Advertisement
E-Paper

নোটের গেরোয় কুপোকাত সার্কাসও

নোটের চোট এ বার সার্কাসেও! সার্কাসের খেলা আর রাসের মেলা— এ দুটি অনেক দিনই সমার্থক হয়ে গিয়েছে পুরুলিয়ার জনজীবনের সঙ্গে। কিন্তু, কোনওবার যেটা হয়নি, সেটা হয়েছে এ বার। প্রথম দিনের প্রথম শো থেকেই ফাঁকা যাচ্ছে সার্কাসের প্রতিটি শো।

প্রশান্ত পাল

শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৬ ০০:২২
দর্শকই নেই সার্কাসে। পুরুলিয়া চার্চের মাঠে। ছবি: সুজিত মাহাতো।

দর্শকই নেই সার্কাসে। পুরুলিয়া চার্চের মাঠে। ছবি: সুজিত মাহাতো।

নোটের চোট এ বার সার্কাসেও!

সার্কাসের খেলা আর রাসের মেলা— এ দুটি অনেক দিনই সমার্থক হয়ে গিয়েছে পুরুলিয়ার জনজীবনের সঙ্গে। কিন্তু, কোনওবার যেটা হয়নি, সেটা হয়েছে এ বার। প্রথম দিনের প্রথম শো থেকেই ফাঁকা যাচ্ছে সার্কাসের প্রতিটি শো।

রাসের মরসুমে পুরুলিয়া শহরের মাঠে এই সার্কাস দলের তাঁবু ফেলার কথা পাকা হয়ে যায় অনেক আগেই। সেই মতো প্রচারও শুরু হয়ে যায়। জোকারের ও ট্রাপিজের খেলার রঙিন হোর্ডিং লাগানো সার্কাস কর্তৃপক্ষের প্রচারের গাড়ি ছোটে শহর ঘিরে থাকা গ্রামগঞ্জে। ধান কাটার ব্যস্ততার ফাঁকে একটু বিনোদনের জন্যে সার্কাস দেখার নস্টালজিয়াই তো আলাদা!

নোটের চোটে এ বার বাদ সেজেছে সেই আনন্দ। সার্কাস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, আমজনতা এই সময় শো দেখেন বলেই প্রতি বছর এ সময় তাঁবু ফেলেন তাঁরা। কিন্তু, এ বারের মতো বাজার খারাপ অতীতে কখনই হয়নি। একটি সার্কাস দলের ম্যানেজারের কথায়, ‘‘পুরুলিয়ায় গতবারে চাষ খুব একটা ভাল হয়নি। তখনও এত খারাপ অবস্থা হয়নি।’’

এ বার কেমন অবস্থা?

সার্কাসের তাঁবুতে গিয়ে দেখা গেল, স্টেজের সামনে শ’পাঁচেক চেয়ার পাতা। তা ছাড়াও কাঠের অস্থায়ী গ্যালারিতে রয়েছে আরও পাঁচ-সাতশো দর্শকের বসার ব্যবস্থা। আর দর্শক? একেবারেই হাতে গোনা! দিনে মোট তিনটি শো হয়। কোনও শো’য়েই পঞ্চাশ, ষাটের বেশি লোক হচ্ছে না! সারি সারি চেয়ার ফাঁকাই পড়ে থাকছে প্রতিটি শোয়ে। তার মধ্যেই চলছে খেলা। ট্রাপিজের খেলা দেখানো এক খেলোয়াড়ের কথায়, ‘‘ফাঁকা তাঁবুতে খেলা দেখাতে কার ভাল লাগে! দর্শক ঠাসা তাঁবুতে খেলা দেখানোর একটা অন্য রকম তাগিদ থাকে। উৎসাহ পাওয়া যায়। ফাঁকা তাঁবুতে হয় না। তবে আমরা পেশাদার বলে খেলা দেখিয়ে যেতে হয়।’’

সার্কাস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, দলে কলাকুশলী-সহ প্রায় দেড়শো জন সদস্য রয়েছেন। এ ছাড়াও রয়েছে তিনটে হাতি, চারটে ঘোড়া, দশ-বারোটি কুকুর, ম্যাকাও-সহ নানা প্রাণী। এঁদের খরচ জোগাতে হিমসিম খাচ্ছেন ম্যানেজার। তাঁবুর এক কোণে চুপচাপ বসেছিলেন ম্যানেজার জয়রাজ। তাঁর কথায়, ‘‘সার্কাস চালাতে প্রতিদিন চল্লিশ হাজার টাকা খরচ। নামমাত্র টিকিট বিক্রি হওয়ায় প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে।’’ এমনটা চললে পাততাড়ি গোটানো ছাড়া উপায় থাকবেন না জানাচ্ছেন তিনি।

সার্কাসের লোক না হওয়ায় বিক্রিবাটা শিকেয় পপকর্ন বিক্রেতা দীনেশ শাহর। তাঁর বললেন, ‘‘একেবারেই বিক্রি নেই। হবেই বা কোথা থেকে? দর্শকই তো নেই!’’ প্রতিবার সার্কাস দেখেন পুরুলিয়া শহরের বাসিন্দা বাপন দত্ত। তিনিও জানালেন এত কম লোক আগে কোনওবার দেখেননি। এলাকার কাউন্সিলর বিভাস দাস আবার ফিরে গেলেন স্মৃতিতে। বললেন, ‘‘সেই ছেলেবেলায় হাতের করে দিন গুনতাম, কবে রাসের মেলা আসবে। কবে পড়বে সার্কাসের তাঁবু। অন্য উন্মাদনা ছি ল। প্রথম দিন থেকেই উপচে পড়ত ভিড়। এ বার নোটের চক্করে সব গোলমাল হয়ে গেল।’’

Currency Crisis Circus Running Empty
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy