সোমবার মরিয়া হওয়া তো দূর, সিউড়ি মহকুমাশাসকের অফিসে কোনও বিরোধী প্রার্থীরই দেখা মিলল না। বিরোধী দলের নেতারা বলছেন, ‘‘দেখা মিলবে কী করে? চত্বরে ঢুকতে দিলে তো!’’ ত্রি-স্তর পঞ্চায়েতের মনোনয়ন জমার ঘোষিত শেষ দিন ছিল সোমবার। রাতে কমিশন নির্দেশ দেয়, আজ মঙ্গলবারও মনোনয়ন চলবে।
তবে বিরোধীদের অভিযোগ, এ দিন শাসকদলের লোকেরা কার্যালয়ের বাইরেটা ঘিরে রেখেছিল। জেলাশাসকের কার্যালয়ের বাইরে শহরের বিভিন্ন মোড়ে, শহরে ঢোকার প্রতিটি পয়েন্টে ছিল সশস্ত্র বাহিনী। তূণমূল সে অভিযোগ মানতে চায়নি। বিরোধীদের দাবি, ব্যতিক্রম একমাত্র মহম্মদবাজার এবং রাজনগর। মহম্মদবাজারে জোর করে মনোনয়ন জমা করা গিয়েছে। রাজনগরে স্বাভাবিক ভাবেই বিরোধীদের মনোনয়ন জমা করতে দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে জেলার প্রতিটি ব্লকে শাসকদলের বাধায় হয় মনোনয়ন জমা দেওয়া যায়নি, নতুবা বিরোধীদের আক্রান্ত হতে হয়েছে।
জেলা তৃণমূলের সভাপতির কথায় সংশয় তৈরি হয়েছে। এ দিন সিউড়িতে সাংবাদিক বৈঠকে অনুব্রতর হেঁয়ালি, ‘‘দু’একটা জায়গা আছে যেখানে পঞ্চায়েত নির্বাচন হবে, সেখানে প্রচণ্ড মশার উৎপাত। মশারি টাঙানো থাকবে। যাতে মশা না ঢোকে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘১৬৭টি পঞ্চায়েতের মধ্যে মাত্র কয়েকটায় মনোনয়ন জমা দিয়েছেন বিরোধীরা। অপেক্ষা করুন না ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন আসার আগে কেউ অসুস্থ হবে। কেউ যাবেন পিজি, কেউ যাবেন সিউড়ি হাসপাতাল।’’
সিউড়ি ২, দুবরাজপুর, খয়রাশোল, ইলামবাজারের মতো ব্লকে একটি আসনেও বিরোধীদের মনোনয়ন জমা পড়েনি। তাই প্রস্তুতি ছিল। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে থাকলেও শনিবার মহকুমাশাসকের কার্যালয়ে পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির আসনে মনোনয়ন করা যায়নি। বিরোধীরা বলছেন, ‘‘সোমবার সেই লক্ষ্যেই ঝাঁপাব ভেবেছিলাম। তবে এত বাধার সামনে কে আর ঝুঁকি নেয়?’’ বিজেপি ও বামনেতারা বলছেন, ‘‘মহিলা সংরক্ষিত আসন ৫০ শতাংশ। মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে মহিলাদের কোনও সমস্যা পড়তে হলে কী জবাব দেব?’’ শাসকদলের নেতারা অবশ্য আগেভাগেই জানিয়ে রেখেছিলেন, মাছিও গলবে না। দাঁড়িয়ে থাকবে উন্নয়ন। কার্যত সেটাই হয়েছে। বড় রুমাল কাঁধে নিয়ে প্রচুর সংখ্যক লোকজনের জমায়েত ছিল জেলা প্রশাসন ভবনের বাইরে। অন্য দিনের থেকে জমায়েত যেন আরও বেশি। মজা করে শাসক দলের নেতারাও বলছেন, ‘‘মশারি টাঙানো হয়েছিল।’’
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের যানজট। দুবরাজপুর থেকে সিউড়ি যাওয়ার সময় এই জাতীয় সড়কে প্রায়ই যানজটে লাগে। সপ্তাহের প্রথম দিন সেটা আরও মারাত্মক হয়। বহু মানুষকে হাঁটতে হয়। সোমবার সকাল সাড়ে দশটার পর থেকে চন্দ্রভাগা নদী পেরিয়ে এক ইঞ্চি এগোনো যাচ্ছিল না। সিউড়ি শহরে ঢোকার পথ আটকে রেখে গাড়ি তল্লাশি করছিল পুলিশ। ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ বলছেন, ‘‘আর কত উন্নয়ন দেখব।’’ ওই ভিড় থেকে শাসকদলের প্রতি পুলিশের পক্ষপাত নিয়েও চলছিল কটাক্ষ। এ নিয়ে অবশ্য পুলিশের প্রতিক্রিয়া মেলেনি।