Advertisement
০৩ মে ২০২৪

পুকুরের হাল দেখতে কমিটি

পুরুলিয়ার পুকুরগুলির হাল সরেজমিন খতিয়ে দেখতে পথে নামল ‘ব্লক লেভেল ওয়াটার বডিস অ্যান্ড বায়ো ডাইভারসিটি ম্যানেজমেন্ট, মনিটরিং অ্যান্ড প্রিজারভেশন কমিটি।

বদল: ছিল পুরুলিয়া শহরের দশের বাঁধ। এখন খেলার মাঠ। নিজস্ব চিত্র

বদল: ছিল পুরুলিয়া শহরের দশের বাঁধ। এখন খেলার মাঠ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৭ ০৯:২০
Share: Save:

দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ উঠছিল, শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে পুরনো পুকুরগুলি বুজিয়ে ফেলা হচ্ছে। এ বার, পুরুলিয়ার পুকুরগুলির হাল সরেজমিন খতিয়ে দেখতে পথে নামল ‘ব্লক লেভেল ওয়াটার বডিস অ্যান্ড বায়ো ডাইভারসিটি ম্যানেজমেন্ট, মনিটরিং অ্যান্ড প্রিজারভেশন কমিটি।

একটি মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে সম্প্রতি প্রশাসনের কাছে পুকুর বোজানো নিয়ে অভিযোগ জানানো হয়। সংগঠনের পুরুলিয়া জেলার মুখপাত্র আবু সুফিয়ান জানান, শহরের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের দশের বাঁধ, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সওদাগর বাঁধ এবং ওই ওয়ার্ডেরই জগন্নাথ কিশোর কলেজের অদূরে একটি পুকুর কে বা কারা একটু একটু করে বুজিয়ে ফেলছে। তিনি বলেন, ‘‘জলাশয় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। দীর্ঘদিন ধরে ওই জলাশয়গুলি এলাকায় রয়েছে। এখন শহর বাড়ছে। দেখা যাচ্ছে, জলাশয় বুজিয়ে তার মধ্যেই দেওয়াল গাঁথা হচ্ছে। কোথাও আবর্জনা ফেলে পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। কিন্তু পুরসভা উদাসীন।’’

২০ নম্বর ওয়ার্ডের দশের বাঁধ বোজানো নিয়ে কিছুদিন আগে সরব হয়েছিলেন পুরুলিয়া পুরসভার বিরোধী দলনেতা তথা পুরুলিয়ার বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায়। কছুদিন আগে দিনেদুপুরে পুকুরের পাড়ে পাঁচিল দেওয়ার কাজ চলছিল। বিরোধী কাউন্সিলর প্রদীপ মুখোপাধ্যায় ও স্থানীয় বাসিন্দারা সেই কাজ আটকান। পরে জানা যায়, পুরসভার পক্ষ থেকেই পুকুর ঘেরার জন্য পাঁচিল দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছিল। ওই পুকুরটি বুজে যাচ্ছে ও পুকুরের জমি দখল হয়ে যাচ্ছে স্বীকার করে পুরসভার বক্তব্য ছিল, যাতে পুকুর রক্ষা করা যায় সে জন্যই সেটি ঘেরার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। যদিও পুরসভার এই বক্তব্য মানতে চাননি বিধায়ক। তিনি বলেছিলেন, পুরসভা যে এই পুকুরটি পাঁচিল দিয়ে ঘিরে দেবে এই মর্মে বোর্ড মিটিংয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।

আবু সুফিয়ান বলেন, ‘‘ঘটনা যাই হোক, পুকুরগুলি কিন্তু পুরসভার ও প্রশাসনের উদাসীনতায় বুজে যাচ্ছে। তাই আমরা জলাশয় রক্ষার জন্য সরকারের ব্লক লেভেল ওয়াটার বডিস অ্যান্ড বায়ো ডাইভারসিটি ম্যানেজমেন্ট, মনিটরিং অ্যান্ড প্রিজারভেশন কমিটির কাছে চিঠি দিয়েছিলাম।’’ তাঁর দাবি, এর আগেও পুরসভা ও প্রশাসনের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কাজ হয়নি। পুরুলিয়ার বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শহরে অনেক দিন ধরেই জলের অভাব। তার পরেও রাতের অন্ধকারে বিভিন্ন পুকুর বেপরোয়া ভাবে বোজানো চলছে। দশের বাঁধ বোজানো নিয়ে আমি প্রতিবাদ করেছি। জলাভূমিগুলি যে কোনও মূল্যেই রক্ষা করা উচিত।’’

প্রশাসন সূত্রের খবর, সংগঠনের চিঠি পাওয়ার পরে গত ২৬ জুলাই মিটি পুকুর ভরাটের অভিযোগ নিয়ে বৈঠকে বসে। শুক্রবার কমিটির সদস্যরা পুকুরগুলি সরজমিন ঘুরে দেখেন। কমিটির চেয়ারম্যান তথা বিডিও (পুরুলিয়া ১) দিব্যজ্যোতি দাস বলেন, ‘‘আমাদের কাছে পুরএলাকার তিনটি পুকুর ভরাটের বিষয়ে অভিযোগ এসেছিল। বৈঠক করে আমরা পুকুরগুলি পরিদর্শন করেছি। এর পরে ভূমি দফতরের নথি থেকে দেখা হবে ওই পুকুরগুলিতে কতটা জমিতে রয়েছে। সেই হিসেব করে বোজানো হয়েছে কি না তা জানা যাবে। যদি বোজানো হয়ে থাকে, তাহলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

পুরুলিয়ার পুরপ্রধান সামিমদাদ খান বলেন, ‘‘আমাদের কাছে কেউ এই মর্মে কোন আবেদন করেননি। তা ছাড়া জলাভূমিতে নির্মাণের জন্য পুরসভা কোনও অনুমতিও দেয়নি।’’ তাঁর দাবি, পুরসভা জলাভূমি বোজানোর বিপক্ষে। কমিটি তাঁদের কাছে কোনও সাহায্য চাইলে তা করা হবে বলে জানান সামিমদাদ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE