সম্প্রচার বিঘ্নিত। রঘুনাথপুর শহরের একটি বাড়িতে। ছবি: সঙ্গীত নাগ
চলেছে হাতে গোনা কয়েকটি চ্যানেল। তার বেশিরভাগটাই ‘ফ্রি’। জনপ্রিয় বেশ কিছু চ্যানেল টিভিতে দেখতে এখন টাকা লাগে। কিন্তু কড়ি ফেলেও সম্প্রচার দেখতে পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার বাসিন্দাদের একাংশের। সূত্রের খবর, ‘পেড চ্যানেলের’ অধিকাংশই বন্ধ দুই জেলার বিভিন্ন এলাকায়।
দিনান্তে বাড়ি ফিরে পছন্দের চ্যানেল দেখতে পাচ্ছেন না অনেকে। ধারাবাহিকের গল্প এগিয়ে যাচ্ছে, দেখার সুযোগ মিলছে না। খেলা নিয়ে যাঁদের উৎসাহ, বঞ্চিত হচ্ছেন তাঁরাও। কেবল অপারেটরদের দাবি, গ্রাহকদের সঙ্গে একই তিমিরে রয়েছেন তাঁরাও। কেউ কেউ বলছেন, পছন্দসই চ্যানেল দেখার ব্যবস্থা চালু করার মতো পুরো পরিকাঠামো এখনও তৈরি হয়নি।
কেবল টিভির অপারেটরদের একটি সংগঠনের দাবি, আগে বিনোদন, খবর বা খেলার মতো বিভিন্ন বিষয় মিলিয়ে মিশিয়ে জনপ্রিয় তালিকা তৈরি করে নিতেন তাঁরা। মাসের শেষে থোক টাকা দিয়ে গ্রাহক সেগুলি দেখতে পেতেন। ফেব্রুয়ারির গোড়া থেকে চালু হয়েছে নতুন নিয়ম। এখন ১৩০ টাকা আর তার সঙ্গে কর বাবদ সেট টপ বক্সের ভাড়া বাবদ আগাম দিতে হয়। সেই ‘প্যাকেজে’ নিখরচায় নির্দিষ্টি কিছু চ্যানেল দেখা যায়। বাদবাকি যে চ্যানেল দেখতে চান, তার জন্য আলাদা করে টাকা গুনে দিতে হবে।
গ্রাহক তাঁর পছন্দ মতো চ্যানেল বেছে আগাম টাকা দেবেন। কেবল অপারেটর তাঁর সেট টপ বক্সের নম্বরে সেই মতো চ্যানেলগুলি চালু করে দেবেন। প্রক্রিয়াটা এ রকমের। আর এখানেই বেশ কিছু জটিলতা হয়েছে বলে জানাচ্ছেন অপারেটররা। তাঁদের কারও কারও দাবি, নতুন নিয়মের ব্যাপারে অনেক গ্রাহকই ওয়াকিবহাল নন। কোন চ্যানেলের কত খরচ, সেই তালিকা আগেই তাঁরা গ্রাহকদের দিয়েছিলেন। কিন্তু অনেকেই আমল দেননি। টনক যখন নড়ে, নতুন ব্যবস্থা চালু হয়ে গিয়েছে। কেটে দেওয়া হয়েছে অনেক চ্যানেল। পুরুলিয়ার কিছু জায়গা থেকে জানা গিয়েছে, সেখানে গ্রাহকেরা বাংলা ধারাবাহিকের খান দুই আর খবরের গোটা দুয়েক চ্যানেল ছাড়া কিছু দেখতে পারছেন না।
অনেকে অভিযোগ করছেন, তালিকা এবং টাকা অপারেটরকে দেওয়ার পরেও চলছে না পছন্দের চ্যানেল। রঘুনাথপুরের ব্যবসায়ী দুর্গাশঙ্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সারাদিন কাজে ব্যস্ত থাকি। অবসরে খেলার চ্যানেলগুলি দেখি। কিন্তু পছন্দের চ্যানেল পাচ্ছি না। অস্বস্তি হচ্ছে।’’ অপারেটরদের পুরুলিয়ার একটি সংগঠনের কর্মকর্তা বাসুদেব বাউড়ি বলেন, ‘‘যে সার্ভারের মাধ্যমে সেট টপ বক্সে গ্রাহকদের পছন্দের চ্যানেল ‘আপলোড’ করতে হচ্ছে, সেই সার্ভারের গতি অত্যন্ত শ্লথ। দিনে পঞ্চাশটির বেশি সেট টপ বক্সে চ্যানেল ‘আপলোড’ করা যাচ্ছে না।’’ তিনি জানাচ্ছেন, সমস্যাটি ট্রাইয়ে (টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি) ইমেল করেও সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
একই পরিস্থিতি বাঁকুড়াতেও। গ্রাহকদের অনেকের অভিযোগ, গত শনিবার থেকে টিভিতে দু’-একটি ফ্রি চ্যানেল ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। স্কুল শিক্ষিকা সোমা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কবে যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে সেটাই বুঝতে পারছি না।’’ এই পরিস্থিতিতে গ্রাহকদের ক্ষোভের মুখে পড়ছেন স্থানীয় কেবল অপারেটরেরা। বাঁকুড়ার কেশিয়াকোলের কেবল ব্যবসায়ী সন্তোষ পাণ্ডে বলেন, ‘‘ধাপে ধাপে গ্রাহকদের সেট টপ বক্স থেকে পে চ্যানেলগুলি বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। সবাই আমাদের অফিসে এসে ক্ষোভ জানাচ্ছেন। অনেকে চ্যানেলের প্যাকেজ নিয়ে টাকা দিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু তার পরেও চ্যানেল পাচ্ছেন না।’’
এ ভাবে আরও কত দিন? কেবল অপারেটরদের একাংশের দাবি, সমস্যা কাটতে প্রায় দু’-তিন মাস লেগে যেতে পারে।
সহ-প্রতিবেদন: রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy