজেপি এবং ৫৪টি আসনে মনোনয়ন জমা দেন বাম ও সমর্থিত কিছু নির্দল প্রার্থী।

এই ঘটনার পরেই তৃণমূলের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়, ঝাড়খণ্ড থেকে মাওবাদী এনে মনোনয়নে অশান্তি করেছে বিজেপি। পাশাপাশি পুলিশি ব্যর্থতার দিকেও আঙুল তুলেছিলেন তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। পুলিশ মাওবাদীদের উপস্থিতি সরাসরি স্বীকার না করলেও বাইরে থেকে লোক ‘ঢোকার’ কথা মেনে নেয়। যদিও শুরু থেকেই বিজেপি দাবি করে আসছিল, এটা শাসকদলের প্রতি মানুষের জমে থাকা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।

তৃণমূলের পক্ষে রবিবার বিকেলে ফের বিজেপির দুই ব্লক সভাপতি জগন্নাথ মণ্ডল এবং দীনবন্ধু কর্মকার, সাধারণ সম্পাদক রণজিৎ গড়াই-সহ ৪৪জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। বিজেপি জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায় এবং মহম্মদবাজারের সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য প্রভাস মালের দাবি, ‘‘কোনও বাইরের লোক ছিল না। সবই ব্লকের।’’ একই দাবি করছেন আদিবাসী গাঁওতা নেতা রবীন সরেনও। তাঁদের দাবি, যে ভাবে শাসক দলের নেতারা সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার, তোলাবাজি করছিলেন, সেই ক্ষোভ থেকেই শানিবারের জমায়েত। পুলিশ অবশ্য এ সব নিয়ে মন্তব্য করতে চায়নি। প্রতিক্রিয়া মেলেনি জেলা পুলিশ সুপার নীলকান্তম সুধীর কুমারেরও।

শনিবারের ঘটনার পরে এসেছেন জেলায় পাঠানো হয়েছে আইজি জাভেদ শামিমকে। রবিবার সকাল থেকে ঝাড়খণ্ড থেকে বীরভূম আসার বিভিন্ন রাস্তায় চলে নাকা তল্লাশি। বিরোধীদের ক্ষোভ, পুলিশ ১০০৫৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। প্রথম থেকে শাসক দলের প্রতি আনুগত্য দেখিয়েছে পুলিশ। শাসক দলের বহিরাগতদের সঙ্গে নিয়ে বিরোধীদের মনোনয়ন জমা বাধা দিয়েছে। মহম্মদবাজারে মনোনয়ন জমা করতে পরালেও বিরোধীরা যাতে ভোটে লড়তে না পারে এটা তারই কৌশল।

যদিও তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘শনিবারের ঘটনার প্রেক্ষিতে পুলিশকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। পুলিশ সেটাই করছে।’’

মহম্মদবাজারের ঘটনায় যদিও এত জনকে ধরা হয় এবং এত জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়, তা হলে নলহাটিতে তাঁদের নেতৃত্বের উপর হামলার ঘটনায় গ্রেফতার নেই কেন, প্রশ্ন বামেদের? এর উত্তর অবশ্য মেলেনি পুলিশের কাছ থেকে।

Complaint Police Biasness West Bengal Panchayat Elections 2018
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy