Advertisement
০৫ মে ২০২৪
TMC

দুই গোষ্ঠীর ‘বোমাবাজি’ বেলিয়াড়ায়

ঘটনার জন্য তৃণমূলের দিকেই আঙুল তুলেছে বিজেপি।

উদ্ধার: জল ভর্তি বালতি করে বোমা সরাচ্ছেন পুলিশকর্মীরা।

উদ্ধার: জল ভর্তি বালতি করে বোমা সরাচ্ছেন পুলিশকর্মীরা। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
 বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০২১ ০৫:৩৭
Share: Save:

ভোর থেকে বোমাবাজি, বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠল বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরের বেলিয়াড়া। অভিযোগ, এলাকা দখলে রাখা নিয়ে রবিবার ভোর তিনটে থেকে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বের জেরে নতুন করে অশান্ত হয়ে উঠল ওই এলাকা।

সকালে গ্রামে পুলিশ বাহিনী গিয়ে প্রচুর বোমা উদ্ধার করে। গ্রেফতার করা হয় তৃণমূলের উলিয়াড়া অঞ্চল সভাপতি রুস্তম আলি খান, গণেশ মুখোপাধ্যায়, শেখ দাউদ, আলি মণ্ডল, শেখ নূর আলম, শেখ বদরুআলম ও শেখ টিটুকে। ধৃতদের এ দিন বিষ্ণুপুর আদালতে তোলা হয়। পুলিশ জানায়, তাঁদের মধ্যে এক জনের কোভিড পজ়িটিভ হওয়ায় তাঁকে বিষ্ণুপুর কোভিড ওয়ার্ডে ও দু’জনের পুলিশ হেফাজত হয়। বাকি চার জনের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।

এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) কুতুবউদ্দিন খান বলেন, “বোমাবাজির খবর পেয়েই আমরা ঘটনাস্থলে যাই। ২৮টি বোমা উদ্ধার করা হয়। হামলার ঘটনায় যুক্ত অভিযোগে সাত জনকে গ্রেফতার করা হয়। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা আছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।”

গত বছর ১ অগস্ট উলিয়াড়া পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রাক্তন প্রধান শেখ বাবর আলিকে দুষ্কৃতীরা বাড়ি থেকে তাড়া করে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে ও বোমা মেরে নৃশংস ভাবে খুন করে। সেই ঘটনায় নাম জড়িয়েছিল তৃণমূলের বর্তমান প্রধান তাসমিনা খাতুনের স্বামী রহিম মণ্ডল ও তাঁর সঙ্গীদের বিরুদ্ধে। অভিযুক্তেরা গ্রেফতার হলেও পরে জামিন পান। সেই থেকে ওই এলাকার নিহত তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর লোকেরা ঘরছাড়া ছিলেন বলে অভিযোগ। এমনকি ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকে পুলিশ পাহারা নিয়ে পঞ্চায়েতে যেতে হয় প্রধান তাসমিনাকে। তবে বাড়িতে ঢুকতে পারেননি বলে তাঁর অভিযোগ। বিধানসভা নির্বাচনের কিছু দিন আগে ঘরছাড়াদের ধাপে ধাপে বাড়ি ফেরানো হয়। স্থানীয় সূত্রের খবর, তারপরে ছোটখাট গোলমাল হলেও এলাকা এক প্রকার শান্তিতে ছিল। কিন্তু শনিবার রাতে ফের দফায় দফায় বোমার শব্দে উত্তেজনা ছড়ায় বেলিয়াড়ায়।

রবিবার সকালে এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বোমা ফাটার চিহ্ন। বেশ কয়েকটি বাড়ির জানলা-দরজার ভেঙে পড়ে রয়েছে। চার পাশে ভাঙা কাচের টুকরো।

নিহত তৃণমূল নেতা শেখ বাবর আলির পড়শি আশিয়া বিবির দুয়ারে তখনও পড়েছিল একটি তাজা বোমা। তিনি অভিযোগ করেন, “ভোর তিনটে থেকে বাড়ির কাছে বোমা বৃষ্টি শুরু হয়। চলে ঘণ্টা তিনেক। ঘরদোর ছেড়ে পড়শির বাড়িতে চলে যাই। সকালে ঘরে ঢুকতে গিয়ে দেখি, দরজার সামনেই একটি বোমা পড়ে। ভয়ে বাড়িতে না ঢুকে বেরিয়ে চলে আসি। বেশ শান্তিতেই ছিলাম কয়েকটা মাস। আবার অশান্তি শুরু হয়ে গেল।’’

উলিয়াড়া পঞ্চায়েতের প্রধান তাসমিনা খাতুনের অভিযোগ, ‘‘আমাদের আবার ঘরছাড়া করে দেওয়ার জন্য দলের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর লোকজন বোমা মারামারি শুরু করেছে। ভোর চারটের সময় ঘুম থেকে বাচ্চাটাকে তুলে এক আত্মীয়ের বাড়িতে লুকিয়ে থাকি। শুনেছি পরে ওরাই এক বাক্স বোমা এনে আমার বাড়ির সামনের ঝোপে লুকিয়ে রেখে পুলিশকে খবর দেয়। আমাকে পঞ্চায়েত প্রধানের পদ থেকে সরানোর জন্যই ওরা এ রকম করছে। আমি কোনও ভাবেই প্রধানের পদ থেকে সরব না।”

অন্য দিকে, প্রাক্তন প্রধান শেখ বাবর আলির গোষ্ঠীর স্থানীয় তৃণমূল কর্মী শেখ সাবির আলির দাবি, ‘‘বাবর আলির খুনের মামলার সাক্ষীদের ভয় দেখাতেই প্রধানের ঘনিষ্ঠ পঞ্চায়েত সদস্য সেলিম পাহলোয়ান দলবল নিয়ে এলাকায় বোমাবাজি করছে। আমাদের ঘনিষ্ঠ আট জনের বাড়ি ওরাই ভাঙচুর চালায়। পুলিশ আসার পরে আমরা বাড়ি থেকে বেরোই।” যদিও সেলিমের পাল্টা দাবি, ‘‘আমাদের গ্রামে ঢোকা মেনে নিতে পারছে না বলেই ওরা ভয় দেখাতে বোমাবাজি করল। আমাদের কয়েকজন আহত হলেও ভয়ে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারিনি।’’

এই ঘটনার জন্য তৃণমূলের দিকেই আঙুল তুলেছে বিজেপি। দলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুজিত অগস্তির দাবি, ‘‘বোমা মারার অভিযোগে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা গ্রেফতার হয়েছে। বাংলার মানুষ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন, কাদের হাতে তাঁরা রাজ্যকে তুলে দিয়েছেন।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি শ্যামল সাঁতরার পাল্টা দাবি, ‘‘গোষ্ঠিদ্বন্দ্ব নয়, ওই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ব্যক্তিগত আক্রোশের জেরেই অশান্তি চলছে। দল কোনও ভাবেই যুক্ত নয়। তবে ওই এলাকা যাতে শান্ত থাকে, দলের তরফে সে চেষ্টা করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE