Advertisement
১৫ মে ২০২৪
রক্তে দুর্নীতি

সিসিটিভিতে ছবি, দালাল তবু অধরা

ব্লাডব্যাঙ্কের রক্ত বেচাকেনা নিয়ে দালালদের হাত কতটা লম্বা তা আগেই জানা গিয়েছে। এ বার সেই দালাল চক্রের বূহ্য ভেদ করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বাঁকুড়া মেডিক্যালের কর্তাদের সামনে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:২৪
Share: Save:

ব্লাডব্যাঙ্কের রক্ত বেচাকেনা নিয়ে দালালদের হাত কতটা লম্বা তা আগেই জানা গিয়েছে। এ বার সেই দালাল চক্রের বূহ্য ভেদ করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বাঁকুড়া মেডিক্যালের কর্তাদের সামনে।

পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের রোগীর নামে দেওয়া রক্তের প্যাকেট দালাল মারফৎ সম্প্রতি উঠে আসে বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি এক রোগীর আত্মীয়ের হাতে। যা দেখে তাজ্জব বনে যান বাঁকুড়া মেডিক্যালের কর্তারা। এখানেই শেষ নয়। একই ভাবে বাঁকুড়া মেডিক্যালের অন্য এক রোগীর নামে বাঁকুড়া ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে দেওয়া আরও একটি রক্তের প্যাকেটও ওই রোগীর আত্মীয় কিনেছিলেন।

তদন্তে নেমে এই কাণ্ডে বহিরাগতদের সঙ্গে বাঁকুড়া মেডিক্যালের অন্দরের কিছু লোকজনেরও যোগসাজশ রয়েছে বলেই সন্দেহ করছেন হাসপাতাল কর্তারা। সোমবার সন্ধ্যায় এই ঘটনা মেডিক্যালের কর্তাদের নজরে এলেও বুধবার রাত পর্যন্ত ওই দালাল চক্রের কাউকেই চিহ্নিত করতে পারেননি বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। পুরুলিয়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থানায় রক্ত চুরির অভিযোগ দায়ের করলেও এ দিন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি বলে জানিয়েছে পুরুলিয়া থানার পুলিশ।

বুক ও কিডনির সমস্যা নিয়ে বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি হওয়া বান্দোয়ানের বাসিন্দা ফুলচাঁদ সোরেনের জন্য দু’ইউনিট রক্তের ‘রিক্যুইজেশন’ নিয়ে ব্লাডব্যাঙ্কে যাচ্ছিলেন তাঁর ছেলে গয়ারাম। পথেই দালালের পাল্লায় পড়েন তাঁর ছেলে গয়ারাম। ব্লাডব্যাঙ্কে রক্ত নেই জানিয়ে দরাদরি করে ২০০০ টাকার বিনিময়ে তাঁকে ওই দু’ইউনিট রক্ত বিক্রি করেন সেই দালাল। গয়ারামবাবুর বাবার জন্য ‘ও পজিটিভ’ গ্রুপের রক্ত দরকার ছিল। কিন্তু ওই দালাল তাঁকে ‘এবি প্লাস’ গ্রুপের দু’প্যাকেট রক্ত দেয়। তা দেখেই নার্সদের সন্দেহ হয় ওই রক্ত ব্লাডব্যাঙ্ক থেকে আনা হয়নি।

এরপরেই বিভাগীয় তদন্তে নামে বাঁকুড়া মেডিক্যাল। মঙ্গলবার ব্লাডব্যাঙ্কের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে গয়ারামবাবু যে দালালের পাল্লায় পড়েছিলেন, তার ছবি পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছেন মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। তবে ওই দালালকে শনাক্ত করতে পারেনি হাসপাতালের কর্মীরা।

থানায় অভিযোগ করা নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গড়িমসির অভিযোগও উঠেছে। দালাল চক্রের লোকজন সরকারি হাসপাতালের ভিতরে রক্ত নিয়ে বিপজ্জনক ব্যবসা করছে, আশঙ্কা করা হচ্ছে এই চক্রে হাসপাতালের কিছু কর্মীও যুক্ত থাকতে পারেন, তাহলে কেন পুলিশে অভিযোগ করা হচ্ছে না? এ নিয়ে মঙ্গলবারই প্রশ্ন তুলেছিলেন স্বাস্থ্যকর্মী থেকে ডাক্তার, নার্সদের অনেকেই।

রোগীর পরিজনদের আশঙ্কা, ওই রক্ত কোনও ভাবে নজর এড়িয়ে রোগীর দেহে চলে গেলে সর্বনাশ হতো। এই কারবার কঠোর হাতে দমন করতে মেডিক্যালের আরও সক্রিয় হওয়া দরকার।

বাঁকুড়া মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম প্রধান নিজেই অনেকখানি উদ্যোগী হয়ে তদন্ত করছেন। কিন্তু এই চক্রে যুক্ত হাসপাতালের বাইরের লোকজনদের নাগাল তাঁরা পাবেন কী ভাবে? প্রশ্নটা রোগীর পরিজনদের। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তাঁরা কেন অভিযোগ করছেন না? পার্থপ্রতীমবাবুর দাবি, ‘‘প্রতারিত রোগীর পক্ষ থেকে আমরা লিখিত অভিযোগ না পাওয়া পর্যন্ত থানায় অভিযোগ করার ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা ছিল।’’

তবে এ দিন দুপুরে রোগীর পক্ষ থেকে পুরো ঘটনাটি লিখিত ভাবে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার রামকৃষ্ণ মণ্ডলকে জানানো হয়েছে। রামকৃষ্ণবাবু দাবি করেন, ‘‘রোগীর বাড়ির কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েই আমি থানায় তা পাঠিয়ে দিয়েছি।’’

যদিও সন্ধ্যায় বাঁকুড়া সদর থানা থেকে জানানো হয়েছে, ওই অভিযোগ তাঁদের কাছে আসেনি। কেন পৌঁছয়নি এ বিষয়ে অবশ্য মেডিক্যালের তরফে কোনও সদুত্তর মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Medical college Blood bank
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE