প্রচার: মহম্মদবাজারের চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েতের ঢাকপারা গ্রামে একই দেওয়ালে যুযুধান বিজেপি, তৃণমূল। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র
ভোট চাইতে সদলবলে পাড়ায় পাড়ায় প্রার্থীদের ঘোরার ছবিই সবার চেনা। শাসক বা বিরোধী— প্রার্থী যে দলেরই হোন না কেন, ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যেতেই হবে তাঁদের। ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে এ ভাবেই গ্রাম ‘চিনতেন’ অনেক প্রার্থীই। ভোটাররাও দেখতেন প্রার্থীকে।
কিন্তু জেলার অনেক জায়গায় পঞ্চায়েত ভোটের সেই চেনা ছবি হারিয়ে গিয়েছে। বিরোধী প্রার্থী না থাকায় সে সব এলাকায় হয় না ভোটই। ভোটারদের বাড়ি বাড়িও ঘুরতে হয় না ভোট ময়দানে একা থাকা প্রার্থীদের।
২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে লাভপুর, নানুর, বোলপুর, সাঁইথিয়া ব্লকের পাশাপাশি জেলার অনেক পঞ্চায়েতে বিরোধীরা কোনও প্রার্থীই দিতে পারেনি। ভোটই হয়নি সে সব এলাকায়। এ বারও জেলা পরিষদের ৪২টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছেন শাসক দলের প্রার্থীরা। ১৯টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে ১৫টিতেও ওই একই পরিস্থিতি। জেলায় পঞ্চায়েতের ৮০ শতাংশ আসনও একই ভাবে গিয়েছে শাসক দলের দখলেই (যদিও বিনা লড়াইয়ে জেতা প্রার্থীদের নাম আপাতত প্রকাশ না করতে শুক্রবার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট)।
গত বারের মতো এ বারও ভোট হচ্ছে না নানুর, লাভপুর, সাঁইথিয়া ব্লক সহ কয়েকটি জায়গায়। ওই সব জায়গায় তাই নেই ভোটের প্রচার। কয়েকটি এলাকার প্রার্থীরা নিজেদের নির্বাচনী এলাকার বাইরে ভোট ময়দানে নেমেছেন। প্রচার না হওয়ায় ভোটারদের কাছে কার্যত অপরিচিতই রয়ে গিয়েছেন তাঁরা। এলাকায় কানাঘুষো, কয়েক জায়গায় প্রার্থীরাও এলাকার গ্রামের নামও নাকি জানেন না! বিদায়ী জেলা সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী এ বার সিউড়ি ২ ব্লক এলাকায় জেলা পরিষদের ২৪ নম্বর আসনে প্রার্থী হয়েছেন। গত বার তিনি জিতেছিলেন লাভপুর ব্লক এলাকা থেকে। বিকাশবাবু ঘনিষ্ঠ মহলে মেনে নিয়েছেন, তাঁর এ বারের নির্বাচনী এলাকার ৬টি পঞ্চায়েতের কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করলেও এখনও কোনও গ্রামে যেতে পারেননি। তাঁর কথায়, ‘‘এখনও যাওয়া না হলেও পরে তো যেতে হবেই।’’
একই হাল জেলা পরিষদের বিদায়ী কর্মাধ্যক্ষ আব্দুল কেরিম খানেরও। নানুরের বাসিন্দা কেরিম খান এ বার লাভপুর ব্লকের ২১ নম্বর আসন থেকে জেলা পরিষদের প্রার্থী হয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, পরে বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ভোটারদের সঙ্গে আলাপ করবেন। একই কথা বলছেন ময়ূরেশ্বর ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সভাপতি তথা মল্লারপুরের বাসিন্দা ধীরেন্দ্রমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ও। ধীরেন্দ্রবাবু এ বার প্রার্থী হয়েছেন মহম্মদবাজার ব্লক এলাকায়, জেলা পরিষদের ২৩ নম্বর আসনে। তিনি বলেন, ‘‘দল আমাকে মল্লারপুর এলাকায় নির্বাচনের দায়িত্ব দিয়েছে। তাই এখনও পর্যন্ত আমার নিজের নির্বাচনি এলাকার কোনও গ্রামে ঘোরা হয়নি। তবে সব মিটে যাওয়ার পর আমি একে একে সব গ্রামেই যাব।’’ ভোটারদের কাছে যেতে পারেননি তৃণমূলের ময়ূরেশ্বর ২ নম্বর ব্লক সভাপতি তথা উলকুণ্ডা গ্রামের বাসিন্দা নারায়ণপ্রসাদ চন্দ্রও। তিনি বলেন, ‘‘এলাকার কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। কিন্তু ভোটারদের কাছে যাওয়া হয়নি।’’
লাভপুরের দাঁড়কা পঞ্চায়েত এলাকার অবসরপ্রাপ্ত এক স্কুলশিক্ষক, মহম্মদবাজার এলাকার এক পাথর ব্যবসায়ীর বক্তব্য— আগে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রার্থীরা স্থানীয় বাসিন্দা হতেন। তার উপরে ভোটের আগে বাড়ি বাড়ি ঘুরতেন। তখনই দু’পক্ষের মুখ চেনা হয়ে যেত। এখন ভোট চাইতে আসার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। তার উপরে এক এলাকার প্রার্থী লড়ছেন অন্য কোথাও। তাই এলাকাবাসীর কাছে প্রার্থী অচেনাই থেকে যাচ্ছেন। প্রার্থীও চিনছেন না তাঁর এলাকা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy