কেবল পড়ুয়ার পড়াশোনার দায়িত্ব নয়। এ বার তাদের কর্মসংস্থানের সুলুকসন্ধানেও সাহায্য করবেন শিক্ষকরাই।
‘আমি খুব বাস্তববাদী। দলগত ভাবে কাজ করতে পছন্দ করি। দিনে আট ঘণ্টা কাজ করতে আমার কোনও অসুবিধে নেই। বিজ্ঞান খুব পছন্দের বিষয়। আমি সৃজনশীল মানুষ।’— এগুলো ব্যক্তি বিশেষের বিবৃতি নয়। বাছাই করা ৬০ জন জন পড়ুয়ার মন্তব্য সামনে রেখে শিক্ষকেরা বুঝতে চাইবেন পড়ুয়াটি কেমন। সে বাস্তববাদী, অনুসন্ধানী, সৃজনশীল, উদ্যমী— না কি গড়পড়তা।
প্রস্তুতি হিসেবে বীরভূমের ৩৬৭টি স্কুলের ৯১৭ জন শিক্ষককে ‘ইনক্লুসিভ এডুকেশন অ্যান্ড কেরিয়ার কাউন্সেলিং’ এর প্রশিক্ষণ সম্প্রতি শেষ হয়েছে। সিউড়ির ‘ডিস্ট্রিক্ট ইনস্টিটিউট অফ এডুকেশন অ্যান্ড ট্রেনিং’ বা ডায়েট-এ এপ্রিলের ১০ তারিখ থেকে ৬ দফায় পাঁচ দিন করে প্রশিক্ষণ শেষ স্কুলে স্কুলে ‘কেরিয়ার হাব’ খুলে পড়ুয়াদের পেশার সন্ধান দেবেন শিক্ষকরা। ইতিমধ্যেই জেলার অন্তত ৬টি স্কুলে খোলা হয়েছে কেরিয়ার হাব। বাকি ৩৬০টি স্কুলেও তৈরি হবে হাব।
ডায়েট-এর অধ্যক্ষ মধুসূদন কয়াল বলছেন, ‘‘এক জন পড়ুয়া কোন ধরনের পেশার পক্ষে মানানসই, সেটা জানতে ৬০টি প্রশ্ন-বিবৃতি সম্বলিত পত্রের সাহায্য নেবেন প্রশিক্ষিত শিক্ষক-শিক্ষিকারা।’’ ‘তোমার সঙ্গে কোন বিবৃতি মিলছে সেখানে টিক চিহ্ন দাও’— এই পদ্ধতিতে বাছাই করা হবে পড়ুয়ার ঝোঁক। সেই পেশায় আসতে হলে কী কী বৈশিষ্ট এবং দক্ষতা থাকা প্রযোজন, শিক্ষাগত মান অর্জন করতে কোথায় পড়তে হবে, পড়া শেষে, কোন ধরনের ক্ষেত্রে চাকরি পেতে পারে, বেতনইবা কত, এমন ৪০টি পেশা সংক্রান্ত খুঁটিনাটি হদিশ মিলবে স্কুলের হাব থেকেই।
রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযান কর্মসূচির আওতায় শিক্ষকদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থাপনায় ছিল এসসিইআরটি বা ‘স্টেট কাউন্সিল অফ এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং’। স্কুল শিক্ষা দফতরের মত, শিক্ষকদের সঠিক প্রশিক্ষণে পড়ুয়াদের উৎকর্ষতা বৃদ্ধি পাবে। স্কুলে উপস্থিতিও বাড়বে। এসসিইআরটি-র ডিরেক্টর ছন্দা রায় বলছেন, ‘‘ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং-বাইরে যে নানা পেশা রয়েছে সে কথা অনেক পড়ুয়া জানতেই পারে না। অধিকাংশ অভিভাবকদের কাছেও বিষয়টি ধোঁয়াশার। গ্রামঞ্চলে এই সমস্যা আরও প্রকট।’’ সে কারণেই এমন ভাবনা, জানাচ্ছেন তিনি।
সে জন্য জরুরি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণও। নলহাটি ২ ব্লকের একটি স্কুলের শিক্ষক বিশ্বনাথ ভল্লা বলছেন, ‘‘ভাল ভাবনা। এমন দিক জানা থাকলে আমি শিক্ষকতার পেশায় আসতাম না।’’ আমোদপুর জয়দুর্গা বিদ্যালয়ের কাকলি চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘সময় উপযোগী পদক্ষেপ। আশা করছি, পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়াতে পারব।’’ নানুরের একটি স্কুলের রুদ্র কিংশুক বা দুবরাজপুরের বালিজুড়ি গ্রামের সোমা চট্টোপাধ্যায়রা বলছেন, ‘‘গ্রামের স্কুলেও অনেক সম্ভাবনাময় ছাত্রছাত্রী থাকে। কিন্তু তাদের পথ দেখানোর কেউ থাকে না। তাদের পাশে থেকে সুপরামর্শ দিতে পারব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy