Advertisement
১৭ জানুয়ারি ২০২৫

ধর্মঘটের পথে দু’পক্ষ মুখোমুখি

ধর্মঘটের সমর্থক ও তৃণমূল কর্মীদের কয়েকটি জায়গায় বচসা ছাড়া নির্বিঘ্নেই কাটল দু’জেলার প্রথম দিনের ধর্মঘট। তবে, বেশ কিছু রুটে বেসরকারি বাস কম চলায়, ভুগতে হল সেই সাধারণ মানুষকেই। 

ভিড়ে ঠাসা ঝালদার সাপ্তাহিক হাট।

ভিড়ে ঠাসা ঝালদার সাপ্তাহিক হাট।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:৩১
Share: Save:

ধর্মঘটের সমর্থক ও তৃণমূল কর্মীদের কয়েকটি জায়গায় বচসা ছাড়া নির্বিঘ্নেই কাটল দু’জেলার প্রথম দিনের ধর্মঘট। তবে, বেশ কিছু রুটে বেসরকারি বাস কম চলায়, ভুগতে হল সেই সাধারণ মানুষকেই।

ব্যাঙ্কে বাধা

বাঁকুড়া শহরের বঙ্গীয় গ্রামীণ বিকাশ ব্যাঙ্কের সামনে জমায়েত করে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন অল ইন্ডিয়া ফেডারেশন অব আরআরবি স্টাফের সদস্যেরা। ফলে ব্যাঙ্কের দরজা খোলা যায়নি। তৃণমূলের পতাকা নিয়ে কয়েকজন গিয়ে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিয়ে তাঁদের দাবিদাওয়া লেখা ফেস্টুন, ব্যানার খুলে দিয়ে ব্যাঙ্ক কর্মীদের ভিতরে ঢুকিয়ে দেন। এই ঘটনাকে ঘিরে সাময়িক উত্তেজনা দেখা দেয়।

সংগঠনের সর্বভারতীয় যুগ্ম সম্পাদক অনাদি মাহাতোর দাবি, “আমরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই দাবিদাওয়া নিয়ে ব্যাঙ্কের সামনে সরব হয়েছিলাম। তৃণমূলের পতাকা নিয়ে কিছু লোকজন এসে আমাদের ফেস্টুন ও ব্যানার খুলে ফেলে কর্মীদের জোর করে ব্যাঙ্ক খোলাতে বাধ্য করেন।’’ অভিযোগ অস্বীকার করে শাসকদলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভানেত্রী অলকা সেন মজুমদার পাল্টা দাবি করেন, ‘‘জোর করে কাউকে ব্যাঙ্কে ঢোকানো হয়নি। ব্যাঙ্কের কর্মীরাই বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে ভিতরে ঢুকেছেন।”

আদালতের কাজের ব্যাঙ্কের মাধ্যমে এ দিন কলকাতায় টাকা পাঠাতে পুরুলিয়া মফস্‌সল থানার দামদা গ্রাম থেকে অশোক গড়াই এসেছিলেন শহরে। কিন্তু, কোর্ট রোডের ওই ব্যাঙ্ক না খোলায় তিনি টাকা পাঠাতে পারলেন না। তিনি বলেন, ‘‘এ দিন টাকা পাঠানো খুব জরুরি ছিল। কিন্তু, ব্যাঙ্ক খোলেনি।’’ ওই থানার বাসিন্দা জিতেন্দ্রপ্রসাদ মাহাতোও দাবি করেন, ‘‘ঝাড়খণ্ডের সিন্দরিতে আমার এক আত্মীয় হাসপাতালে ভর্তি। তাঁর অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানোর প্রয়োজন ছিল।’’

নিশানায় পুলিশ

সকালে বড়জোড়া চৌমাথা মোড়ে বামপন্থী শ্রমিক সংগঠনগুলি রাস্তা অবরোধের চেষ্টা করে। অভিযোগ, পুলিশ জোর করে তাঁদের সরিয়ে দেয়। সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সুজয় চৌধুরীর অভিযোগ, “ধর্মঘট বিফল করতে সকাল থেকেই অতি সক্রিয় ছিল পুলিশ। পুলিশ ধাক্কা দিয়ে অবরোধকারীদের সরিয়ে দেয়।” অন্যদিকে, এ দিন রাইপুরের সবুজ বাজারে বাঁকুড়া জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পার্থপ্রতিম মজুমদার-সহ সিপিএম কর্মীরা পথ অবরোধ করতে গেলে পুলিশ তাঁদের আটক করে নিয়ে যায়। পরে অবশ্য ছেড়ে দেওয়া হয়। যদিও পুলিশ প্রশাসন অভিযোগ মানতে চায়নি।

মিছিল, পাল্টা মিছিল

মঙ্গলবার সকালে পুরুলিয়া শহরের মেন রোডে ধর্মঘটিদের মিছিলের সঙ্গে শাসকদলের নেতা-কর্মীদের বচসা বেধে যায়। দ্রুত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনে। ঝালদায় দু’পক্ষের আলাদা আলাদা সময়ে মিছিল বেরোনোয় অশান্তি এড়ানো গিয়েছে। কিন্তু, পাড়া থানার দুবড়ায় দু’পক্ষের মিছিল মুখোমুখি হলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। বেধে যায় বচসা। পুলিশি হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি বেশি গড়ায়নি। তবে, শাসকদলের কর্মীরা সরে যাওয়ার পরে ধর্মঘটিরা বাজার বন্ধ করান বলে অভিযোগ।

ভোগান্তি

সরকারি বাস পথে নামলেও এবং ট্রেন পরিষেবা সচল থাকলেও বেসরকারি বাস পথে নেমেছে কম। এ দিন অনেক রুটের যাত্রীদের বাসস্ট্যান্ডে তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করতে দেখা যায়। পরে শাসকদলের নেতৃত্ব খবর পেয়ে বেলার দিকে কিছু বাস নামে। সিটুর জেলা সভাপতি নিখিল মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ঝালদা, কোটশিলা, দঙ্গল, বামুনডিহা-সহ কয়েকটি জায়গায় অবরোধের জেরে বাস আটকে গিয়েছিল। পুলিশ গিয়ে সরিয়ে দেয়। বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর ও খাতড়া মহকুমা শহরের বাসস্ট্যান্ডেও বেসরকারি বাস সে ভাবে চলতে দেখা যায়নি। বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনের দাবি, ‘‘এসবিএসটিসি-র বাস অতিরিক্ত চালানো হয়েছে।’’

হাটে ভিড়

মকর সংক্রান্তির আগে এ দিনই ছিল ঝালদার শেষ সাপ্তাহিক হাট। ধর্মঘট হলেও হাটে ভিড় স্বাভাবিক ছিলই বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ডিমু গ্রামের চাষি মনোজ কুইরি, পুস্তি গ্রামের কাড়া বিক্রেতা অঙ্গদকুমার মাহাতো বলেন, ‘‘হাট জমজমাটই ছিল।’’ হাটে খাবার বিক্রেতা পশুপতি রায় বলেন, ‘‘বিক্রিবাট্টা ভালই হয়েছে।’’

পরিদর্শনে মন্ত্রী

দুপুর ১২টায় হঠাৎ পুরুলিয়ায় জেলাশাসকের অফিসে পরিদর্শনে যান রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো। তিনি বিভিন্ন দফতরে গিয়ে কর্মীদের অফিস আসতে অসুবিধা হয়েছে কি না, খোঁজ নেন। কেউ কেউ বেসরকারি বাস কম চলেছে বলে মন্ত্রীকে জানান। পরে মন্ত্রী বলেন, ‘‘এ দিন দেখলাম সবই একেবারে স্বাভাবিক। ধর্মঘটের কোনও প্রভাব পড়েনি।’’ জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় দাবি করেন, ‘‘ ‘‘জনজীবন স্বাভাবিক ছিল। সরকারি অফিসে হাজিরাও ছিল।’’ বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও দাবি করেন, “কোথাও গোলমাল হয়নি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Politics Bandh Bharat Bandh Jhalda
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy