অধিকার: পাশের ব্লক ওন্দার পুনিশোলে ভোট দেওয়ার ভিড়। বিষ্ণুপুরের দিন কেটেছে সাদামাটা। নিজস্ব িচত্র
চারদিকে ভোট ভোট রব। মানুষজন ব্যস্ত। কিন্তু, বিষ্ণুপুর মহকুমার গ্রামগুলোতে তখন উল্টো ছবি। সোমবার এই সব এলাকার গ্রামবাসীরা গ্রীষ্মের অলস দিন দুপুর টিভি দেখে, গল্পগুজব করে কাটালেন। কারণ এখানে ভোট নেই।
বামফ্রন্ট আমলেও এই মহকুমার বেশ কয়েকটি ব্লকে টানা কয়েক বার ধরে পঞ্চায়েত ভোট হয়নি। কারণ তখনও বিরোধীরা মনোনয়ন দিতে পারত না বলে অভিযোগ তুলতেন। রাজ্যে পালাবদলের পরেও এ বার সেই একই অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা। তবে মহকুমার ছ’টি ব্লকের একটি আসনেও পঞ্চায়েত নির্বাচন না হওয়ার মতো ঘটনা ঘটেনি বলেই অনেকে জানাচ্ছেন। তাই বিষ্ণুপুরের আমডহরা থেকে কোতুলপুরের লাউগ্রাম, কিংবা ইন্দাসের আকুই থেকে জয়পুরের বৈতল— সর্বত্রই এক ছবি। ভোট নেই।
বছরের আর পাঁচটা দিনের মতোই এ দিনও এই মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় অফিস কাছারি খোলা ছিল। দোকান-বাজারও চালু ছিল। তবে ভিড় বেড়ে গিয়েছিল চায়ের দোকানে। সেখানে চপ ও চায়ের সঙ্গে টিভির পর্দায় নজর রাখছিলেন তাঁরা। সেই সঙ্গে ভেসে আসছিল নানা মন্তব্য। ভোট না হওয়ার আক্ষেপও করছিলেন অনেকেই।
বিষ্ণুপুরের মড়ার গ্রামের নূর ইসলাম বলছিলেন, ‘‘ভোট মানে ছেলেবেলা থেকে উৎসব দেখে এসেছি। আগের রাতে সবাই মিলে খাওয়াদাওয়া করতাম। রাত জেগে বিভিন্ন দলের কর্মী-সমর্থকেরা গ্রামের রাস্তায় যে যার নিজের দলের পতাকা দিয়ে সাজাতাম। ভোটের দিনে কখনও সখনও অন্য দলের কর্মীদের সঙ্গে বচসাও হতো। কিন্তু, ভোট মিটতেই সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাড়ি ফিরতাম। এ বার ভোট নেই। নিজেদের যেন একঘরে মনে হচ্ছে।’’
বাঁকাদহের এক প্রবীণ বাসিন্দা বলেন, ‘‘ছেলেটা এলই না। ভোট এলেই ভাল লাগত একটা কারণেই। কারণ সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছেলে ভোটের জন্য বাড়ি ফিরত। এ বার সে আর এল না।’’
আক্ষেপ রয়েছে শাসকদলের নেতা-কর্মীদের মধ্যেও। জয়পুর পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী কর্মাধ্যক্ষ রবিউল মিদ্যা বলেন, ‘‘এক দম ভাল লাগছে না। সারা রাজ্যের তৃণমূল কর্মীরা ভোটের জন্য যখন দৌড়োচ্ছেন, আমরা শুয়ে বসে দিন কাটাচ্ছি। প্রচারে যাব, ঘেমেনেয়ে একসা হব, তবেই না ভোট। এ বার বিরোধীরা প্রার্থী না দেওয়ায়, ভোটের মেজাজটাই এল না।’’
সোনামুখীর নিত্যানন্দপুর এক বাসিন্দা ১৯৯৮ সালে তৃণমূলের হয়ে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘বিরোধীরা ভোটে অংশগ্রহণ করতে পারল না। এটা দলের ক্ষতি হয়ে গেল।’’
এই সূত্রেই তিনি মনে করাচ্ছেন, সেই সময়ে কোতুলপুর, জয়পুর, ইন্দাস, পাত্রসায়রের মতো বিভিন্ন ব্লকের কথা। তিনি বলেন, ‘‘সেখানে গ্রামের পর গ্রাম আমাদের প্রার্থীদের মনোনয়ন দিতে যেতে দেয়নি সিপিএম কর্মীরা। তার ফল এখন সিপিএম ভুগছে। তৃণমূলের যেন সেই দুর্দিন না হয়।’’
সেই কথাটাই মনে করিয়ে দিচ্ছেন বিজেপির সাংগঠনিক জেলার সভাপতি স্বপন ঘোষও। তিনি বলেন, ‘‘চাকা ঘোরে। এটা ভুললে চলবে না।’’
কোতুলপুরের ব্যবসায়ী বলরাম চক্রবর্তী বলেন, ‘‘গত ক’বছরে উন্নয়ন ভালই হয়েছে। এমন ঝকঝকে রাস্তা দিয়ে ছেলেমেয়েগুলো সরকারি সাইকেলে স্কুলে যাচ্ছে। কিন্তু ভোটের অধিকারটাই শুধু হারিয়ে গেল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy