Advertisement
১০ মে ২০২৪
শুভজিৎদের বাঁচাতে রক্তদান

ফেসবুকে ডাক, পাশে প্রাক্তনী

ছটফটে ছেলেটাকে কয়েক দিনের মধ্যেই অমন চেহারায় দেখে প্রথম ধাক্কা খেয়েছিল তার স্কুলের সহপাঠীরা। শুভজিতের মতোই রক্তাল্পতার নানা অসুখে ভুগছে তাদের আরও কিছু সহপাঠী।

আমোদপুর জয়দুর্গা হাইস্কুলে চলছে শিবির। মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

আমোদপুর জয়দুর্গা হাইস্কুলে চলছে শিবির। মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আমোদপুর শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৬ ০১:৪৮
Share: Save:

ছটফটে ছেলেটাকে কয়েক দিনের মধ্যেই অমন চেহারায় দেখে প্রথম ধাক্কা খেয়েছিল তার স্কুলের সহপাঠীরা। শুভজিতের মতোই রক্তাল্পতার নানা অসুখে ভুগছে তাদের আরও কিছু সহপাঠী। রক্তের সন্ধানে নিয়মিত ছোটাছুটি করতে হয় তাদের পরিজনদের। বন্ধুদের প্রাণ বাঁচাতে তাই এগিয়ে এল স্কুলের সহপাঠীরা। দিন কয়েক আগে ফেসবুকে তারা দিয়েছিল রক্তদানের একটি ছোট্ট বার্তা। আমোদপুর জয়দুর্গা হাইস্কুলের পড়ুয়াদের সেই ডাকে সাড়া দিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে ভাই-বোনেদের জন্য রক্ত দিয়ে গেলেন প্রাক্তনীরা। মঙ্গলবার স্কুল চত্বরে আয়োজন হল রক্তদান শিবিরর। দিনের শেষে পূরণ হয়ে গেল ৭০ জনের লক্ষ্যমাত্রা। রক্তদাতাদের অধিকাংশই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী।

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর খানেক আগে শুভজিৎ দাস নামে স্কুলের নবম শ্রেণির এক দুঃস্থ ছাত্রের ‘অ্যাকুইউঁট লিউকোমিয়া’ ধরা পড়ে। শিক্ষকেরাই চাঁদা তুলে কলকাতায় তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু রক্তের অভাবে তার চিকিৎসা-সঙ্কট দেখা দেয়। তখন সুমন মণ্ডল নামে এক প্রাক্তন ছাত্র কলকাতায় গিয়ে রক্ত দিয়ে পরিস্থিতির সামাল দেন। তার পর থেকেই শুভজিতকে এখনও নিয়মিত রক্ত দিতে হয়। নিয়মিত রক্ত লাগে থ্যালেসেমিয়া আক্রান্ত নবম শ্রেণির সুরজ মণ্ডল, অটো হেপাটাইটিস আক্রান্ত একাদশ শ্রেণির মৌমিতা চট্টোপাধ্যায়-সহ বেশ কিছু ছাত্রছাত্রীকে। এ বার স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে তাই ওই সব ছাত্রছাত্রীদের জন্য রক্তদান শিবিবের উদ্যোগ নেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। পড়ুয়ারা ফেসবুকের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয় সেই কথা।

ফেসবুকে জানতে পেরেই এ দিন রক্ত দিতে স্কুলে হাজির হন প্রাক্তন ছাত্র তথা মহম্মদবাজার প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ময়ূখ সাহা, মল্লারপুর লাগোয়া টেকেড্ডার সিভিক ভলান্টিয়ার রুদ্রদেব ঘোষ। তাদের সঙ্গেই সপরিবারে রক্ত দেন স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি বাণীপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, তাঁর স্ত্রী মল্লিকাদেবী এবং ছেলে পলাশ। তিন জনই স্কুলের প্রাক্তনী। কিছু শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীর পাশাপাশি রক্ত দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট সাঁইথিয়া চক্রের অবর স্কুল পরিদর্শক নৃপেন মুখোপাধ্যায়ও। রক্ত দিয়ে তাঁরা বলেন, ‘‘চার দিকে রক্তের যে আকাল দেখছি, তার পর আর ফেসবুকে ছাত্রছাত্রীদের আবেদনে সাড়া না দিয়ে পারিনি। প্রয়োজনে প্রতি বছরই রক্তদান শিবিরে হাজির হব।’’ প্রতিজ্ঞা করেছেন তাঁরা।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুশান্ত ভট্টাচার্য জানান, বহু সময় ছেলেমেয়ের রক্তের জন্য অভিভাবকেরা তাঁদের কাছে আসেন। এত দিন সে ভাবে সাহায্য করা যায়নি। তবে, এ দিনের পরে সুশান্তবাবু বলছেন, ‘‘রক্তদান শিবির করে আমরা যা ডোনার কার্ড পেয়েছি, এ বার তা দিয়ে অন্তত ছেলেমেয়েগুলোর পাশে দাঁড়াতে পারব। তা দিয়ে অভিভাবকেরা প্রয়োজনীয় রক্ত জোগাড় করে নিতে পারবেন।’’ শুধু তাঁদের স্কুলই নয়, অন্য স্কুলের পড়ুয়াদের জন্যও ওই ডোনার কার্ড দেওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছে জয়দুর্গা হাইস্কুল।

রক্ত না দিলেও এ দিনের শিবিরে হাজির থেকে উদ্যোক্তাদের পাশে ছিলেন সাঁইথিয়ার বিডিও অতনু ঝুড়ি, আমোদপুর পঞ্চায়েতের প্রধান কৃষ্ণা ভট্টাচার্য। তাঁরা বলছেন, ‘‘প্রশংসনীয় উদ্যোগ। অন্যরাও এ ভাবে এগিয়ে এলে রক্তের সঙ্কট অনেকটাই মিটে যাবে বলে আমাদের বিশ্বাস।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Blood donation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE