Advertisement
E-Paper

ঘাটের কাজ পেতে বোমাবাজি, মারধর

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, মযূরাক্ষী নদী ঘেঁষা খটঙ্গা পঞ্চায়েতের কেঁদুলি গ্রামটি ঝাড়খণ্ড সীমান্তে রয়েছে। যেহেতু কেঁদুলি গ্রামের পাশেই ঘাট, সেই জন্য পালা করে কাজ করেন গ্রামের প্রায় একশো শ্রমিক। যন্ত্র দিয়ে লরিতে বালি লোড করার পর তাঁরা ‘চারাই’ এর কাজ করেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৭ ০১:৩৮
নিশান: সিউড়ি ১ ব্লকের কেঁদুলি গ্রামের একটি ক্লাবের দেওয়ালে বোমার ছাপ। পড়ে রয়েছে বাসনপত্রও। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

নিশান: সিউড়ি ১ ব্লকের কেঁদুলি গ্রামের একটি ক্লাবের দেওয়ালে বোমার ছাপ। পড়ে রয়েছে বাসনপত্রও। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

দিন কয়েক আগে মযূরাক্ষী নদীতে বালি তোলার গভীর খাদে তলিয়ে এক পড়ুয়ার মৃত্যুকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়েছিল সিউড়ি ১ ব্লকের খটঙ্গা পঞ্চায়েতের রাইপুর। এ বার কোন গ্রামের শ্রমিকেরা বালি ‘চারাই’ -এর কাজ পাবে তা নিয়ে বিবাদের জেরে উত্তপ্ত হয়ে উঠল ওই পঞ্চায়েতেরই কেঁদুলি গ্রাম। চলল, বোমাবাজি, ভাঙচুর ও মারধরের ঘটনা। গ্রামবাসীর অভিযোগ, বালি কারবারের সঙ্গে যুক্তরা দুষ্কৃতী দিয়ে আক্রমণ করিয়েছে। যোগ রয়েছে শাসকদলেরও। রবিবার রাতের ওই ঘটনার পরে গ্রামে পুলিশ বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সোমবারও গ্রামে পুলিশ রয়েছে। জেলাপুলিশের এক কর্তা জানান, পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, মযূরাক্ষী নদী ঘেঁষা খটঙ্গা পঞ্চায়েতের কেঁদুলি গ্রামটি ঝাড়খণ্ড সীমান্তে রয়েছে। যেহেতু কেঁদুলি গ্রামের পাশেই ঘাট, সেই জন্য পালা করে কাজ করেন গ্রামের প্রায় একশো শ্রমিক। যন্ত্র দিয়ে লরিতে বালি লোড করার পর তাঁরা ‘চারাই’ এর কাজ করেন। ‘চারাই’ কী? ‘চারাই’ হচ্ছে লরি বা ট্রাক্টরে লোড করার পর বালি যাতে না গাড়ি থেকে না পড়ে যায় সেটা রুখতে বালির উপরের ভাগ সমান করে দেওয়া। কিন্তু রবিবার সেই কাজে যোগ দিতে গিয়েই বিবাদের সূত্রপাত। জানা গিয়েছে, সকালে এই কাজ করতে গিয়ে কেঁদুলিগ্রামের ২০ জন শ্রমিক দেখেন অন্য লোক সেই কাজ করছে। সেই কারণেই কাজ যোগ দিতে পারেননি তাঁরা।

এই নিয়ে গোলমাল বাধে। তর্কাতর্কি হওয়ার পরে সকলে ফিরে এসেছিলেন। কিন্তু রাতে বালিকারবারীদের মদতে বাহিরাগতরা দু’দফায় কেঁন্দুলি গ্রামে চড়াও হয়। প্রথমবার রাত ১১টা নাগাদ এবং পরে রাত দেড়টা নাগাদ। গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে বোমাবাজি করে। স্থানীয় একটি ক্লাবে ঢুকে সেখানে বোমাবাজি ও ভাঙচুর করে। দুষ্কৃতীদের মারে জখম হন তিনজন গ্রামবাসী। মুকুল গড়াই, সাবিত্রী বাগদি. সুধা বাউড়ি, শ্রীকান্ত মণ্ডলেরা বলেন, ‘‘গ্রামের সামনে বালি ঘাট, কেন আমার কাজ পাব না— এই নিয়েই বিতর্ক শুরু হয়েছিল। তারপর রাতে ৫০জন দুষ্কৃতী আমাদের গ্রামে তাণ্ডব চালায়।’’

সোমবার সকালে এই ঘটনার জন্য ক্ষোভ গিয়ে পড়ে এলাকার তৃণমূলের বুথ সভাপতি গধাধর সৌ এর উপর।

অভিযোগ বালি ঘাটের শ্রমিক সরবরাহ করা ওঁর দায়িত্বে। কেন অন্যগ্রামের লোকদের এভাবে কাজ দিয়ে গ্রামের লোকের বিপদ ডেকে আনলেন তিনি সেই জন্য গ্রামের মাহিলারা বুথসভাপতির বাড়িতে চড়াও হন। হেনস্থা করা হয় তাঁর পরিবারকেও। গ্রামবাসীদের আরও দাবি, বেআইনি ভাবে বালি ঘাটগুলি চলছে। যদিও বালিঘাট বেআইনি নয় বলেই জানচ্ছেন তৃণমূলের বুথ সভাপতি গদাধর সৌ। তাঁর দাবি, ‘‘মানুষের ভাল করতে গিয়েই বদনাম নিতে হল। প্রশাসনও বলছে, ওই এলাকায় ই-অকশান হয়েছে তবে ঠিক কোন দাগ খতিয়ান নম্বরে ঝামেলা সেটা দেখতে হবে। সোমবার বিকাল পর্যন্ত পুলিশের কাছে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি।’’

তিনি বলেন, ‘‘আমাদের পারিবারিক জমির উপর দিয়ে বালির লরি যাতায়াত করে বলে বছর পাঁচেক আগে জমিটা লিজ দিয়েছিলাম আগের বার বরাত পাওয়া ঠিকাদারকে। মাস চারের আগে ফের হাঁক হলে যিনি বালি তোলার বরাত পেয়েছেন তাঁর সঙ্গেও একই চুক্তিতে জমি দিই। পরিবর্তে বালিঘাট দেখাশোনার জন্য আমাকে দিনে ১৫০ টাকা বেতনে কাজ দেওয়া হয়েছে। যেহেতু আমার একটা রাজনৈতিক পরিচয় আছে তাই এলাকার গ্রামের ১০০ শ্রমিককে পাঁচটি দলে ভাগ করে কাজ দিয়েছিলাম। কিন্তু পাশের কুস্তোরগ্রাম যেটা এই বুথের মধ্যেই পড়ে, ৪০জন শ্রমিক আমার কাছে কাজ চাইলে আমি রাজি হয়েছিলাম এটাই আমার অপরাধ।’’

কেঁদুলির শ্রমিকরা সেটা মানতে না চাওয়ায় বিবাদ বাঁধে। বিষয়টি ব্লক নেতৃত্ব ও পুলিশকে জানানো হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

Kenduli Bombing কেঁদুলি
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy