ব্লকের গ্রাম পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতির একটি আসনেও বিরোধী প্রার্থী নেই। কিন্তু, শাসকদলের চার গোঁজ প্রার্থীর জন্যই হয়তো নির্বাচন হতে চলেছে সিউড়ি ১ ব্লকের তিনটি আসনে।
বুধবার মনোনয়নের স্ক্রুটিনির পরে সিউড়ি ১ ব্লকের আলুন্দা গ্রাম পঞ্চায়েতের দু’টি আসন এবং একটি পঞ্চায়েত সমিতির আসনে এমনই সমীকরণ। জানা গিয়েছে, ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের কাঁকুড়িয়া এবং ইটাগড়িয়া সংসদে একটি করে অতিরিক্ত মনোনয়ন জমা পড়েছে শাসকদলের তরফ। সবচেয়ে মজার পরিস্থিতি ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের পঞ্চায়েত সমিতির আসনে। জানা গিয়েছে, শাসকদলের তিন নেতা একটি আসনের জন্যই মনোনয়ন জমা করেছেন। তৃণমূল সূত্রের খবর, তাঁরা হলেন আলুন্দা গ্রাম পঞ্চায়েতের আগের বারের নির্বাচিত (বিদায়ী) সদস্য মানাই মিদ্দা, সিউড়ি ১পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ কাজল শাহ এবং ব্লক কার্যকরী সভাপতি করম হোসেন খান।
যুযুধান তিন জনেই বলছেন, ‘‘দলের নির্দেশে ওই আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছি। বাকিরা কেন জমা দিলেন বলতে পারব না।’’ তবে কী সমন্বয়ের অভাব? সিউড়ি ১ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি স্বর্ণময় সিংহ মানছেন, ‘‘ব্লকের তিনটি আসনে একটু সমস্যা রয়েছে। তবে নির্বাচনের দিন আসার আগেই ওঁদের মধ্যে চার জন মনোনয়ন তুলে নেবেন।’’
রাজ্যের অন্য জেলাগুলিতে জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি এবং গ্রাম পঞ্চায়েত— তিনটি ক্ষেত্রেই মোট আসনের থেকে ঢেড় বেশি মনোনয়ন জমা দিয়েছে শাসকদল। গ্রাম পঞ্চায়েতেই অন্তত ১১ হাজার বাড়তি প্রার্থী আছে তাদের। পঞ্চায়েত সমিতিতে তিন হাজারের কাছাকাছি। আর জেলা পরিষদে প্রায় আড়াইশো অতিরিক্ত মনোনয়ন জমা পড়েছে শাসকদলের তরফে। তৃণমূল সূত্রের দাবি, সেই ছবির সঙ্গে অনুব্রত মণ্ডলের বীরভূমের সাদৃশ্য নেই। বীরভূম জেলা পরিষদে একটিও বাড়তি মনোনয়ন জমা পড়েনি। গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চয়েত সমিতিতে কিছু বাড়তি মনোনয়ন জমা পড়লেও বেশির ভাগই সর্তকতা মূলক। কিন্তু, কিছুটা হলেও তাল কেটেছে সিউড়ির আলুন্দা।
কেন? ব্লকের কার্যকরী সভাপতি করম হোসেন খান বলছেন, ‘‘আমি জেলা নেতৃত্বের নির্দেশে প্রার্থী হয়েছি। বাকিরা কেন প্রার্থী হচ্ছেন, সেটা ওঁরাই ভাল বলবেন।’’ বিদায়ী গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য মানাই মিদ্দা বলছেন, ‘‘বিধায়ক, সিউড়ি পুরপ্রধান এবং ব্লক সভাপতি মিলিয়ে ১১ জনের নির্বাচন কমিটি করা হয়েছিল মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগেই। সেই কমিটির সিদ্ধান্ত ছিল, আমি পঞ্চায়েত সমিতির আসনে মনোনয়ন জমা দিই। সেই মতো গত ৯ তারিখ মনোনয়ন দাখিল করেছি।’’ প্রায় একই বক্তব্য সিউড়ি ১ পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ কাজল শাহ-রও। কাজল বলছেন, ‘‘এক জন বিদায়ী কর্মাধ্যক্ষ হিসেবে দলের নির্দেশেই মনোনয়ন দিয়েছি। সবচেয়ে বড় কথা, এলাকার মানুষের চাহিদা। সেটা মাথায় রাখতে হবে। বাইরে থেকে যাকে খুশি চাপিয়ে দিলেই হয় না।’’ দু’জনেই অবশ্য ঘনিষ্ঠমহলে বলছেন, ‘‘করম হোসেন খানের অন্য আত্মীয়েরাও বিভিন্ন আসনে টিকিট পেয়েছেন। তা হলে আবার কেন?’’
তা হলে কী নির্বাচন পর্যন্ত গড়াবে? তিন জনেই বলছেন, ‘‘দল যা বলবে, সেটাই হবে।’’ বিডিও (সিউড়ি ১) মহম্মদ বদরুদ্দোজা বলছেন, ‘‘১৬ তারিখ বিকেল তিনটের মধ্যে ওই রাজনৈতিক দলকে ফর্ম-বি দিয়ে জানাতে হবে, কাকে ওঁরা প্রার্থী হিসেবে চান। যিনি ফর্ম বি পাবেন তিনিই দলের ঘোষিত প্রার্থী। বাকিরা নির্দল। যদি না নির্দিষ্ট সময়ের
মধ্যে বাকিরা মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন।’’