Advertisement
০৪ মে ২০২৪

বায়োমেট্রিক হাজিরা কেন, তালা কলেজে

কলেজের শিক্ষক-কর্মীদের পাশাপাশি এ বার ছাত্রছাত্রীদের জন্যও বায়োমেট্রিক হাজিরা শুরু করেছে পুরুলিয়া শহরের সরকারি শিক্ষক শিক্ষণ মহাবিদ্যালয়ে (বিএড কলেজ)। আর তাতেই বেঁকে বসেছেন ছাত্রছাত্রীরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৬ ০০:২০
Share: Save:

কলেজের শিক্ষক-কর্মীদের পাশাপাশি এ বার ছাত্রছাত্রীদের জন্যও বায়োমেট্রিক হাজিরা শুরু করেছে পুরুলিয়া শহরের সরকারি শিক্ষক শিক্ষণ মহাবিদ্যালয়ে (বিএড কলেজ)। আর তাতেই বেঁকে বসেছেন ছাত্রছাত্রীরা। কেন ওই পদ্ধতিতে তাঁদের হাজিরা নেওয়া হবে, সেই প্রশ্ন তুলে মঙ্গলবার কলেজের দরজায় তালা ঝুলিয়ে দিলেন তাঁরা।

বস্তুত আগেই পড়ুয়ারা ওই পদ্ধতিতে তাঁদের হাজিরা নেওয়া যাবে না বলে দাবি করে আগেই কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু কোনও সদুত্তর না পেয়ে এ দিন তাঁরা বায়োমেট্রিক হাজিরা পদ্ধতি থেকে বাদ দেওয়ার দাবির সঙ্গে কলেজে শিক্ষক নিয়োগের দাবি ও পরিকাঠামো উন্নয়নের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। এ দিন কলেজ শুরুর সময়ে অফিস-সহ কয়েকটি ঘরে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ দেখান পড়ুয়ারা।

পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ কলেজে এলে পরিস্থিতি আরও উতপ্ত হয়ে ওঠে। কেন কলেজ ক্যাম্পাসে পুলিশ এসেছে, এই প্রশ্ন তুলে পড়ুয়ারারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য পুলিশের হস্তক্ষেপেই বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ বিক্ষোভ ওঠে। তবে ছাত্র-বিক্ষোভের জেরে এ দিন কলেজে পঠনপাঠনে প্রভাব পড়েছে।

কলেজের একটি সূত্রের খবর, শিক্ষক, কর্মী ও ছাত্রছাত্রীদের কলেজে নির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত হতে হবে বলে পরিচালন সমিতি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সে জন্য বায়োমেট্রিক হাজিরা পদ্ধতি গত জুলাই মাস থেকে শুরু করা হয়। কিন্তু প্রথম থেকেই ওই পদ্ধতিতে হাজিরা দিতে অনিচ্ছুক ছিলেন কলেজের প্রায় সমস্ত ছাত্রছাত্রী। তাঁদের যুক্তি, কোনও সরকারি প্রতিষ্ঠানে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বায়োমেট্রিক হাজিরা নেওয়া হয়, শিক্ষক বা কর্মীদের ফাঁকিবাজি রুখতে। ফলে ছাত্রছাত্রীদের এই পদ্ধতির আওতাভুক্ত করা যুক্তিহীন।

তাঁদের আরও বক্তব্য, কলেজের ক্লাস ফাঁকি দিলে আখেরে পরীক্ষার সময়ে তাদেরই সমস্যায় পড়তে হবে। ফলে নিজেদের তাগিদেই তাঁরা ক্লাস করছেন। কিন্তু এ ভাবে জোর করে হাজিরা পদ্ধতি তাঁদের উপরে চাপিয়ে দেওয়া, তাঁরা মানতে পারছেন না। তাঁরা জানাচ্ছেন, পুরুলিয়ার এই বিএড কলেজে নিয়ম রয়েছে, কলেজে ৭৫ শতাংশ উপস্থিতি না থাকলে কোনও ছাত্রকে পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হবে না। তা হলে কেন তাঁরা ক্লাস কামাই করবেন, সে প্রশ্ন ছাত্রছাত্রীরাই তুলেছেন।

আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের মধ্যে অর্পিতা গোস্বামী, অরিন্দম চক্রবর্তী, আবির আনসারিদের অভিযোগ, ‘‘কেন আমাদের বায়োমেট্রিক হাজিরা দিতে হবে, আগে এই প্রশ্ন তোলা হলে কলেজের টিচার-ইনচার্জ জানিয়েছিলেন, কলেজের পরিচালন সমিতির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু পরিচালন সমিতিতে ছাত্রদের কোনও প্রতিনিধি নেই। ফলে ছাত্রদের সঙ্গে আলোচনা না করে জোর করে একটা অর্থহীন সিদ্ধান্ত ছাত্রদের উপরে চাপিয়ে দিচ্ছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।” তবে এ প্রসঙ্গে টিচার-ইনচার্জ শ্যামল বিশ্বাসের যুক্তি, ‘‘সুষ্ঠু ভাবে কলেজ পরিচালনার জন্যই পরিচালন সমিতি শিক্ষক থেকে শুরু করে সবার জন্য বায়োমেট্রিক হাজিরা পদ্ধতি শুরু করেছিল। এটা সবাই মানছেন। ফলে ছাত্রছাত্রীদেরও তা মেনে নেওয়াই উচিত।”

এ দিন হাজিরা পদ্ধতি ছাড়াও কলেজে স্থায়ী শিক্ষকের অভাবে পঠনপাঠন ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন পড়ুয়ারা। তাঁদের অভিযোগ, কলেজে বর্তমানে মাত্র দু’জন স্থায়ী শিক্ষক রয়েছে। বাকিরা সবাই আংশিক সময়ের শিক্ষক। তাঁরা আবার পড়াশোনার কাজে বা অন্যান্য কাজে কলেজে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারেন না। ফলে কলেজে পঠনপাঠন ব্যাহত হচ্ছে। এই বিষয়ে টিআইসিকে বহুবার জানিয়েও ফল হয়নি। আন্দোলনকারী ছাত্রদের অভিযোগ, ‘‘কর্মরত ছাত্রছাত্রেরা ৭৫ হাজার টাকা ও সাধারণ পড়ুয়ারা ৬০ হাজার টাকা ‘ফি’ দিয়ে কলেজে ভর্তি হচ্ছেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ শিক্ষক নিয়োগ-সহ পরিকাঠামো উন্নয়নের দিকে নজর দিচ্ছেন না।”

ছাত্রদের দাবি, তাঁদের দাবি নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ আলোচনায় বসবেন বলে পুলিশের কাছে আশ্বাস পেয়ে বিক্ষোভ প্রত্যাহার করা হয়েছে।

এদিকে কলেজে পুলিশ ডাকার ঘটনায় পড়ুয়াদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে টিআইসি শ্যামলবাবু বলেন, ‘‘ওঁদের আন্দোলনে কলেজের কোনও ক্ষতি হলে আমাকেই জবাবদিহি করতে হবে। তাই পরিস্থিতি যাতে নিয়ন্ত্রের বাইরে চলে না যায়, তা সামাল দিতেই পুলিশকে খবর দিয়েছিলাম।”

কলেজে শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে তাঁর কার্যত কিছু করণীয় নেই বলে জানান শ্যামলবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘টিআইসি কলেজে শিক্ষক নিয়োগ করতে পারে না। কলেজে শিক্ষক নিয়োগের জন্য বহুবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Biometric time attendance student College
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE