জেলায় চলল না কেবল বেসরকারি বাস। আর সব কিছুই চলল আর পাঁচটা দিনের মতোই। তা দেখে দিনের শেষে চওড়া হাসি হেসে শাসকদলের নেতাকর্মীরা জানাচ্ছেন, নোটে বেসামাল আমজনতা বামেদের ১২ ঘণ্টার ধর্মঘটকে আমলই দেননি। পুলিশ প্রশাসন সূত্রের খবর, এ দিন জেলার কোথাও কোনও মারধর, হামলার মতো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর নেই।
নোট বাতিলের পরে জন সাধারণের দুর্ভোগের কথা তুলে পরস্পরের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিল শাসকদল তৃণমূল ও বাম দলগুলি। বামেরা ডাকে ১২ ঘণ্টার ধর্মঘট। শাসক দল সেই ধর্মঘটের বিরুদ্ধে ছিল। দিনের শেষে সাঁইথিয়া, মহম্মদবাজার, বোলপুর-শান্তিনিকেতন, সিউড়ি এলাকা ঘুরে দেখা গিয়েছে ধর্মঘটের তেমন কোনও প্রভাবই পড়েনি। দোকান-পাঠ, স্কুল-কলেজ, পুরসভা, ব্যাঙ্ক, পোস্টঅফিস-সহ সমস্ত সরকারি অফিস খোলা ছিল। মহম্মদবাজারের পাথর শিল্পাঞ্চলের কাজও অন্য দিনের মতো চালু ছিল। সরকারি বাস, বর্ধমান সাহেবগঞ্জ লুপ লাইন ও সাঁইথিয়া-অন্ডাল লাইনেও ট্রেন চলাচল ছিল স্বাভাবিক।
তবে এ দিন পথে বেসরকারি বাস চোখে পড়েনি বললেই চলে। ট্রাক বা অন্যান্য যান কম চলেছে। বেসরকারি বাস চলেনি রামপুরহাট মহকুমায়। কেন বাস বন্ধ, সে প্রশ্ন তুলে রামপুরহাট বাসস্ট্যান্ডে থাকা বাস মালিকদের একাংশের তিনটি লাক্সারি বাস ভাঙচুর চালায় অভিযোগ ওই বাসের মালিকদের। তৃণমূল প্রভাবিত শ্রমিক ইউনিয়নের ইন্ধনেই ওই ভাঙচুর হয়েছে বলেও অভিযোগ। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সঞ্জীব বর্মণের কথায়, রামপুরহাট বাসস্ট্যান্ডের কর্মচারীরা ধর্মঘটের সমর্থনে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে বাস চালু রাখেননি। সেই ক্ষোভেই ভাঙচুর চালানো হয়েছে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ কর্মীরা নিষ্ক্রিয় ছিলেন বলেও সঞ্জীববাবুর অভিযোগ। রামপুরহাট মহকুমা পুলিশ আধিকারিক কমল বৈরাগ্য সে অভিযোগ মানতে চাননি। অভিযোগ উড়িয়েছেন তৃণমূল প্রভাবিত বীরভূম জেলা সড়ক পরিবহণ বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক আঙ্গুর শেখও। তাঁর কথায়, ‘‘সবই বিরোধীদের চক্রান্ত।’’

সিউড়ির জেলা প্রশাসনিক ভবনে স্বাভাবিক হাজিরা (ডান দিকে, উপরে)। বোলপুরে দিব্য চলল বিকিকিনি।
এ দিন দুপুরে বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙা বাসের কাঁচের টুকরো তখনও পড়ে! বাসগুলি অবশ্য সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। রামপুরহাট বাসস্ট্যান্ড এলাকার বাসের কর্মচারী থেকে বাসস্ট্যান্ডের দোকানি, সাধারণ যাত্রীরা জানান, রামপুরহাট বাসস্ট্যান্ড থেকে এ দিন কোনও বেসরকারি বাস চলাচল করেনি। তাতে হয়েছে দুর্ভোগও। জঙ্গিপুর যাওয়ার জন্যে দীর্ঘক্ষণ রামপুরহাট বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করেো বাস পাননি সাত-আট জন রাজমিস্ত্রি। দুপুর একটার সময় তাঁরা সরকারি বাস ধরার জন্যে জাতীয় সড়কের উপরে বগটুই মোড়ের দিকে রওনা দেন। নারায়ণপুরের বসিন্দা সঞ্জয় মাল, মাসড়ার জিয়াউর ইসলামদের দেখা গেল দীর্ঘ অপেক্ষার পরে মল্লারপুর যাওয়ার জন্যে বগটুই মোড় থেকে সরকারি বাস ধরতে। মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘বাসস্ট্যান্ড থেকে বাস যথারীতি চালু ছিল।’’ বেসরকারি বাস চালু রাখা নিয়ে গোলমাল ছাড়া রামপুরহাট মহকুমা এলাকায় ধর্মঘটের কোনও প্রভাব পড়েনি। এ দিন ধর্মঘটের সমর্থনে সিপিএম কর্মীরা রামপুরহাট শহরে মিছিল করেন। পাল্টা মিছিল করে তৃণমূল কর্মীরাও।
সাঁইথিয়া ও মহম্মদবাজার এলাকাতেও তেমন প্রভাব পড়েনি। দোকান-পাঠ, স্কুল-কলেজ, পুরসভা, ব্যাঙ্ক, পোস্টঅফিস-সহ সমস্ত সরকারি অফিস খোলা ছিল। মহম্মদবাজারের পাথর শিল্পাঞ্চলের কাজও অন্য দিনের মতো সচল ছিল। মিছিল করার কথা থাকলেও মহম্মদবাজার বা সাঁইথিয়া এলাকায় বামফ্রন্টের পক্ষে মিছিল করা হয়নি। কেন? সিপিএমের মহম্মদবাজার জোনাল কমিটির সম্পাদক প্রভাস মালের দাবি, ‘‘গোলমাল এড়াতেই মিছিল না করে জাতীয় সড়কের উপরে বাসস্টপে পিকেটিং করা হয়।’’ একই যুক্তি দিয়েছেন সিপিএমের সাঁইথিয়া জোনাল কমিটির সম্পাদক
জুরান বাগদিও।
সিপিএম মিছিল না করলেও ধর্মঘটের বিরোধিতা করে সাঁইথিয়ার পুরপ্রধান বিপ্লব দত্ত ও ব্লক সভাপতি সাবের আলি খানের নেতৃত্বে শাসক দল মিছিল করে। সিপিএমের মিছিল মুলতুবি নিয়ে তৃণমূলের শহর সভাপতি পিনাকীলাল দত্তের কটাক্ষ, ‘‘লোক নেই বলেই মিছিল করেনি। গোলমালের কথাটা অজুহাত।’’
প্রভাব পড়েনি বোলপুর-শান্তিনিকেতনেও। এ দিন পর্যটকদের আনাগোনা ছিল। হোটেল-লজ, বাজার এবং বাসস্ট্যান্ডে আর পাঁচটা দিনের মতোই লোক দেখা গিয়েছে। স্কুল-কলেজ, ব্যাঙ্ক, ডাকঘরের মতো প্রতিষ্ঠানেও ভিড় ছিল। চলেছে সরকারি বাস। তবে জেলার আর পাঁচটি জায়গার মতোই বেলা গড়াতে উধাও হয়েছে বেসরকারি বাস।
রবিবার রাতে বোলপুরের ব্যবসায়ী সঙ্ঘের পক্ষ থেকে এলাকায় বাজার-হাট স্বাভাবিক রাখতে মাইক বাজিয়ে প্রচার করা হয়। বণিক সঙ্ঘের বোলপুর ব্যবসায়ী সঙ্ঘের সম্পাদক সুনীল সিংহ বলেন, ‘‘নোট বাতিলের জেরে ব্যবসার অনেক ক্ষতি হয়েছে। আবার এক দিন ধর্মঘট হলে আরও ক্ষতি। তাই বাজার খোলা রাখার আবেদন জানানো হয়েছিল।’’
দোকান-পাট খোলা কিনা দেখতে সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরীর নেতৃত্বে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা এলাকা ঘোরেন। এ দিন বোলপুর-শান্তিনিকেতন বাজার এলাকায় এসইউসি-র পক্ষ থেকে প্রতিবাদ দিবস পালন হয়েছে। বোলপুরের বিভিন্ন এলাকায় এসইউসি-র নেতাকর্মীরা রাস্তার ধারে অবস্থান, বিক্ষোভ, পথসভা করেছেন।
তবে ধর্মঘটের সমর্থনে প্রচার মিছিল হয়নি বোলপুরেও।