Advertisement
১৮ মে ২০২৪

লাল পোকা জ্বর ছড়াচ্ছে বাঁকুড়াতেও

লাল পোকার কামড়ে বাঁকুড়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অনেকে। ট্রম্বকিউলিড মাইটস নামে ওই পোকার কামড়ে স্ক্রাব টাইফাস ব্যাকটিরিয়া শরীরে ঢুকে পড়ে। সম্প্রতি কলকাতায় এ ভাবে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয়েছিল এক বৃদ্ধার। তবে বাঁকুড়ায় মৃত্যু হয়নি কারও।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৭ ০০:২৯
Share: Save:

লাল পোকার কামড়ে বাঁকুড়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অনেকে। ট্রম্বকিউলিড মাইটস নামে ওই পোকার কামড়ে স্ক্রাব টাইফাস ব্যাকটিরিয়া শরীরে ঢুকে পড়ে। সম্প্রতি কলকাতায় এ ভাবে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয়েছিল এক বৃদ্ধার। তবে বাঁকুড়ায় মৃত্যু হয়নি কারও। বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, অগস্ট থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত স্ক্রাব টাইফাস আক্রান্ত ৩৩ জন ভর্তি হয়েছিলেন। সবাই সুস্থ হয়ে গিয়েছেন।

বাঁকুড়া মে়ডিক্যাল সূত্রের খবর, আক্রান্তদের বেশির ভাগই বাঁকুড়া জেলার বাসিন্দা। এ ছাড়া পুরুলিয়া এবং বর্ধমান থেকেও অনেকে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য আসছেন। হাসপাতালের নথি থেকে জানা যাচ্ছে, স্ক্রাব টাইফাস আক্রান্ত ৩৩ জনের মধ্যে ১ থেকে ১০ বছর বয়সী ১৫ জন রয়েছে। ওই ১৫ জনের মধ্যে আবার ১৪ জনই বাঁকুড়া জেলার বাসিন্দা। অন্য জনের বাড়ি পুরুলিয়ার আদ্রায়।

গত আড়াই মাসে স্ক্রাব টাইফাসের প্রকোপ দেখা দেওয়ায় জেলার স্বাস্থ্য মহলে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। বাঁকুড়া মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম প্রধান জানান, অগস্টের আগে স্ক্রাব টাইফাস পরীক্ষা বাঁকুড়া মেডিক্যালে হতো না। অ্যাকিউট এনসেফালাইটিস সিন্ড্রোম নিয়ে ভর্তি হওয়া কয়েক জন রোগীর অসুস্থতার সঠিক কারণ ধরা পড়ছিল না বলে ওই সময়ে তাঁদের সন্দেহ হয়। ওই রোগীদের রক্তের নমুনা কলকাতার স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনে পাঠানো হয়েছিল। সেখানেই রোগটি ধরা পড়ে।

তার পরেই রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর থেকে এই রোগ নির্ণয়ের বিশেষ কিট বাঁকুড়া মেডিক্যালে পাঠানো হয়। বর্তমানে বাঁকুড়া মেডিক্যালেই ওই কিট দিয়ে স্ক্রাব টাইফাস নির্নয় করা যাচ্ছে। পার্থপ্রতিমবাবু বলেন, “সঠিক সময়ে স্ক্রাব টাইফাস ধরা পড়লে এর চিকিৎসা সম্ভব। এই রোগের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক হাসপাতালে রয়েছে।”

বাঁকুড়া মেডিক্যালের চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, স্ক্রাব টাইফাসের বাহক ট্রম্বিকিউলিড মাইটস নামের একটি লাল পোকা। খুবই ছোট আকারের ওই পোকার আটটি পা থাকে। বাস করে ঝোপঝাড়ে। এই লাল পোকা বাড়ির দেওয়ালের গর্তেও দেখা যায়। চিকিৎসকেরা জানান, স্ক্রাব টাইফাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ হল ধুম জ্বর, মাথা ব্যথা, গায়ে র‌্যাশ বেরোতে থাকা। বিষ্ণুপুরের চাকদহ এলাকার ৬ বছরের অর্জুন বাউড়ি গত ১২ অক্টোবর জ্বর নিয়ে বিষ্ণুপুর হাসপাতালে ভর্তি হয়। জ্বর না কমায় তাকে সেখান থেকে রেফার করা হয় বাঁকুড়া মেডিক্যালে। সেখানেই রক্ত পরীক্ষা করে স্ক্রাব টাইফাস ধরা পড়ে। চিকিৎসায় সেরে উঠে সম্প্রতি হাসপাতাল থেকে ছুটি পেয়েছে অর্জুন। তার বাবা বাপি বাউড়ি ফোনে জানান, তাঁদের বাড়ির আশপাশে আর অর্জুনের প্রাথমিক স্কুল চত্বরে প্রচুর ঝোপঝাড় রয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে রোগটি নিয়ে সচেতনতা গড়ে তোলা দরকার বলে মত চিকিৎসকদের। বাঁকুড়া জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রসূনকুমার দাস বলেন, “স্ক্রাব টাইফাস নিয়ে সচেতনতা বা প্রচার এখনও জেলা স্তরে শুরু হয়নি। বিষয়টি আমাদের নজরে রয়েছে। এই রোগ প্রতিরোধে কী করা দরকার সেই ব্যাপারে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশিকা এলেই আমরা কাজ শুরু করে দেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Berry bugs Trombiculid mites Scrub typhus Fever
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE