স্কুল চত্বরে বা শ্রেণি কক্ষে যদি কেউ একটা প্লাস্টিকের প্যাকেট ফেলে, তাহলে তাকেই খুঁজে বের করতে হবে ২০টি প্যাকেট।
কোনও বকাবকি নেই। বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের প্রতি প্রধান শিক্ষিকার শুধু বুদ্ধিদীপ্ত নির্দেশই ম্যাজিক ঘটিয়েছে। খয়রাশোলের পাঁচড়া বসন্তকুমারী বালিকা বিদ্যালয়ের ঘটনা। ওই স্কুল এখন যথেষ্ট পরিচ্ছন্ন, সাফসুতরো। অথচ কয়েকমাস আগেও বিদ্যালয় পরিচ্ছন্ন রাখতে হিমসিম খেতে হত।
বিদ্যালয় সূত্রের খবর, খয়রাশোলের ওই স্কুলটিতে বর্তমানে পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণিতে প্রায় ৬০০ পড়ুয়া। শিক্ষিকার সংখ্যা ১৩ জন। পাঠদানের পাশাপাশি পরিচ্ছন্নতা বিশেষ গুরুত্ব পায়। কিন্তু সেটাই যেন কোথাও ধাক্কা খাচ্ছিল। শিক্ষিকার বলছেন, এমনিতেই স্কুল চত্বের বেশ কয়েকটি গাছের পাতা পড়ে নোংরা হয়। প্রতিদিন পালা করে স্কুল প্রাঙ্গণ পরিচ্ছন্ন করার ভার ছাত্রীদেরই। আবার কখন একসঙ্গেও সাফাই অভিযানে পড়ুয়া ও শিক্ষিকারা হাত লাগাতে হয়। কিন্তু সমস্যা বাড়িয়ে দিয়েছিল প্লাস্টিকের প্যাকেট। কেন না ছাত্রীদের সঙ্গে সঙ্গে আনা কেক, বিস্কুট, চানাচুর, চকলেট, চাটনি থেকে চিপসের প্যাকেট স্কুলময় নোংরা করে ফেলছিল ছাত্রীরাই। কিছুতেই যেন পরিচ্ছন্ন রাখা যাচ্ছিল না স্কুল চত্বর।
সহ-শিক্ষিকা কুহেলি রায়, শুভলক্ষী বর্মন, অপর্ণা রায়রা বলছেন, ‘‘এ ভাবে নোংরা ফেলো না- ছাত্রীদের একথা অনেক বুঝিয়েছিলাম, কাজ না হওয়ায় দোষী ছাত্রীটিকে চিহ্নিত করে প্রেয়ার লাইনে আলাদা দাঁড়াতে বলা, এমনকী চিহ্নিত ছাত্রীর দু-টাকা পাঁচ টাকা জরিমানার ব্যবস্থাও হয়েছিল। সবই বিফলে গিয়েছে।’’ শিক্ষিকারা বলছেন, জরিমানা করে তো তাঁরা বিপাকে পড়েছিলেন। বললেন, ‘‘ছাত্রীদের কাছে থেকে টাকা নিয়ে আমরা কী করব! আর প্যাকেট ফেলে দু-টাকা বা পাঁচ টাকা দেওয়াও এখন আর কোনও বিষয় ছিল না ওদের কাছে। এর থেকে বেশি কড়া কিছু করা যায় না। মানসিক বা শারীরিক শাস্তি দেওয়া যে নিষিদ্ধ!’’
ঠিক তখনই প্রধান শিক্ষিকা কাকলি নায়কের মাথা থেকে বেরিয়ে আসে ওই আইডিয়া, ম্যাজিকের মত কাজ হল তাতে। কাকলিদেবী বলছেন, ‘‘কে প্লাস্টিক ফেলছে সেটা জানাতে গোয়েন্দাগিরি করে ছাত্রীরাই।’’ শিক্ষিকার বলছেন, প্রথমদিকে ক্লাস ফাইভ থেকে নাইন জনা চারেক ছাত্রীকে এভাবে ২০টি প্যাকেট খুঁজে বের করার শাস্তিই সকলকে সতর্ক করেছে। শিক্ষিকাদের দাবি, স্বীকার করেছে ছাত্রীরাও। শ্রেয়সী চট্টোপাধ্যায়, নবনীতা সেন, চৈতানী সাঁই, লিপিকা কর্মকাররা বলছে, ‘‘একটা প্যাকেট ফেলে কে আর ২০টি প্যাকেট খুঁজবে, তার থেকে না ফেলাই ভাল। এখন আমাদের স্কুল বেশ পরিচ্ছন্ন থাকছে।’’
স্বচ্ছ ভারত মিশনের বাংলা সংস্করণ মিশন নির্মল বাংলা সফল করতে বীরভূম জেলা প্রশাসন আন্তরিক।
খয়রাশোল ব্লক প্রশাসন এ কাজে জেলার সেরা। রাখির দিন বোনকে শৌচাগার দেওয়া থেকে ব্লকের কদমডাঙা গ্রাম প্রথম প্লাস্টিক মুক্ত ঘোষিত হওয়া সবই খয়রাশোলে ঘটেছে।
যে পঞ্চায়েত এলাকায় ওই স্কুল সেই পাঁচড়া পঞ্চায়েতও নির্মল ঘোষিত হওয়ার পথে। স্কুল প্রাঙ্গণ পরিচ্ছন্ন রাখতে এ বার সেই খয়রাশোলের একটি বিদ্যালয়ের অভিনব ভাবনা নজরে এল। যা নিয়ে উচ্ছ্বসিত ব্লক প্রশাসন। খয়রাশোলের পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী অসীমা ধীবর বলছেন, ‘‘ওই স্কুটি অন্যদের অনুপ্রেরণা হতে পারে। আরও উৎসাহ দিতে আমরা জলদি ওই স্কুলে ভিজিট করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy