Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

নেমেই কি বাজিমাত, উত্তর আজ

জীবনে প্রথম বার ভোটের ময়দানে নেমেছেন ওঁরা চার জন। সকলেই শাসকদলের প্রার্থী। ভোটে নামার আগে উদ্বেগ ছিলই। সে-সব কাটিয়ে নাগাড়ে প্রচার সেরেছেন তাঁরা। এ বার রেজাল্টের পালা। আজ, বৃহস্পতিবারই সেই দিন। তার আগে কি টেনশন হচ্ছে না? মনের কোণে কোথাও কি এতটুকু ধুকপুকুনি নেই? পুরুলিয়া-বাঁকুড়ার সেই চার নতুন মুখের সঙ্গে কথা বলে জানার চেষ্টায় আনন্দবাজার। হতে পারেন টলিউডের তারকা। তা বলে কী আর টেনশন হয় না! ভোট গণনার এক দিন আগে, বুধবার বিকেলে বড়জোড়ায় পা দিয়েই তৃণমূল প্রার্থী সোহম চক্রবর্তী আগে ছুটেছেন শাইনিং স্টার ক্লাবের কালীমন্দিরে পুজো দিতে। প্রায় আধ ঘণ্টা পুজো দিয়েছেন। তার পরেও যে টেনশন কমেনি, তা এক কথায় মেনে নিচ্ছেন সোহম।

সোহম চক্রবর্তী

সোহম চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৬ ০১:১১
Share: Save:

ফল জানে জনতা

হতে পারেন টলিউডের তারকা। তা বলে কী আর টেনশন হয় না! ভোট গণনার এক দিন আগে, বুধবার বিকেলে বড়জোড়ায় পা দিয়েই তৃণমূল প্রার্থী সোহম চক্রবর্তী আগে ছুটেছেন শাইনিং স্টার ক্লাবের কালীমন্দিরে পুজো দিতে। প্রায় আধ ঘণ্টা পুজো দিয়েছেন। তার পরেও যে টেনশন কমেনি, তা এক কথায় মেনে নিচ্ছেন সোহম। নার্ভাসনেস লুকোতে কোনও ছল-চাতুরির পর্দাও নিচ্ছেন না। সাফ বলছেন, “জীবনে অনেক পরীক্ষা দিয়েছি। কিন্তু কোন প্রশ্নের কী উত্তর দিয়েছি, কতটা লিখেছি এই সবই আমি জানতাম। তাই টেনশনের বালাই ছিল না। ভোট পরীক্ষায় প্রশ্নের উত্তর দেবে জনতা। কাজেই আমি জানি না, কে কী উত্তর দিয়েছেন!’’ পরীক্ষায় পাশ করতে ভগবানের দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া উপায় নেই, তা-ও জানিয়ে দিচ্ছেন। ভোট শেষে কলকাতায় ফিরেই কালীঘাট, দক্ষিণেশ্বরে গিয়ে পুজো দিয়ে এসেছেন। পকেটে সব সময় মা কালীর ছবি। সময়ে–অসময়ে বুক ধড়ফড়ানি হলেই সেই ছবি বের করে কপালে ঠেকিয়েছেন। সোহমের কথায়, “বড়জোড়ায় এসেই যে মন্দিরে পুজো দিয়ে প্রচার শুরু করেছিলাম, কাউন্টিংয়ের আগে এসে সেখানেই প্রথমে মাথা ঠুকেছি।’’ রাতে ঘুম হবে? “নাহ। প্রশ্নই নেই”—বলে দিলেন সটান। একাকিত্ব কাটাতে এই রাতটা অন্তত দলীয় কর্মীদের সঙ্গ তিনি ছাড়বেন না। আজ সকাল সকাল বাঁকুড়ায় গণনাকেন্দ্রে এসে পড়বেন। তার পর কী হবে? আর ভাবতে চাইছেন না তারকা।

পুরুলিয়া রওনা দেওয়ার আগে ঠাকুর-প্রণাম রাজীবের।

খুব মনে পড়ছে বাবাকে

১৯৮৪ সালের ২০ মে। মায়ের আঁচল ধরে বাবার মৃতদেহের সামনে এসে দাঁড়িয়েছিল একরত্তি ছেলেটি। সে দিনের শিশুটি এ বারের বিধানসভা নির্বাচনে বান্দোয়ান কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী রাজীব সোরেন। তাঁর বাবা, সে সময়ের কংগ্রেস নেতা জাগরণ সোরেন খুন হয়েছিলেন। ভোটের ফল বেরোনোর ২৪ ঘণ্টা আগে নিহত বাবার স্মৃতিই বারবার মনে ভিড় করছে তরুণ রাজীবের। আজ পুরুলিয়ায় ভোট গণনা। কোনও রকম ঝুঁকি না নিয়ে আগের দিনই কাউন্টিং এজেন্ট ও দলীয় কর্মীদের নিয়ে পুরুলিয়ার একটি ধর্মশালায় উঠেছেন রাজীব। মঙ্গলবার রাতে তেমন ভাল ঘুম হয়নি। বুধবার তাই ঘুম থেকে উঠতে রাজীবের পৌনে ছ’টা বেজে গিয়েছিল। না হলে অন্য দিন পাঁচটার আগেই বিছানা ছাড়েন। দেরিতে ওঠার জন্য মর্নিংওয়াকটাও বাদ দিয়েছেন এ দিন। দুপুরে ভাত আলু বেগুনের তরকারি উচ্ছে ভাজা আর মুসুরের ডাল দিয়ে খাওয়া সেরে শিবের ছবিতে ধূপ দিয়ে গাড়িতে উঠে পুরুলিয়ার পথে। গাড়ি ছাড়ার মুহূর্তে কপালে হাত ঠেকালেন কাকে স্মরণ করলেন? একটু অন্যমনস্ক গলায় রাজীব বললেন, ‘‘রাজনীতি করার অপরাধে বাবাকে খুন হতে হয়েছিল। বান্দোয়ানে সেই সিপিএম এখনও ক্ষমতায় রয়েছে। আজকের দিনে বাবাকে খুব মনে পড়ছে। ফল ঘোষণার আগে একটু চিন্তা তো থাকবেই।’’

দিব্যজ্যোতি সিংহদেও

উদ্বেগ গা সওয়া

রাজনীতির ময়দান গত আড়াই মাসে এখন বেশ খানিকটা চেনা পুরুলিয়ার তৃণমূল প্রার্থী দিব্যজ্যোতি প্রসাদ সিংহদেও-এর। বাবা কে পি সিংহদেওয়ের আসনে এ বার তিনি লড়ছেন। বাবার শারীরিক অসুস্থতার কারণে চিকিৎসার কাজকর্ম দেখভাল করতে ব্যাঙ্কের চাকরিতে ইস্তফা দিয়েছিলেন ভোটের আগেই। দশটা-ছটার অফিস, কর্পোরেট হাউসের পেশাগত চাপ গত ক’মাসে বদলে গিয়েছে রাজনৈতিক চাপে। কেননা পুরুলিয়া কেন্দ্রে তাঁর লড়াই একদা তৃণমূলেরই ঘরের ছেলে জোট প্রার্থী (কংগ্রেস) সুদীপ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। বুধবার সকালে দিব্যজ্যোতিকে পাওয়া গেল পুরুলিয়া শহরের তাঁর রাঁচি রোডের বাড়ির বৈঠকখানায়, দলীয় কর্মীর সঙ্গে কথা বলছিলেন তিনি। পুরুলিয়া কেন্দ্রে লড়াইটা যে কঠিন, তা আড়ালে মানছেন তৃণমূলের একাংশও। ফল প্রকাশের ঠিক আগে কি টেনশন হচ্ছে না? দিব্যজ্যোতি বলছেন, ‘‘টেনশন সে রকম নেই জানেন। যা হওয়ার তো ইভিএমে বন্দি। শুধু জানার অপেক্ষা। আমি যেখানে ছিলাম সেখানে ষ্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট বলে একটা বিষয় রয়েছে। ওই কাজেও প্রতিনিয়ত টেনশন। তাই টেনশন জিনিসটা অনেকটাই আমার গা সওয়া।’’ লড়াই হবে মেলেও জেতার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী এই যুবক। জানালেন, বৃহস্পতিবার খুব সকালে উঠেই স্নান সেরে গননাকেন্দ্রের উদ্দেশে বেরোবেন।

জ্যোৎস্না মান্ডি।

বিলকুল টেনশন ফ্রি

বিপক্ষে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দু’বারের বিধায়ক। জাঁদরেল সিপিএম নেত্রী দেবলীনা হেমব্রম। তবু ভোটের ফলাফল নিয়ে উদ্বেগে নেই বাঁকুড়ার রানিবাঁধ কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী জ্যোতস্না মান্ডি। গত ৪ এপ্রিল ভোট শেষ হওয়ার পরেই কলকাতায় বাবার কাছে চলে গিয়েছিলেন তিনি। বুধবার দুপুরে খাতড়ায় ফিরেছেন। দুপুরে স্নান খাওয়া সেরে বিশ্রাম নিয়েছেন। এ দিন বললেন, “প্রথম দফায় ভোট হয়ে যাওয়ার পর আমরা সিদ্ধান্ত নিই, কলকাতায় বাবার কাছে গিয়ে মাসখানেক সেখানেই থাকব। এতদিন সেখানেই ছিলাম।’’ প্রথম বার ভোটে দাঁড়িয়েছেন। টেনশন হচ্ছে না? তরুণীর প্রত্যয়ী জবাব, ‘‘নো টেনশন। রেজাল্ট বেরোতে প্রায় দেড় মাস দেরি দেখে বাইরে গিয়েছিলাম। মানুষ যেভাবে ভোট দিয়েছেন তাতে আমিই জিতব এটা এক প্রকার নিশ্চিত। তাই রেজাল্ট নিয়ে আমার কোনও চিন্তা নেই। আমি একেবারে টেনশন ফ্রি আছি।’’

(তথ্য সহায়তা: প্রশান্ত পাল, সমীর দত্ত, দেবব্রত দাস, রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 vote TMC candidates
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE