Advertisement
E-Paper

দারিদ্র বাধা নয়, দেখাল চার কন্যা

দারিদ্রের হার্ডল টপকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত দৌড়নো গিয়েছে। কিন্তু এর পর কী হবে? প্রচুর নম্বর পেয়ে মেয়েরা পাশ করার পরেও কলেজে ভর্তি হওয়া নিয়ে দুর্ভাবনায় রঘুনাথপুরের দুই পরিবার। রঘুনাথপুর শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের যমজ বোন দৃষ্টি ও বৃষ্টি, দু’জনেই চোখ ধাঁধানো ফল করেছে। কার্যত কোনও গৃহশিক্ষক ছিল না। স্থানীয় এক শিক্ষক বিনামূল্যে দুই বোনকে পড়া বুঝিয়ে দিতেন। বোন বৃষ্টির থেকে মাত্র এক মিনিটের বড় দৃষ্টি বিজ্ঞান বিভাগে পেয়েছে ৭৩.৪ শতাংশ নম্বর। জি ডি ল্যাং হাইস্কুল থেকে পরীক্ষা দিয়েছিল সে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৫ ০১:১৩
যমজ বোন দৃষ্টি ও বৃষ্টি।

যমজ বোন দৃষ্টি ও বৃষ্টি।

দারিদ্রের হার্ডল টপকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত দৌড়নো গিয়েছে। কিন্তু এর পর কী হবে? প্রচুর নম্বর পেয়ে মেয়েরা পাশ করার পরেও কলেজে ভর্তি হওয়া নিয়ে দুর্ভাবনায় রঘুনাথপুরের দুই পরিবার।

রঘুনাথপুর শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের যমজ বোন দৃষ্টি ও বৃষ্টি, দু’জনেই চোখ ধাঁধানো ফল করেছে। কার্যত কোনও গৃহশিক্ষক ছিল না। স্থানীয় এক শিক্ষক বিনামূল্যে দুই বোনকে পড়া বুঝিয়ে দিতেন। বোন বৃষ্টির থেকে মাত্র এক মিনিটের বড় দৃষ্টি বিজ্ঞান বিভাগে পেয়েছে ৭৩.৪ শতাংশ নম্বর। জি ডি ল্যাং হাইস্কুল থেকে পরীক্ষা দিয়েছিল সে। আর বোন বৃষ্টি রঘুনাথপুর গার্লস হাইস্কুল থেকে পরীক্ষা দিয়ে কলা বিভাগে পেয়েছে ৬৯.২ শতাংশ নম্বর। দৃষ্টি এ বার জয়েন্ট এন্ট্রান্সও দিয়েছে। কিন্তু ওই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং বা ডাক্তারি পড়ার সুযোগ মিললে কী হবে আর ভাবতে চাইছে না সে। ভূগোলে ৭৪ শতাংশ নম্বর পাওয়া বৃষ্টির ইচ্ছা ওই বিষয়ে অনার্স পড়ার। কিন্তু ‘সেল্ফ ফিনান্স কোর্সে’ ভূগোল পড়া ব্যয়বহুল বলে বৃষ্টি মত বদলে এখন রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স নিতে চাইছে। কিন্তু তাও হবে কি না সংশয়ে দুই বোন।

পূজা (বাঁ দিকে) ও পায়েল।

তাদের বাবা ক্যুরিয়র সংস্থার কর্মী সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় সংসার সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। ঝান্ডা পাড়ায় দুই ছোট কামরার বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে ভাড়ায় রয়েছেন তিনি। আয়ের একটা বড় অংশ যায় বাড়ির ভাড়া মেটাতে। তারই মধ্যে দুই মেয়ে পরীক্ষায় ভাল ফল করার চিন্তায় পড়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘মেয়েরা আর পড়তে চায়। কিন্তু উচ্চশিক্ষার খরচ তো কম নয়। অত টাকা জোগাড় হবে কোথা থেকে, জানি না।’’ দুই মেয়ের মা সোনালীদেবী বলেন, ‘‘আমার মেয়েদের বরাবরের ইচ্ছা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে পরিবারের আর্থিক সাচ্ছন্দ্য ফিরিয়ে আনার। কিন্তু উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত কষ্ট করে পড়াতে পেরেছি। এ বার কী হবে?’’ মুখ শুকিয়ে যায় মায়ের।

ওই ওয়ার্ডেই বাস আরও দুই আঁধার ঘরের মানিক দুই বোনের— পায়েল শিকদার ও পূজা শিকদার। পায়েলের থেকে এক বছরের বড় হলেও দুর্ঘটনায় পড়ে তার একটা বছর নষ্ট হয়েছিল পূজার। দুই বোনই এ বার রঘুনাথপুর গার্লস হাইস্কুল থেকে কলা বিভাগে উচ্চমাধ্যমিকে বসেছিল। তবে প্রাপ্ত নম্বরে দিদিকে টপকে গিয়েছে বোন পূজা। সে পেয়েছে ৮০.৬ শতাংশ নম্বর আর পায়েল পেয়েছে ৭৩ শতাংশ নম্বর। দুই মেয়ের এই সাফল্যে প্রাণ খুলে হাসতেও পারছেন না বাবা গিরিধারী শিকদার। তিনি রঘুনাথপুর পুরসভার দীর্ঘদিনের অস্থায়ী কর্মী। রোজগার অতি সামান্য। গিরিধারীবাবু বলেন, ‘‘ওই রোজগারে এখন সংসার টানা, তিন ছেলেমেয়েকে পড়াতে আর পারছি না। তাই অন্যান্য ছোটখাটো কাজও মাঝে মধ্যে করি। কিন্তু তাতেও দুই মেয়েকে আর উচ্চশিক্ষা দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু এত ভাল ফল করায় এ বার খুব দ্বিধার মধ্যে পড়ে গিয়েছি।”

পাশের পাড়ার দুই যমজ বোনের মতোই কার্যত কোনও গৃহশিক্ষক ছিল না এই দুই বোনের। পায়েলের ইচ্ছে, বাংলায় অনার্স নিয়ে পড়ার। আর পূজা চাইছে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স নিয়ে পড়তে। তবে সাধ ও সাধ্যের মধ্যে রয়েছে আর্থিক অন্তরায়। দুই বোনই বলে, ‘‘স্নাতক হওয়ার পরে প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষায় বসে শিক্ষকতা করতে চাই। তাহলে পরিরারের আর্থিক হাল ফেরাতে পারব।” এই ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর কৃষ্ণা সিংহ বলেন, ‘‘দু’টি পরিবারের চার বোন যে ভাবে আর্থিক প্রতিকূলতাকে জয় করে পরীক্ষায় সাফল্য পেয়েছে, তা এলাকায় নজির তৈরি করেছে। কিন্তু দু’টি পরিবারই দারিদ্রের কারণে মেয়েদের কলেজে পড়াতে সমস্যায় পড়েছে। পুরসভার কাছে পরিবারগুলিকে আর্থিক সাহায্য দেওয়ার আবেদন জানাব।”

Raghunathpur Brilliant result G D Highschool teacher student school Higher Secondary
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy